—প্রতীকী ছবি।
ইতিমধ্যেই সরকারি হাসপাতালের পরিকাঠামো ব্যবহার করে মেডিক্যাল কলেজ তৈরির সুযোগ রয়েছে বেসরকারি সংস্থার। এ বার রাজ্যের মোট ১৬টি হাসপাতালের পরিকাঠামো ব্যবহার করে নার্সিং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (স্কুল বা কলেজ) তৈরির জন্য বেসরকারি সংস্থাকে এগিয়ে আসতে আহ্বান জানাল স্বাস্থ্য দফতর। এই বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে দরপত্র ডাকা হয়েছে।
রাজ্যের এই সিদ্ধান্তকে ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। নার্সদের সংগঠনের দাবি, বিপুল সংখ্যক নার্স প্রশিক্ষণ নেওয়ার পরেও তাঁদের চাকরি দিতে পারছে না সরকার। সেখানে আরও বেশি নার্সকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য নতুন প্রতিষ্ঠান তৈরির নেপথ্যে কি অন্য কোনও কারণ রয়েছে? এ ভাবে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বেসরকারিকরণের প্রচেষ্টাচলছে বলে অভিযোগ বিরোধী চিকিৎসক শিবিরের।
কোনও অভিযোগই মানতে নারাজ স্বাস্থ্য কর্তারা। তাঁদের পাল্টা দাবি, ইন্ডিয়ান নার্সিং কাউন্সিলের নির্দেশিকা মেনেই এমন পদক্ষেপ করা হচ্ছে। পাশাপাশি এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ওই ১৬টি সরকারি হাসপাতালের পরিষেবার মান আরও বাড়ানোর চেষ্টা করছে স্বাস্থ্য দফতর।
এক কর্তা জানাচ্ছেন, অনেক বেসরকারি সংস্থার কাছে ডাক্তার, লোকবল, অর্থ আছে। কিন্তু ডাক্তারি বা নার্সিং প্রশিক্ষণ দেওয়ার মতো হাসপাতাল নেই। ইতিমধ্যেই নির্দিষ্ট ভাড়ায় সরকারি পরিকাঠামো ব্যবহার করে মেডিক্যাল কলেজ তৈরির জন্য বেসরকারি সংস্থাকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এখন নার্সিং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি মেডিক্যাল কলেজ (বিসি রায় শিশু হাসপাতাল), একটি জেলা হাসপাতাল ও ১৪টি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, প্রথম ধাপে ১০ বছরের জন্য ওই সমস্ত সরকারি হাসপাতালে বা সেখানকার জমিতে নার্সিং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি করে চালাতে পারবে বেসরকারি সংস্থা। পরে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে আরও ১০ থেকে ৩৩ বছর পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট বেসরকারি সংস্থাকে ওই পরিকাঠামো ব্যবহার করতে দেওয়া হবে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়েছে ৬০ থেকে ১০০ জন পড়ুয়া নিয়ে ওই নার্সিং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করা যাবে।
‘নার্সেস ইউনিটি’-র সাধারণ সম্পাদক ভাস্বতী মুখোপাধ্যায় বলেন, “যে নার্সিং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি রয়েছে সেগুলির আসন বাড়ানো যেতে পারে। কিন্তু সেগুলির পরিকাঠামোগত সমস্যা রয়েছে। তা ঠিক করা হচ্ছে না। উল্টে বেসরকারিকরণ করা হচ্ছে। এটা কখনওই ঠিক সিদ্ধান্ত নয়।” এ ভাবে সরকারি পরিকাঠামো ব্যবহার করে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার অর্থ চিকিৎসা ব্যবস্থাকে বেসরকারিকরণের পথে নিয়ে যাওয়া বলেই দাবি অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টর্সের সাধারণ সম্পাদক মানস গুমটার। তবে প্রত্যন্ত ও গ্রামীণ এলাকায় নার্সিং কলেজ বা স্কুল তৈরি হলে ভিন্ রাজ্যে ওই বিষয়ে পড়তে যাওয়ার প্রবণতা যেমন কমবে, তেমনই নার্সের সংখ্যা বাড়লে প্রান্তিক এলাকায় চিকিৎসার মান আরও বাড়বে বলেও মত রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের সদস্য কৌশিক বিশ্বাসের। তাঁর দাবি, সরকারি হাসপাতালের পরিকাঠামো বা জমি ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট ফি দেবে বেসরকারি সংস্থা। সেটিকে মুনাফা অর্জন না ভেবে সরকারি ব্যবস্থার পুরোপুরি ব্যবহার ভাবা প্রয়োজন। ২৪ জানুয়ারি থেকে টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরুর আগে ১৮ জানুয়ারি আগ্রহী সংস্থার প্রতিনিধিদের স্বাস্থ্য ভবনে বৈঠকে ডাকা হয়েছে বলেও খবর।