প্রবল তাপপ্রবাহের মাঝেই একটু স্বস্তির খোঁজ। — ফাইল চিত্র।
প্রতি বছর গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে সমস্যার মধ্যে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। প্রবল উত্তাপের কারণে যেমন পথচলতি মানুষ ‘সান স্ট্রোক’-এ আক্রান্ত হচ্ছেন, তেমনই কোনও কোনও ক্ষেত্রে অত্যধিক গরমের কারণে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে। তাই এ বার কেন্দ্রীয় সরকারের পরামর্শে ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর’ (এসওপি) তৈরি করল রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর। এই এসওপি-র ভিত্তিতে জনসাধারণকে গরমের হাত থেকে রক্ষা করতে কাজ করবে রাজ্য সরকারের ৬টি দফতর, পুরসভা, পঞ্চায়েত এবং জেলা প্রশাসনগুলি। গত কয়েক বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে উত্তাপ বেড়ে যাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তা বেড়েছে রাজ্য তথা কেন্দ্রীয় সরকারের। তাই এ বছর জুন মাসে দিল্লিতে তাপপ্রবাহ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের একটি বৈঠকে বসেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। সেই বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল সব ক’টি রাজ্য সরকারকেও। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের পদস্থ কর্তারা। প্রশাসন সূত্রে খবর, তপপ্রবাহের পরিস্থিতি সামাল দিতে রাজ্যগুলিকে এসওপি গঠনের পরামর্শ দেয় কেন্দ্র। সেই পরামর্শ মেনে অন্যান্য রাজ্যের মতোই এ রাজ্যেও এসওপি গঠন করা হয়েছে। এই এসওপির ছাতার তলায় একযোগে কাজ করবে স্বাস্থ্য, জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি, বিপর্যয় মোকাবিলা, পুর ও নগরোন্নয়ন, বন ও তথ্য সংস্কৃতি দফতর।
রাজ্য সরকারের উদ্যোগে তৈরি এসওপি অনুযায়ী, জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরকে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় ছোট ছোট শেড ও আশ্রয়স্থল তৈরি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই এলাকাগুলিতে পানীয় জলের সরবরাহ বৃদ্ধির ব্যবস্থা করতেও বলা হয়েছে। সঙ্গে শহর এবং গ্রামীণ এলাকাতে তৈরি হবে ছাউনি দেওয়া বাস স্ট্যান্ড নির্মাণ করে সেখানে যাত্রীর বসার ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। এই এসওপি-র অংশ হিসেবে স্বাস্থ্য দফতর এই কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির সময়ে তারা এলাকায় এলাকায় তৈরি রাখবে ‘র্যাপিড রেসপন্স টিম’। সঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমাণে ওআরএস সরবরাহের ব্যবস্থা রাখা হবে। যে সব এলাকায় ভিড় জমে, এমন জায়গাগুলিতে তৎপর থাকতে হবে স্বাস্থ্য শিবিরের। বনাঞ্চল বৃদ্ধির ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে বন দফতরকে। তাপপ্রবাহ ঠেকাতে বনজঙ্গল রক্ষা জরুরি। তাই বনাঞ্চল বৃদ্ধির পরামর্শ দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে। সেই পরামর্শমাফিক কাজ করবে বন দফতর।
সঙ্গে আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, জেলাস্তরে দ্রুত পৌঁছে পরিস্থিতির প্রয়োজনীয়তা বুঝে পরিকাঠামো তৈরি করবে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর। পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের সাহায্যে প্রতিটি পুরসভা এলাকায় নির্দিষ্ট পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। সঙ্গে তাপপ্রবাহের মোকাবিলা করার দফতরওয়ারি ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। বিভিন্ন মাধ্যমে তাপপ্রবাহ সংক্রান্ত সচেতনতা শিবিরের আয়োজন করবে তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর। এক সরকারি আধিকারিকের বক্তব্য, এই এসওপি দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে তৈরি করা হচ্ছে। প্রতিটি দফতরকে নিজে নিজে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হবে। তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি বুঝে তারা নিজেদের মতো করে আমজনতাকে সুরাহা দেওয়ার বন্দোবস্ত করবে। ইতিমধ্যে এসওপি-র প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে। প্রসঙ্গত, তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির বেশি হলে এবং তা স্বাভাবিকের থেকে সাড়ে ৪ ডিগ্রি বেশি থাকলে তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি তৈরি হয়। আর প্রতি বছরই পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের উত্তাপ ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যাচ্ছে। তাই আগামী বছর থেকে তেমন পরিস্থিতি তৈরি হলে যাতে রাজ্য সরকারগুলি দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারে, সেই কারণে নতুন এই এ সব পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেই মত নবান্নের আধিকারিকদের একাংশের।