রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
আরজি করে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনা নিয়ে অবশেষে মুখ খুললেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। তিনি বললেন, ‘‘আরজি করের ঘটনা ভয়াবহ। এতে আমাদের বিবেকে একটা ঝাঁকুনি লাগা উচিত। যা ঘটেছে, তা গোটা বাংলার কাছে লজ্জার। দেশ তো বটেই, মানবজাতির কাছেও লজ্জার।’’
গত শুক্রবার প্রকাশ্যে আসে আরজি করের ঘটনা। তার পর থেকে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে শুরু হয়েছে প্রতিবাদ আন্দোলন। মঙ্গলবার কলকাতা হাই কোর্টে মামলাটির শুনানিও ছিল। কিন্তু মঙ্গলবার পর্যন্ত আরজি করের ঘটনা নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি রাজ্যপাল। রাজভবনের যে ‘মিডিয়া সেল’-এর এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে সাধারণত তাঁর মতামত সংক্রান্ত পোস্ট করা হয়, সেখানে গত পাঁচ দিনে অন্য বিষয়ে ছবি এবং বক্তব্য প্রকাশ করা হলেও আরজি করের ঘটনার কোনও উল্লেখ ছিল না। শেষে বুধবার বিকেলে ওই এক্স হ্যান্ডলে রাজ্যপালের একটি ভিডিয়ো পোস্ট করা হয়। সেখানেই প্রথম আরজি করের ঘটনায় রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতির সমালোচনা করতে শোনা যায় রাজ্যপালকে। একই সঙ্গে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আমাদের দায়িত্ব বাংলা এবং ভারতকে মহিলাদের থাকার জন্য নিরাপদ করে তোলা। এটা বড় দায়িত্ব। যদি এখন আমরা সুযোগ হারাই তবে, ভবিষ্যতে আর নাও পেতে পারি।’’
কোন সুযোগের কথা বলছেন রাজ্যপাল তা অবশ্য তিনি ওই ভিডিয়ো বার্তায় স্পষ্ট করেননি। তবে রাজ্যপাল বলেছেন, ‘‘আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। একজোট হয়ে কাজ করতে হবে। তা হলেই সাফল্য আসবে। কারণ বিবেকানন্দ বলে গিয়েছেন, ‘ওঠো, জাগো, লক্ষ্যে না পৌঁছনো পর্যন্ত থেমো না।’ এই স্থির সংকল্পই থাকতে হবে আমাদের। নিশ্চিত করতে হবে, আমাদের মেয়েরা যাতে সুরক্ষিত থাকে।’’
উল্লেখ্য, এই রাজভবনেই শ্লীলতাহানির অভিযোগ করেছিলেন সেখানে কাজ করতে যাওয়া এক অস্থায়ী মহিলা কর্মী। রাজ্যপাল যদিও সেই অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছিলেন। বুধবার তিনি রাজ্যে মহিলাদের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে বলেছেন, বাংলায় আগেও মহিলাদের বিরুদ্ধে এই ধরনের অপরাধের ঘটনা ঘটেছে। সাম্প্রতিক অতীতেই আমরা দেখেছি রাস্তায় ফেলে প্রকাশ্যে এক মহিলাকে অত্যাচারের ঘটনা। রাস্তার মধ্যে এক মহিলাকে বেআব্রু করার ঘটনাও ঘটতে দেখেছি এই সে দিন। আমি জানতে চাই এই বাংলাই কি সেই বাংলা, যেখানে কবিগুরু লিখেছিলেন, ‘চিত্ত যেথা ভয়শূন্য উচ্চ যেথা শির..!’ যেখানে সর্বত্র চোখে পড়ছে মহিলাদের বিরুদ্ধে নৃশংসতার উদাহরণ।’’
ভিডিয়ো বার্তায় রাজ্যে আইন শৃঙ্খলার অবনতির দায় সরকারকে নিতে হবে বলেও মন্তব্য করেছেন রাজ্যপাল। একইসঙ্গে তিনি অভিযোগ করেছেন বাংলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি নিয়ে। রাজ্যপাল বলেন, ‘‘ক্যাম্পাসে হিংসার বাতাবরণ বন্ধ হওয়া দরকার। বাংলার ক্যাম্পাসগুলি দুষ্কৃতীদের অবাধ বিচরণভূমি হয়ে উঠছে। গুন্ডারাজ শুরু হয়েছে সেখানে। সরকারকে এই পরিস্থিতির দায় নিতে হবে। সবাইকে একজোট হতে হবে মহিলা সুরক্ষার জন্য।’’