রঙের মিস্ত্রি থেকে বিপুল উত্থান
SSC recruitment scam

SSC Recruitment Scam: স্কুল দুর্নীতির প্রসন্ন জুটি

স্কুলে শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মী পদে বেআইনি ভাবে কারা নিযুক্ত হবে, সেই তালিকা তৈরি হত এবং তা পৌঁছে যেত কমিশনের একাংশের কাছে!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০২২ ০৬:০৩
Share:

আলিপুর কোর্টে এসএসসি কাণ্ডে ধৃত প্রসন্ন রায়। ছবি: রণজিৎ নন্দী

এ যেন দুর্নীতি চক্রের ‘ব্যাক অফিস’!

Advertisement

স্কুলে শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মী পদে বেআইনি ভাবে কারা নিযুক্ত হবে, সেই তালিকা তৈরি হত এবং তা পৌঁছে যেত কমিশনের একাংশের কাছে! স্কুল দুর্নীতির প্রাথমিক তদন্তে সিবিআই তা জানতে পেরেছে বলে সূত্রের দাবি। ওই সূত্রের আরও দাবি, রাজারহাট-নিউ টাউন থেকে ধৃত প্রসন্ন রায় এবং তাঁর সহযোগী প্রদীপ সিংহ এই তালিকা তৈরির কাজ করতেন এবং এই চক্রের সঙ্গে স্কুল সার্ভিস কমিশনের তৎকালীন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিংহের যোগসূত্র রয়েছে। প্রসন্নকে শুক্রবার গ্রেফতার করা হয়।

সূত্রের খবর, প্রদীপকে জেরা করেই প্রসন্নের হদিস মিলেছে। প্রসন্ন পিছনে থাকলেও প্রদীপ মূলত‌ বেআইনি নিয়োগে অযোগ্য প্রার্থীদের সঙ্গে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় ছিলেন। সিবিআই সূত্রের দাবি, হেফাজতে থাকাকালীন প্রদীপ যে বয়ান দিয়েছেন তা থেকে দুর্নীতিতে ওই দু’জনের সক্রিয় ভূমিকার ইঙ্গিত পেয়েছে তারা। মূলত দুই ২৪ পরগনার চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে এই দু’জনের যোগাযোগের প্রমাণ মিলেছে। প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি রাজ্যে আরও অনেক প্রসন্ন-প্রদীপ জুটি রয়েছে?

Advertisement

তদন্তকারীদের দাবি, সল্টলেকের জিডি ২৫৩ ঠিকানায় প্রসন্নের ভ্রমণ সংস্থার অফিস রয়েছে। পাশাপাশি পরিবহণ ব্যবসা। প্রসন্নের ভ্রমণ সংস্থায় চাকরি করতেন হেফাজতে থাকা প্রদীপ। প্রসন্নের উত্থানও চমকপ্রদ বলে জানা গিয়েছে। বছর দশ-বারো আগেও রঙের মিস্ত্রির কাজ করা প্রসন্ন বর্তমানে নিউ টাউন-সহ উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকায়

বিপুল জমি, বাড়ি ও রিসর্টের মালিক। উত্তরবঙ্গে তাঁর চা বাগান এবং বিদেশে হোটেল ব্যবসায় বিনিয়োগ আছে বলেও খবর। সেই সব সম্পত্তি বৃদ্ধির সঙ্গে নিয়োগ দুর্নীতির যোগ রয়েছে কি না, তা-ও দেখা প্রয়োজন বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। তবে অনেকে মনে করছেন, দুর্নীতি থেকে প্রাপ্ত অনেকেই নিজের নামে সম্পত্তি করেন না। সে ক্ষেত্রে প্রসন্নের নামে অন্য কেউ সম্পত্তি কিনেছেন কি না, তা-ও দেখা হবে।

প্রসন্ন কী ভাবে এই তালিকা তৈরিতে যুক্ত হলেন, তার সন্ধান চলছে। গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, ওই সব বেআইনি নিয়োগের সময়ে শিক্ষামন্ত্রীর পদে থাকা পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রসন্নের ‘ঘনিষ্ঠতা’ ছিল। প্রসন্নের আবাসনের পুজোতেও পার্থ গিয়েছিলেন বলে খবর। দু’জনের ‘দূরসম্পর্কের আত্মীয়তা’ আছে বলেও জানা গিয়েছে।

প্রসন্নকে আলিপুর আদালতের মুখ্য বিচার বিভাগীয় বিচারকের এজলাসে শনিবার হাজির করানো হয়। আদালতে সিবিআইয়ের আইনজীবী বলেন, ‘‘সম্প্রতি প্রদীপ সিংহ নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁকে জেরা করে জানা গিয়েছে, প্রসন্নও দুর্নীতিতে যুক্ত। নানা তথ্যপ্রমাণও হাতে এসেছে। প্রসন্নকে হেফাজতে নিয়ে জেরার প্রয়োজন আছে।’’ ধৃতের আইনজীবী নূর নবি শেখ বলেন, ‘‘১০ বছর আগে প্রসন্নের বাইপাস সার্জারি হয়েছে। কয়েক মাস অন্তর তার পরীক্ষা করতে হয়। সিবিআই শুক্রবার দিন তাঁকে সাক্ষী হওয়ার নোটিস পাঠায়। একটি সাদা কাগজে কয়েকটি নাম ছাড়া প্রসন্নের কাছ থেকে আর কোনও নথি উদ্ধার হয়নি।’’ দু’পক্ষের বক্তব্য শোনার পরে বিচারক প্রসন্নকে দু’দিনের জন্য পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। হেফাজতে থাকাকালীন তাঁকে জেরা করে আরও তথ্য মিলতে পারে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement