Sukhendu Sekhar Roy

জহর ইস্তফা দিচ্ছেন, কী করবেন আপনি? ‘বিদ্রোহী’ সুখেন্দুশেখর কী বললেন আনন্দবাজার অনলাইনকে

আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে সুর চড়িয়ে এর আগে দলের অস্বস্তি বাড়িয়েছিলেন তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ সুখেন্দু। যদিও দলীয় সতীর্থ জহরের মতো এখনও পর্যন্ত ইস্তফা দেওয়ার পথে হাঁটেননি তিনি।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:৪৪
Share:

(বাঁ দিকে) জহর সরকার এবং সুখেন্দুশেখর রায় (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

দল এবং রাজ্যসভার সতীর্থ জহর সরকারের ইস্তফা দেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে আনন্দবাজার অনলাইনে মুখ খুললেন সুখেন্দুশেখর রায়। আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে সুর চড়িয়ে এর আগে দলের অস্বস্তি বাড়িয়েছিলেন তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ সুখেন্দু। যদিও জহরের মতো এখনও পর্যন্ত ইস্তফা দেওয়ার পথে হাঁটেননি তিনি।

Advertisement

জহরের রাজ্যসভার পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার খবর প্রকাশ্যে আসার পরেই আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে যোগাযোগ করা হয়েছিল সুখেন্দুর সঙ্গে। তিনি বলেন, “জহর সরকারের খবর পেয়েছি। কিন্তু আমি সে বিষয়ে কোনও মন্তব্য করব না। আমি এর বিরোধিতাও করছি না। সমর্থনও নয়।” আরজি কর-কাণ্ডে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে সুখেন্দুর সংযোজন, “আমি আমার মতো করে নাগরিক আন্দোলনের সঙ্গে আছি। একটা বিন্দু হিসেবে। একজন নাগরিক হিসেবে আমার সামান্য যা করণীয় করছি। সকলেই তো গোল দেয় না, সেঞ্চুরি করে না। সকলেই চ্যাম্পিয়ন হয় না। কিন্তু মাঠে নেমে তো খেলতে হবে। সাংসদের কাছে মানুষের একটা প্রত্যাশা থাকে, যে তিনি কোনও অন্যায়ের সঙ্গে থাকবেন না।”

জহরের মতো সুখেন্দুও দল এবং রাজ্যসভার পদ থেকে ইস্তফা দেবেন কি না, তা নিয়ে তৃণমূলের অন্দরেই আলোচনা শুরু হয়েছে। এই প্রসঙ্গে সুখেন্দু বলেন, “আমি কখনও কোনও সিদ্ধান্ত নিলে সকলেই জানতে পারবেন। যেমন প্রতিবাদ করেছিলাম বিবেকের ডাকে। আমি নাগরিক আন্দোলনের সঙ্গে আছি। আমি নিজের ঢাক কখনও পেটাইনি। পেটাই না।” সুখেন্দু-হিতৈষীদের অবশ্য বক্তব্য, তিনি মনে করছেন রাজ্যসভার পদে থাকলে তাঁর বক্তব্য তুলনায় বেশি ‘গুরুত্ব’ পাবে। তা ছাড়াও তৃণমূলের মধ্যে থেকে তৃণমূলের বিভিন্ন ‘অপকর্মের’ বিরোধিতা করলে দল এবং জনমানসেও একটা বার্তা পৌঁছবে বলে মনে করছেন সুখেন্দু।

Advertisement

রবিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখে লেখা চিঠিতে জহর সাংসদ পদ এবং রাজনীতি ছাড়ার কথা জানান জহর। চিঠিতে প্রাক্তন এই আমলা লেখেন, ‘‘আমি গত এক মাস ধৈর্য ধরে আরজি কর হাসপাতালের ঘৃণ্য ঘটনার বিরুদ্ধে সবার প্রতিক্রিয়া দেখেছি আর ভেবেছি, আপনি কেন সেই পুরনো মমতা ব্যানার্জির মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে সরাসরি জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলছেন না। এখন সরকার যে সব শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে, তা এককথায় অতি অল্প এবং অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।’’

