রিজ-কাণ্ডে নাম জড়িয়েছিল পুলিশের বড়কর্তাদেরও, যার অন্যতম কলকাতা পুলিশের তৎকালীন ডেপুটি কমিশনার জ্ঞানবন্ত সিংহ। ঘটনাচক্রে, তিনিই এ বার সিট-এর নেতৃত্বে। রিজের পরিবার তো সে দিন জ্ঞানবন্তের ভূমিকা নিয়েও সরব হয়েছিল?
তৃণমূলের বিধায়ক রুকবানুর রহমান। ছবি টুইটার।
আনিস খানের মৃত্যুতে পুলিশের নাম জড়িয়ে যাওয়া এবং তা নিয়ে জনবিক্ষোভে রিজওয়ানুর কাণ্ডের ছায়া দেখছেন তাঁর ভাই, তৃণমূলের বিধায়ক রুকবানুর রহমানও। তবে তাঁর মতে, আনিসের পরিবারের এখনই সিবিআই তদন্ত চাওয়ার কোনও কারণ নেই।
২০০৭ সালের ২১ সেপ্টেম্বর কলকাতার পাতিপুকুর রেলস্টেশনের কাছে রিজওয়ানুর রহমানের মৃতদেহ মিলেছিল। ক্ষমতাশালী ব্যবসায়ীর মেয়ে প্রিয়ঙ্কা তোদির সঙ্গে তাঁর বিয়ে ভাঙার জন্য রিজ়ের উপর চাপ সৃষ্টির অভিযোগ উঠেছিল পুলিশের বিরুদ্ধে। তা নিয়ে রাজ্য রাজনীতি উত্তাল হয়। ২০১১ সালে পরিবর্তনের ভোটে রিজ়ের দাদা রুকবানুরকে নদিয়ার চাপড়া কেন্দ্রে প্রার্থী করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই থেকে টানা তিন বার তিনি সেখানকার বিধায়ক। রুকবানুর বলছেন, “সে দিনও আনিসের ঘটনার মতোই সকলে অন্য সব কিছু সরিয়ে একটা প্ল্যাটফর্মে এসে আমার ভাইয়ের জন্য রাস্তায় নেমে আন্দোলন করেছিলেন। খুব মিল খুঁজে পাচ্ছি।” রুকবানুরের মতে, “আনিসের মতো আমার ভাইও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। আনিসকে যদি খুন করা হয়ে থাকে, খুনিদের শাস্তি হওয়া উচিত।”
তবে রুকবানুরের দাবি, আনিসের জন্য ‘ইনসাফ’ চাওয়ার আন্দোলনে কিছু সুবিধাবাদী রাজনৈতিক লোকজন জুড়ে যাচ্ছে। চরমপন্থী হিন্দু ও মুসলিম মৌলবাদী সংগঠন এই আন্দোলনকে হাইজ্যাক করার চেষ্টা করছে, এমন নির্দিষ্ট খবর আছে বলেও তিনি দাবি করেন। সিবিআই তদন্ত চাওয়ারও বিরোধী তিনি। রুকবানুরের দাবি, রিজ-কাণ্ডে তৎকালীন বাম সরকার তাঁদের কোনও কথাই শোনেনি। ‘সিট’ গঠন করেনি, বিচারবিভাগীয় তদন্তও হয়নি। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য তাঁদের বাড়িতে গিয়েছিলেন ঘটনার প্রায় দেড় মাস পর। তাই তাঁরা আদালতে যেতে বাধ্য হন, সিবিআই তদন্ত চেয়েছিলেন। এ ক্ষেত্রে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী আনিসের পরিবারের পাশে আছেন, ‘সিট’ গঠন করেছেন। রুকবানুরের মতে, “আনিসের বাবা যে সিবিআই তদন্ত চাইছেন তা আসলে তাঁকে কেউ শিখিয়ে দিয়েছে।”
যা শুনে বুধবার সন্ধ্যায় হাওড়ার আমতার বাড়িতে বসে আনিসের বাবা সালেম খান, দাদা সাবির খানেরা পাল্টা বলেন, “কেউ শিখিয়ে দেবে কেন? পুলিশের উপরে আমাদের ভরসা নেই, তাই সিবিআই তদন্ত চাইছি।”
রিজ-কাণ্ডে নাম জড়িয়েছিল পুলিশের বড়কর্তাদেরও, যার অন্যতম কলকাতা পুলিশের তৎকালীন ডেপুটি কমিশনার জ্ঞানবন্ত সিংহ। ঘটনাচক্রে, তিনিই এ বার সিট-এর নেতৃত্বে। রিজের পরিবার তো সে দিন জ্ঞানবন্তের ভূমিকা নিয়েও সরব হয়েছিল? রুকবানুরের জবাব, “এটা ঠিকই। কিন্তু পরবর্তী কালে সিবিআই জ্ঞানবন্ত সিংহকে ক্লিনচিট দিয়েছিল।” তাঁর মতে, “মুখ্যমন্ত্রী নিশ্চয়ই ভাল মানুষকেই সিটের দায়িত্ব দিয়েছেন।”
আনিস-কাণ্ডের বিহিত চেয়ে পথে নেমেছে বামপন্থী ছাত্র-যুবরা। এসএফআইয়ের রাজ্য কমিটির সহ-সম্পাদক মৌপ্রিয়া রাহা বলছেন, “রুকবানুর রহমান তৃণমূল বিধায়ক। ফলে তিনি কী বলছেন সেটা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ হল, সে দিন বিরোধী নেত্রী হিসাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে কথা বলেছিলেন, আজ মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে ঠিক তার উল্টো কথা বলছেন।”