বনরক্ষকদের হাতে দেখা যাবে সেই অস্ত্রশস্ত্র।
রাজ্যের বন সম্পদ রক্ষায় এ বার আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র কেনার পরিকল্পনা করেছে রাজ্য বন দফতর। গত কয়েক মাসে জঙ্গলের গাছ অবৈধ ভাবে কাটা, তার আশপাশে থাকা পাথর কাটা ও বন্যপ্রাণ শিকারের ঘটনার অভিযোগ এসেছে বন দফতরের কাছে। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের জঙ্গল বা তার লাগোয়া নদীর তীরবর্তী এলাকা থেকে পাথর চুরির ঘটনা বেড়েই চলেছে। আর গাছ চুরির ঘটনা বেড়েছে রাঢ়বঙ্গ থেকে শুরু করে সুন্দরবনে। তাই বন দফতর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, জঙ্গলের ভিতরে অপরাধমূলক ঘটনায় রাশ টানতে এ বার নিজেরাই পরিকাঠামো তৈরি করবে। সেই লক্ষ্যে ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র কেনার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে।
আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই কোর এলাকার বনরক্ষকদের হাতে দেখা যাবে সেই অস্ত্রশস্ত্র। সেই তালিকায় থাকবে এসএলআর, একে ৫৬, একে ৪৭–এর মতো রাইফেল। বনের ভিতরে চোরাশিকারীদের উৎপাত থেকে শুরু করে অবৈধ কাঠ পাচার রুখতে বনরক্ষীরা এইসব অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করবেন। এই অস্ত্রশস্ত্র চালানোর জন্য বনরক্ষীদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে। এমনিতেই বনরক্ষার দায়িত্বে থাকা রক্ষীদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। কিন্তু সেগুলি খুবই পুরনো ধাঁচের। আর জঙ্গলের সম্পদ লুঠ করতে চোরাশিকারিরা ব্যবহার করেন অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র। এ ক্ষেত্রে তাদের উপযুক্ত পথে জবাব দিতে অস্ত্রশস্ত্র কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই কাজে বন দফতর মোট খরচ করবে ১৮ কোটি টাকা। খুব শীঘ্রই বন দফতর অস্ত্রশস্ত্র কেনার ব্যাপারে টেন্ডার ডাকতে চলেছে। বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের কথায়, “আমরা জঙ্গল থেকে পাথর চুরির খবর পাচ্ছি। সঙ্গে নানারকম অপরাধমূলক কার্যকলাপ চলছে বলে জেনেছি। তা রুখতেই আমরা আগ্নেয়াস্ত্রের কথা ভেবেছি। বনের ভিতর থেকে প্রায়শই পাচারকারীর হামলার খবর মেলে। আপাতত তাই পাহারা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ধীরে ধীরে প্রত্যেক পাহারাদারের হাতে তুলে দেওয়া হবে ওই আধুনিক অস্ত্র।"
অস্ত্রশস্ত্র ছাড়াও বনরক্ষীরা যাতে দ্রুত অপরাধীদের কাছে পৌঁছতে পারেন সেই কারণে দুই ধরনের জিপ কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। জঙ্গলের বন্ধুর পথে চলতে সহায়ক বেশ কিছু জিপ কেনা হচ্ছে। কেনা হচ্ছে ৩০০টি মোটর বাইক। মূলত উত্তরবঙ্গ ও সুন্দরবনের কোর এলাকায় অস্ত্রশস্ত্র-সহ এই গাড়িগুলি ব্যবহার করা হবে। বনের অন্দরের থাকা গাছ কাটা ও পাথর পাচারের ফলে ইকোসিস্টেম ব্যাহত হচ্ছে বলেই জানাচ্ছেন বন দফতরের এক কর্তা। তাঁর কথায়, "অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র কেনার সিদ্ধান্ত ভাবনা-চিন্তা করে নেওয়া হয়েছে। জঙ্গলের প্রতিটি বাঁক, প্রতিটি পাথর, প্রতিটি ধাপের গাছ জঙ্গলের ভারসাম্য রক্ষার জন্য জরুরি। একই ভাবে প্রয়োজনীয় তার প্রাণীরাও। তাদের জীবনও চলে একটি শৃঙ্খলে। এর একটির অভাব হয়ে গেলেই নষ্ট হতে শুরু করে বাস্তুতন্ত্র। তাই সবদিক ভেবে এই পদক্ষেপ করছে বন দফতর।"