অন্য দিকে, আরজি করের ঘটনা নিয়ে রাজ্যের শাসক শিবির যখন অস্বস্তিতে, তখন বেসুরে বাজছেন সুখেন্দুও। কখনও ইতিহাস, কখনও দর্শনের আশ্রয় নিয়ে সমাজমাধ্যমে একের পর এক ইঙ্গিতপূর্ণ পোস্ট করে চলেছেন তিনি। মনে করা হচ্ছে এই সমস্ত পোস্টে তিনি নিজের দল এবং রাজ্য সরকারের দিকেই ইঙ্গিত করছেন।

১৪ অগস্ট ছিল প্রথম ‘রাত দখল’ কর্মসূচি। ঠিক তার আগে ওই কর্মসূচিতে সমর্থন জানিয়ে সুখেন্দু জানিয়েছিলেন, তিনি মেয়ের বাবা, নাতনির দাদু। তাই তিনি মনে করেন, এই সময়ে প্রতিবাদে শামিল হওয়াটা জরুরি। ১৪ তারিখ দক্ষিণ কলকাতার যোধপুর পার্কে নেতাজি মূর্তির সামনে বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ধর্নাতেও বসেছিলেন সুখেন্দু। এর পরে নিজের দলের ‘অস্বস্তি’ বাড়িয়ে কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল এবং আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে হেফাজতে নিয়ে জেরা করার দাবি জানিয়েছিলেন সিবিআইয়ের কাছে।

এর পরে সমাজমাধ্যমে আবার একটি ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ পোস্ট করেছিলেন সুখেন্দু। ভারত-চিন যুদ্ধের সময়ে প্রকাশিত একটি কার্টুন শেয়ার করেন তিনি। কার্টুনটি ১৯৬২ সালের ২৬ ডিসেম্বরের। কার্টুনিস্ট আরকে লক্ষ্মণের আঁকা ছবিতে দেখা যায়, পুলিশ এক ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। তলায় লেখা, ‘‘এটা ঠিক যে, আপনি গুজব ছড়াচ্ছিলেন না। আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ, আপনি সঠিক তথ্য ছড়াচ্ছিলেন।’’ পুরনো সেই কার্টুনটি নিজের এক্স হ্যান্ডলে শেয়ার করেন সুখেন্দুশেখর। সঙ্গে একটি অট্টহাসির ইমোজি।

এর পর গত ১ সেপ্টেম্বর সুখেন্দু এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট দিয়ে মনে করিয়েছিলেন বাস্তিল দুর্গের পতনের কথা। সুখেন্দু লেখেন, ‘‘১৭৮৯ সালের জুলাই...। বিক্ষোভকারীরা ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছিলেন বাস্তিল দুর্গ। জন্ম হয়েছিল ঐতিহাসিক ফরাসি বিপ্লবের।’’ প্রসঙ্গত, ১৭৮৯ সালের ১৪ জুলাই উন্মত্ত ফরাসি জনতা ভেঙে দেয় প্যারিসের বাস্তিল দুর্গ। তার পরেই শুরু হয় ফরাসি বিপ্লব। এই বাস্তিল দুর্গ ছিল রাজতন্ত্র, ইউরোপে মধ্যযুগীয় শোষণের প্রতীক। প্রশ্ন ওঠে, ইউরোপের সেই শোষণের যুগের সঙ্গে কি পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান পরিস্থিতির তুলনা টানতে চাইছেন সুখেন্দুশেখর?

প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে তৃতীয় বারের জন্য রাজ্যসভার সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন সুখেন্দু। রাজ্যসভার সাংসদ হিসাবে তাঁর মেয়াদ রয়েছে ২০২৯ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত। অন্য দিকে, ২০২১ সালে রাজ্যসভার সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দেন দীনেশ ত্রিবেদী। তাঁর জায়গায় তৃণমূল রাজ্যসভায় পাঠায় জহরকে। রাজ্যসভার সাংসদ হিসাবে তাঁর প্রথম দফার মেয়াদ শেষ হত ২০২৬ সালে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement