আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে অবস্থানে হাওড়ার তারাসুন্দরী বালিকা বিদ্যাভবনের প্রধান শিক্ষিকা (ডান দিকে প্ল্যাকার্ড নিয়ে)-সহ বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকারা। সোমবার কলেজ স্কোয়ারে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
একুশের বিধানসভা নির্বাচনের সময় স্কুলে মহিলা সিআরপি বাহিনী ছিল দীর্ঘদিন। তাঁরা যাওয়ার পরে বেহাল স্কুল দেখে ক্ষুব্ধ হন প্রধান শিক্ষিকা। বাহিনীর ব্যবহার করা ন্যাপকিনের দূষণে বেশি চিন্তিত ছিলেন। মোনালিসা মাইতি তখন নন্দীগ্রামের ব্রজমোহন তিওয়ারি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা। সুরাহা চেয়ে চিঠি দেন শিক্ষা দফতরে।
সেই মোনালিসা এখন হাওড়ার তারাসুন্দরী বালিকা বিদ্যাভবনের বড়দি। আর জি করের ঘটনায় ছাত্রীদের নিয়ে প্রতিবাদ আর জোরালো বক্তব্যে উজ্জ্বল একটি নাম।
মোনালিসার শিকড় পূর্ব মেদিনীপুরে। তাঁর নানা সামাজিক কাজ মনে রেখেছে হলদিয়া, নন্দীগ্রাম। বাচিক শিল্পী অজিত মাজি মোনালিসার আবৃত্তি শিক্ষক। ছাত্র-যুব উৎসবে রাজ্য চ্যাম্পিয়নও হন মোনালিসা। অজিত বলেন, ‘‘প্রথম থেকে স্বাধীনচেতা, প্রতিবাদী মোনালিসা।’’ এক বার ‘মক পার্লামেন্টে’ বিরোধী পক্ষের বক্তা মোনালিসাকে দেখে বিস্মিত হয়েছিলেন তৎকালীন বাম সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠও।”
হলদিয়া সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলে মোনালিসার সহপাঠী ছিলেন অন্তরা সরকার ও সুমন সাহা। অন্তরাও বলছেন, ‘‘মোনালিসার মধ্যে বরাবরই প্রতিবাদী মানসিকতা ছিল।’’ সুমন জুড়লেন, ‘‘ও স্রোতের বাইরে বেরিয়ে এসে যে ভাবে প্রতিবাদ করেছে, সত্যিই বন্ধু হিসেবে গর্ব হচ্ছে।’’
নন্দীগ্রামের স্কুলে প্রধান শিক্ষিকা থাকাকালীন ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের সময় বিভিন্ন জায়গায় ত্রাণ পৌঁছতে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলেন মোনালিসা। নিজের স্কুলে ৮ দিনের চিকিৎসা শিবির করিয়েছিলেন। ইয়াসের পরে নিজের স্কুলে করেছিলেন কমিউনিটি কিচেন। রোজ ৩০০ লোকের রান্না হত। পূর্ব মেদিনীপুরের স্কুল শিক্ষক দেবাশিস ধর বলেন, ‘‘নন্দীগ্রামে শিক্ষিকা হিসেবে মেরুদণ্ড সোজা রেখে কাজ করেন মোনালিসা।’’ তাঁর একদা ছাত্রী, এখন নন্দীগ্রাম সামসাবাদ ধান্যখোলা হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা দিপালী ক্ষেত্রপাল বলেন, ‘‘মোনালিসাদির ছাত্রী হিসেবে আমি লজ্জিত। যে প্রতিবাদ উনি মাথা উঁচু করে করতে পেরেছেন, আমি পারিনি।’’
সহ-প্রতিবেদক: সৌমেন মণ্ডল
(এই প্রতিবেদন প্রথম বার প্রকাশিত হওয়ার সময়ে ছবির ক্যাপশনে কিছু মুদ্রণপ্রমাদ ছিল। এই অনিচ্ছাকৃত ত্রুটির জন্য আমরা দুঃখিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী)