মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
দীর্ঘ দিন পর রাজ্যের সব দফতর ও জেলা প্রশাসনকে নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠকে বসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার নবান্নে সেই বৈঠক হবে বলে প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে। আর সেই বৈঠকের আগে রাজ্যের সব দফতরকে কড়া চিঠি পাঠালেন নতুন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। সেই একই চিঠি পাঠানো হয়েছে রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমারকেও। এ ছাড়াও চিঠি পাঠানো হয়েছে সব জেলার জেলাশাসক, সমস্ত পুলিশ কমিশনারেটের কমিশনার এবং ডিভিশনাল কমিশনারকে। শনিবার সেই চিঠি সবার কাছে পৌঁছে গিয়েছে বলেই প্রশাসন সূত্রে খবর। চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকের কথা উল্লেখ করা হয়েছে মুখ্যসচিবের তরফে। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, সরকারি কাজের প্রতিনিয়ত পর্যালোচনার প্রয়োজন রয়েছে। ফলে কাজের সময় সরকারি কর্মীদের আরও দায়িত্ব সহকারে কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে । অকারণে কাজে যোগ না দিলে সেটি ‘সার্ভিস কন্ডাক্ট রুলে’র লঙ্ঘন বলেও ধরা হবে।
মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত দেশের সাধারণ লোকসভা নির্বাচনের কারণে রাজ্যের বিভিন্ন প্রকল্প এবং বহু উন্নয়নমূলক কাজ থমকে গিয়েছিল। তার পরে কয়েকটি উপনির্বাচন নিয়েও বেশ কিছু জেলায় ‘মডেল কোড অফ কন্ডাক্ট’-এর কারণে কাজ করা যায়নি। এ ছাড়াও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে প্রায় চার মাসে যথেষ্ট শ্লথগতিতে এগিয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন প্রকল্পের পরিষেবা প্রদানের কাজ। ফলে পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ থেকে শুরু করে কর্মশ্রী, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পানীয় জল সরবরাহ-সহ সমস্ত প্রকল্পের কাজে গতি আনার প্রয়োজন বলেই জানানো হয়েছে এই নির্দেশিকায়। তাই যত দ্রুত সম্ভব উন্নয়নমূলক কাজগুলিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার উপর জোর দিয়েছেন মুখ্যসচিব পন্থ। প্রসঙ্গত, চলতি মাসের পয়লা তারিখ থেকে রাজ্যের মুখ্যসচিবের দায়িত্ব পেয়েছেন মনোজ। আর সোমবার প্রথম বার লোকসভা নির্বাচনের পর পর্যালোচনা বৈঠকে বসছেন মুখ্যমন্ত্রী। তার আগে যাতে বিভিন্ন দফতরের মন্ত্রী ও সচিবেরা নিজেদের দফতরের উন্নয়নমূলক কাজের খতিয়ান নিয়ে বৈঠকে যোগদান করেন, এই চিঠি মারফত সেই বার্তাই দিয়েছেন মুখ্যসচিব এমনটাই মনে করছে প্রশাসনিক মহলের একাংশ।
তবে প্রশাসনিক মহলের আরও একটি অংশ মনে করছে, আরজি কর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনার পর যে ভাবে রাজ্য জুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে, তাতে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি প্রচার করতে শুরু করেছে যে, রাজ্য সরকারের তরফে আর উন্নয়নমূলক কাজ করা সম্ভব নয়। জনবিক্ষোভের কারণে, রাজ্যের সব দফতর হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে। বিরোধীদের এমন প্রচার কৌশলের জবাব দিতেই মুখ্যমন্ত্রী সোমবার পর্যালোচনা বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলেই অনুমান প্রশাসনের একাংশের। তাই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই নতুন মুখ্যসচিব রাজ্য পুলিশের ডিজি-সহ সব দফতর ও জেলার শীর্ষ আধিকারিককে কড়া চিঠিটি পাঠিয়েছেন বলেই মনে করা হচ্ছে।