বাগঘোরায় পরিদর্শন। নিজস্ব চিত্র
এক বছর চার মাসের মাথায় বাঘ ‘খুনে’র ঘটনায় রাজ্যের বন দফতরের ভূমিকা খতিয়ে দেখতে শুরু করল কেন্দ্র। ওই ঘটনার তদন্তে শুক্রবার মেদিনীপুর গ্রামীণের চাঁদড়ায় আসেন ‘ন্যাশনাল টাইগার কনজারভেশন অথরিটি’-র (এনটিসিএ) পূর্বাঞ্চলের আইজি ডব্লিউ লাংভা। চাঁদড়ার বাগঘোরার জঙ্গলে ঘটনাস্থল ঘুরে দেখার ফাঁকে লাংভা স্পষ্টই বলেন, ‘‘এই ঘটনায় বন দফতরের কী ভূমিকা সেটা দেখতেই আমার এখানে আসা। বন দফতরের তরফে বাঘটি বাঁচানোর চেষ্টা করা হয়েছে কি না, হলে কতটা চেষ্টা করা হয়েছে, তদন্তে আমি সেই সব দিকই খতিয়ে দেখছি।’’ এনটিসিএ-র কাছে কেন্দ্রের বনমন্ত্রক দ্রুত রিপোর্ট চেয়েছে বলেও জানান তিনি। লাংভার কথায়, ‘‘কেন্দ্র দ্রুত রিপোর্ট চাইছে। যতটা তাড়াতাড়ি সম্ভব রিপোর্ট দেবো।’’
২০১৮ সালের ১৩ এপ্রিল আদিবাসীদের ‘শিকার উৎসব’ ছিল বাগঘোরার জঙ্গলে। সে দিনই একদল শিকারির ছোড়া বল্লমে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছিল পথ ভুলে লালগড়, মেদিনীপুরের জঙ্গলে চলে আসা ডোরাকাটা। সেই সময়ই বাঘ ‘খুনের’ ঘটনায় রাজ্যের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উদ্দেশ্য করে কেন্দ্রের মন্ত্রী মানেকা গাঁধী বলেছিলেন, ‘‘দু’মিনিটে শিকার উৎসব বন্ধ করতে পারতেন মুখ্যমন্ত্রী। ভোটের কথা ভেবে তা করা হয়নি।’’ ওই বছরই মে মাসে রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট ছিল।
পরে বাঘ খুনের তদন্ত করেছে বন দফতর। রাজ্য বন দফতরের বিভাগীয় তদন্তও নানা প্রশ্ন উস্কে দেয়। স্থানীয় বন সুরক্ষা কমিটির ভূমিকায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করা হয় ওই তদন্ত রিপোর্টে। জেলা প্রশাসন এবং বন দফতরের মধ্যে বোঝাপড়ার অভাব ছিল বলেও কার্যত মেনে নেওয়া হয়। রিপোর্টে না কি এ-ও স্বীকার করা হয় যে, বেশ কিছু ক্ষেত্রে গাফিলতি ছিল। ওই সময়ে জঙ্গলে শিকার উৎসব বন্ধ করতে পারলে বাঘটিকে বাঁচানো সম্ভব হত। রিপোর্টে জানানো হয়, বিষক্রিয়া বা সংক্রমণ থেকে বাঘের মৃত্যু হয়নি। বাঘ মারা গিয়েছে বল্লমে এবং ভারী কিছুর আঘাতেই। সূত্রের খবর, সেই সময় বন দফতর স্থানীয় বাবলু হাঁসদা এবং বাদল হাঁসদার বিরুদ্ধে বাঘ মারার ঘটনায় এফআইআর করতে চেয়েছিল। কিন্তু জেলা পুলিশ অজ্ঞাতপরিচয় লোকেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে। তদন্তও শুরু হয়। অবশ্য এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।
এই পরিস্থিতিতে এনটিসিএ-র কর্তার তদন্তে আসা তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবারই মেদিনীপুরে পৌঁছন এনটিসিএ-র আইজি রাজ্য এবং জেলার বনকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন। শুক্রবার সকালে তাঁর সঙ্গে বাগঘোরার জঙ্গলে যান রাজ্যের মুখ্য বনপাল (পশ্চিমাঞ্চল) শক্তিশঙ্কর দে। তবে মিনিট পনেরোর বেশি জঙ্গলে ছিলেন না লাংভা। ঘটনাচক্রে, বাগঘোরার জঙ্গলে এ দিন হাজির হয়েছিল হাতির দল। ফলে, ঘটনাস্থলে বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি লাংভা।
একে এত দিন পরে ঘটনাস্থলে তদন্ত, তায় এত কম সময়। এতে প্রকৃত সত্য জানা সম্ভব হবে তো?
লাংভা নিজেই স্পষ্ট করেছেন, ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ বা প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলা তাঁর কাজ নয়। তিনি এসেছেন ঘটনার সময় বন দফতর কী ভূমিকা পালন করেছিল, সেই খুঁটিনাটি খতিয়ে দেখতে। তবে কি রাজ্যের তদন্তে এনটিসিএ সন্তুষ্ট নয়? ঘটনাস্থল ঘুরে দেখার ফাঁকে লাংভার জবাব, ‘‘সন্তুষ্ট, না সন্তুষ্ট নয়, সেটা বলার সময় এখনও আসেনি। এটা আমাদের তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়। বন দফতরের কাছ থেকে কিছু কাগজপত্র পেয়েছি। কাগজপত্রগুলি এ বার খতিয়ে দেখব।’’ তিনি জানান, এটা এনটিসিএ-র দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে যে, কেন বাঘটি মারা গেল তা খতিয়ে দেখা। সূত্রের খবর, রাজ্যের মুখ্য বনপালের (বণ্যপ্রাণ) সঙ্গেও দেখা করবেন এনটিসিএ- এর এই আইজি।