কর্নাটক হাই কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি শুভ্র কমল মুখোপাধ্যায়। ফাইল ছবি।
তিনি হাই কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি। কিন্তু শিক্ষাবিদ নন। তা বলে কি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হতে পারবেন না? রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত অস্থায়ী উপাচার্য শুভ্রকমল মুখোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, ‘‘কোথায় এমন লেখা আছে?’’ তাঁর যুক্তি, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে গন্ডগোল হলে তো আমাদের কাছে আসেন, তখন যদি সুবিচারের জন্য ভরসা করতে পারেন, তবে এখন নয় কেন?’’
বুধবারই রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্য পদে নিয়োগ করা হয়েছে কর্নাটক হাই কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি শুভ্রকমলকে। নিয়োগ করেছেন বাংলার রাজ্যপাল তথা সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য সিভি আনন্দ বোস। কিন্তু সেই নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষাবিদেরা। অনেকেই জানতে চেয়েছেন, রবীন্দ্রনাথের আদর্শে তৈরি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাথায় একজন শিক্ষাবিদকে না এনে হঠাৎ অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে আনা হল কেন? এর এক দিন পরই শুক্রবার জোড়াসাঁকোয় আসেন রবীন্দ্রভারতীর অস্থায়ী উপাচার্য শুভ্রকমল। সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হতেই নিয়োগ নিয়ে পাল্টা যুক্তি দেন তিনি।
তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, আপনি তো আইনের দুনিয়ার মানুষ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক বিষয়ে কোনও অভিজ্ঞতা নেই। আপনার কি মনে হয়, এই নিয়োগ যথাযথ হয়েছে? জবাবে প্রাক্তন বিচারপতি বলেন, ‘‘কোথায় লেখা আছে উপাচার্যকে শিক্ষাবিদই হতে হবে? আর রবীন্দ্রভারতী চালানোর জন্য তো অন্য কারও দর্শন মেনে চলার প্রয়োজন নেই। রবীন্দ্রভারতী তো রবীন্দ্রনাথের আদর্শই চলবে। আমি তো অস্থায়ী। আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আশা করি আমি আমার কাজ করতে পারব।’’ তবে এককালে আইনজীবীদের যুক্তি পাল্টা যুক্তি সামলানো প্রাক্তন বিচারপতি সেখানেই থেমে না থেকে বলেছেন, ‘‘অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর যখন আর্ট কলেজের প্রশাসনিক দায়িত্বে এসেছিলেন, তখন তাঁর কি কলেজ চালানোর অভিজ্ঞতা ছিল? এ সব কোনও বিষয় নয়। আসল ব্যাপার হল কাজ করার সদিচ্ছা আছে কি না।’’
শুভ্রকমল জানিয়েছেন, তিনি কাজে বিশ্বাস করেন। আর তাঁর কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সেখানে ছাত্ররা রাজনীতি করলে তিনি মেনে নেবেন। আন্দোলনও মানবেন। কিন্তু উচ্ছৃঙ্খলতাকে প্রশ্রয় দেবেন না। তাঁকে প্রশ্ন করা হয় তবে শিক্ষাপ্রাঙ্গণে শৃঙ্খলা বজায় রাখতেই প্রাক্তন বিচারপতিকে উপাচার্য করা হল? জবাবে প্রাক্তন বিচারপতি জানিয়েছেন, যাঁরা তাঁর নিয়োগপত্রে সই করেছেন, তাঁরাই এ ব্যাপারে বলতে পারবেন। তিনি দরখাস্ত করে এই কাজ নেননি। তাই তাঁর এ বিষয়ে কোনও ধারণা নেই।
আপাতত রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ে থাকা ফাইলের কাজ শেষ করাই তাঁর লক্ষ্য বলে জানিয়ে শুভ্রকমল বলেছেন, মানুষের বিচার হয় কাজে। ফলে আমার বিচার এখন না করে আমার কাজ দেখে করুন। অনেক ফাইল পড়ে আছে। অনেকদিন উপাচার্য ছিলেন না। তাই আমার বিদ্যেবুদ্ধি অনুযায়ী যেগুলি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেই ফাইলের কাজ আগে করব।