Bengal post-poll Violence

Bengal post-poll Violence: হিংসা: এলাকা ধরে ধরে ‘গুন্ডা’দের তালিকা পেশ করেছে কেন্দ্রীয় মানবাধিকার কমিশন

রাজ্যের ২৩টি জেলার মধ্যে ২২টিতেই হিংসার ঘটনার অভিযোগ উঠে এসেছে। একমাত্র কালিম্পং থেকে কোনও অভিযোগ আসেনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০২১ ১১:২৭
Share:

রাজ্যে ভোট পরবর্তী হিংসার চূড়ান্ত রিপোর্ট মঙ্গলবার কলকাতা হাই কোর্টে জমা দিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। বৃহস্পতিবার ওই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসে। রিপোর্ট অনুযায়ী, রাজ্যের ২২টি জেলার ১৫ হাজারের বেশি মানুষ ভোটের ফল প্রকাশের পর অশান্তির শিকার হয়েছেন। খুন, ধর্ষণ, শ্লীলতাহানি, বাড়িঘর ভাঙচুর, অগ্নি সংযোগের মতো অভিযোগ রয়েছে কমিশনের রিপোর্টে। সেখানে রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসনের ‘নিষ্ক্রিয়তা’র কথাও বলা হয়েছে। এমনকি হিংসার ঘটনায় ‘দুষ্কৃতী’ হিসাবে রাজ্যের মন্ত্রী-সহ তৃণমূলের একাধিক বিধায়ক ও নেতার নাম রয়েছে। যা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতর।

Advertisement

মানবাধিকার কমিশনের এই রিপোর্ট নিয়ে ধন্দ তৈরি হয়েছে বিভিন্ন মহলে। তৃণমূল বিষয়টিকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা হিসেবে দেখছে। হিংসার তথ্য সম্পর্কে কমিশন রিপোর্টে বলছে বিভিন্ন সূত্রের কথা। রিপোর্ট অনুযায়ী, হিংসার তথ্য বিভিন্ন সূত্র মারফত কমিশনের হাতে রয়েছে। মোট ১৯৭৯টি অভিযোগ জমা পড়েছে। তার মধ্যে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে ১৬৫০টি অভিযোগ তুলে এনেছেন কমিশনের আধিকারিকরা। ওই সব অভিযোগ অনুযায়ী রাজে পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ হিংসার শিকার হয়েছেন। এ ছাড়া স্টেট লিগ্যাল সার্ভিস অথরিটির কাছে ৩১৫টি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। যেখানে বলা হচ্ছে প্রায় ১০ হাজারের কাছাকাছি মানুষ আক্রান্ত। ৫৭টি অভিযোগ জমা পড়েছে জাতীয় মহিলা কমিশনের কাছে। এর পরও বাকি অভিযোগগুলি দায়ের হয়েছে ঘটনাস্থলের স্থায়ী বাসিন্দা, কমিশনের করা বিভিন্ন শিবির থেকে। সবথেকে কম অভিযোগ এসেছে পশ্চিমবঙ্গ মানবাধিকার কমিশন থেকে, ১৮টি। ইমেল মারফত ওই অভিযোগগুলি জমা হয়েছে সেখানে। ফলে বিভিন্ন সূত্র থেকে যে অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে তাতে পরিষ্কার ভোট পরবর্তী হিংসায় আক্রান্ত হয়েছেন অনেক মানুষ, নিজেদের রিপোর্টে এটাই বলতে চেয়েছে কমিশন।

জেলা অনুযায়ী হিংসার অভিযোগ ভাগ করে দেখিয়েছে কমিশন। রাজ্যের ২৩টি জেলার মধ্যে ২২টিতেই হিংসার ঘটনার অভিযোগ উঠে এসেছে। একমাত্র কালিম্পং থেকে কোনও অভিযোগ আসেনি। দক্ষিণবঙ্গের সব জেলা থেকেই কম বেশি হিংসার অভিযোগ দায়ের হয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, সবথেকে বেশি হিংসার অভিযোগ দায়ের হয়েছে কোচবিহারে, ৩২২টি। এ ছাড়া ৩১৪টি অভিযোগ এসেছে বীরভূম থেকে। যথাক্রমে ১৯৬টি এবং ২০৩টি অভিযোগ দায়ের হয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে। কলকাতায় হিংসার রিপোর্ট দায়ের হয়েছে ১৭২টি। পূর্ব বর্ধমান থেকে হয়েছে ১১৩টি। আবার সবথেকে কম অভিযোগ এসেছে দার্জিলিং থেকে। মাত্র একটি। দার্জিলিঙের পাশাপাশি ১০টিরও কম অভিযোগ দায়ের হয়েছে মুর্শিদাবাদ, ঝাড়গ্রাম, দক্ষিণ দিনাজপুর ও পুরুলিয়া থেকে।

Advertisement

কমিশনের এই রিপোর্ট নিয়ে সবথেকে বেশি বিতর্ক তৈরি হয়েছে সেখানে রাজ্যের মন্ত্রী-সহ অনেক তৃণমূল নেতা-বিধায়কের নাম থাকায়। কমিশন চিহ্নিত ‘কুখ্যাত দুষ্কৃতী’ বা ‘গুন্ডা’দের তালিকায় বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, বিধায়ক পার্থ ভৌমিক, শওকত মোল্লা, খোকন দাস, প্রাক্তন বিধায়ক উদয়ন গুহ, কাউন্সিলর জীবন সাহা এবং নন্দীগ্রামের মুখ্যমন্ত্রীর নির্বাচনী এজেন্ট শেখ সুফিয়ানের মতো ওজনদার নেতারা রয়েছেন। সেখানেও জেলাওয়াড়ি নাম রিপোর্টে তুলে ধরেছে কমিশন। সবচেয়ে বেশি ‘গুন্ডা’র নাম নথিভুক্ত হয়েছে কোচবিহার ও পূর্ব বর্ধমান থেকে। গুন্ডাদের তালিকায় কলকাতার চিৎপুর, যাদবপুর, মানিকতলা ও উল্টোডাঙার ন’জনের নাম রয়েছে। আবার বীরভূম ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে সবথেকে বেশি অভিযোগ উঠলেও নাম রয়েছে অনেক কম। রিপোর্টে ‘গুন্ডা’র তালিকায় উত্তর দিনাজপুরের ছয়, হুগলির সাত, হাওড়া তিন, মালদহ চার, মুর্শিদাবাদ সাত, বসিরহাট আট, বারুইপুর ও নদিয়া নয় এবং বাঁকুড়ার ১১ জনের নাম রয়েছে। বিধানসভা নির্বাচনে সবথেকে বেশি চর্চিত ছিল নন্দীগ্রাম আসন। শুধু সেখানেরই গুন্ডা হিসেবে পাঁচ জনের নাম রয়েছে তালিকায়। পূর্ব মেদিনীপুরে অনেক হিংসার অভিযোগ উঠলেও, নন্দীগ্রাম ছাড়া অন্য এলাকা থেকে কোনও নাম নেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement