সংগঠনের যুক্তি ছিল, দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে পশ্চিমবঙ্গে অধ্যাপক সংগঠন হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে কাজ করছে তারা। ছবি: সংগৃহীত।
অবশেষে সঙ্ঘ অনুমোদিত অধ্যাপক সংগঠনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। রবিবার রাজভবনে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস) -এর অধ্যাপক সংগঠন ‘অখিল ভারতীয় রাষ্ট্রীয় শৈক্ষিক মহাসঙ্ঘ’ (এবিআরএসএম) অনুমোদিত সংগঠন জাতীয়তাবাদী অধ্যাপক ও গবেষক সঙ্ঘের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেছেন রাজ্যপাল। তাঁদের সঙ্গে আধ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে কথাও বলেছেন রাজ্যপাল বোস। অথচ প্রথমে ওই সংগঠনের তরফে রাজ্যপালের কাছে সময় চাওয়া হলে পাল্টা চিঠি দিয়ে তাঁদের সংগঠনের কাঠামো প্রসঙ্গে জানতে চেয়েছিল রাজভবন।
সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠ অধ্যাপক সংগঠনের কাঠামো প্রসঙ্গে রাজভবনের জানতে চাওয়ার খবর প্রকাশিত হয়েছিল আনন্দবাজার অনলাইনে। ঘটনাচক্রে, ৮ মে সেই খবর প্রকাশিত হওয়ার পরেই রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পেলেন ওই সংগঠনের সদস্যেরা।
রাজভবন থেকে পাঠানো চিঠিতে ওই অধ্যাপক সংগঠনকে বলা হয়েছিল তাঁদের সংগঠনের কাঠামো প্রসঙ্গে বিস্তারিত জানাতে। রাজভবনের চিঠি পাওয়ার পর ওই সংগঠন সিদ্ধান্ত নেয়, রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করার কারণে তারা তাদের সংগঠনের কাঠামো রাজভবনকে জানাবে না। সংগঠনের যুক্তি ছিল, দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে পশ্চিমবঙ্গে অধ্যাপক সংগঠন হিসাবে পশ্চিমবঙ্গের উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে কাজ করছে তারা। এমন একটি সংগঠনের কাঠামো নতুন করে রাজভবনকে জানানো তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। ২৩ এপ্রিল তারা রাজভবনকে চিঠি দিয়ে সাক্ষাতের আবেদন জানায়। ৩ মে রাজভবন থেকে পাল্টা চিঠি দিয়ে সংগঠনের কাঠামো জানাতে বলা হয়। সেই খবর প্রকাশিত হওয়ার পরেই সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠ অধ্যাপক সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সময় বরাদ্দ করে রাজভবন। রবিবারের সাক্ষাতের জন্য রাজভবনে আর আলাদা করে কোনও আবেদন করতে হয়নি বলেই জানিয়েছে অধ্যাপক সংগঠনটি।
রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাতের পর সন্তোষ প্রকাশ করেছে অধ্যাপক সংগঠন। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অনুপম বেরা বলেন, ‘‘আমরা আমাদের দাবির কথা মৌখিক ভাবে জানানোর পাশাপাশি লিখিত ভাবেও রাজ্যপালকে দিয়েছি। সার্চ কমিটির মারফত বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজ্যের শাসক দল নিজেদের কর্তৃত্ব কায়েম করতে চাইছে। তিন সদস্যের সার্চ কমিটিকে পাঁচ সদস্যের করা হয়েছে শুধুমাত্র উপাচার্য নিয়োগের বিষয়টি নিজেদের হাতে ধরে রাখতে। তথ্য সহকারে আমরা বিষয়টি রাজ্যপালের কাছে তুলে ধরেছি। বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।’’
তবে রাজভবনের সঙ্গে সাক্ষাৎ নিয়ে তৈরি বিতর্ক প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করতে চাননি ওই অধ্যাপক নেতা। উল্লেখ্য, তাঁদের মামলার ভিত্তিতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের নিয়োগের বিষয়ে গত মার্চ মাসের ১৪ তারিখে রায়দান করেছিল তৎকালীন প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব ও বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চ। সেই রায়ে বলা হয়েছিল, যে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের নিয়োগ ও পুর্ননিয়োগ এবং সময়সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছিল, তা সম্পূর্ণ বেআইনি। সঙ্গে রাজ্য সরকারের সেই সিদ্ধান্ত বাতিল বলেও ঘোষণা করেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। শীর্ষ আদালতের এমন নির্দেশের পরেই বিষয়টি নিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে কথা বলার বিষয়ে মনস্থির করেছিল অধ্যাপক সংগঠনটি। প্রথমে জটিলতা তৈরি হলেও রবিবার তাঁদের সেই উদ্যোগ অবশেষে সফল হয়েছে।