মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
রাজ্যের চারটি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন ছিল বুধবার। তার ৭২ ঘণ্টা আগে থেকে ‘পুরনো’ ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এনে তৃণমূলের ভোটারদের উপর ‘নেতিবাচক’ প্রভাব তৈরি করার চেষ্টা হয়েছিল বলে মন্তব্য করলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার দুপুরে মুম্বই রওনা হওয়ার আগে বিমানবন্দরে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মমতা। এ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী কাঠগড়ায় তুলেছেন বিজেপি এবং সংবাদমাধ্যমের একাংশকে।
মুম্বই সফরে মমতার সঙ্গে উদ্ধব ঠাকরে এবং শরদ পওয়ারের বৈঠক হবে। মমতা নিজেই জানিয়েছেন, শুক্রবার এই দুই নেতার সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ করার কথা। মমতা জানিয়েছেন, শুক্রবার বিকাল ৪টের সময়ে তিনি দেখা করবেন উদ্ধবের সঙ্গে। তার পর বিকাল পাঁচটায় শরদের বাড়িতে দেখা করবেন তিনি। মমতা এ-ও জানিয়েছেন, সমাজবাদী পার্টি নেতা অখিলেশ যাদবও পৌঁছবেন মুম্বইয়ে। তাঁর সঙ্গেও দেখা হতে পারে। তবে পূর্বনির্ধারিত কোনও সূচি নেই। শুক্রবার মুকেশ-তনয়ের বিবাহের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে শনিবার মমতার কলকাতায় ফেরার কথা।
বিমানবন্দরে মমতা বলেন, ‘‘উপনির্বাচনে তৃণমূলকে ড্যামেজ করতেই ৭২ ঘণ্টা আগে থেকে পুরনো ভিডিয়ো ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।’’ নির্দিষ্ট করে কোনও ভিডিয়োর কথা না বললেও মনে করা হচ্ছে, আড়িয়াদহের ক্লাবঘরে তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ জয়ন্ত সিংহ এবং তাঁর বাহিনীর যে কীর্তি প্রকাশ্যে এসেছে, মুখ্যমন্ত্রী তার দিকেই ইঙ্গিত করতে চেয়েছেন। মমতা এ-ও বলেছেন, ‘‘ওই ঘটনা ২০২১ সালের। তখন ওখানে এমপি ছিলেন অর্জুন সিংহ।’’ অর্জুন-অনুগামীদের অবশ্য বক্তব্য, আড়িয়াদহ কামারহাটির অন্তর্গত। আর কামারহাটি পড়ে দমদম লোকসভার মধ্যে। অর্জুন ছিলেন ব্যারাকপুরের সাংসদ। তা হলে কী ভাবে অর্জুনের নাম বলা হচ্ছে?
মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে পুরনো ঘটনা নতুন করে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পুলিশ কী ব্যবস্থা নিয়েছে, তা বলা হচ্ছে না। উল্লেখ্য, আড়িয়াদহের মা-ছেলেকে পেটানোর ঘটনায় জয়ন্ত ইতিমধ্যেই জেলে বন্দি। জেলে থাকাকালীনই ওই পুরনো ঘটনার ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসে। তার ভিত্তিতে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা রুজু করেছে। ইতিমধ্যে জয়ন্তের সাত শাগরেদকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালেই জয়ন্তের ‘ছায়াসঙ্গী’ লাল্টুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মমতা এ-ও বলেন, ‘‘উপনির্বাচনে একটা বুথে কী হয়েছে, সেটাকে বড় করে দেখানো হচ্ছে। বাকি জায়গায় শান্তিপূর্ণ ভাবে যে মানুষ ভোট দিয়েছেন, তা দেখানো হচ্ছে না।’’
শিল্পপতি মুকেশ অম্বানীর ছেলে অনন্তের বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বৃহস্পতিবার মুম্বই গেলেন মমতা। বিমানবন্দরে বাঁকুড়ার ঘটনার প্রসঙ্গও উত্থাপন করেন তৃণমূলনেত্রী। তিনি বলেন, ‘‘বাঁকুড়ার রানিবাঁধের একটা ঘটনা নিয়ে বিজেপি ময়দানে নেমেছে। আমি খোঁজ নিয়ে দেখলাম, ওখানে যা ঘটেছে তা পুরোটাই পারিবারিক বিবাদের কারণে। পুলিশ ব্যবস্থাও নিয়েছে।’’ বিজেপি অভিযোগ করেছিল, রানিবাঁধে তাদের বুথ সম্পাদক বঙ্কুবিহারী মাহাতোকে খুন করেছে তৃণমূলের লোকজন। রাজ্য বিজেপির এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডল থেকে মৃতের ছবিও পোস্ট করা হয়েছিল বৃহস্পতিবার সকালে। সেই পোস্টকে রিপোস্ট করে বাঁকুড়া জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে লেখা হয়েছে, ‘একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভুয়ো তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই অভিযোগ দায়ের হয়েছে এবং ওই গ্রামের তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’ পুলিশের এ-ও দাবি, জমি সংক্রান্ত বিবাদের জেরেই ওই ঘটনা ঘটেছিল।