সুন্দরবনের গ্রাম লাগোয়া বনে দেওয়া হতে পারে স্থায়ী ফেন্সিং। ফাইল চিত্র।
সুন্দরবন বনাঞ্চল লাগোয়া গ্রামে বাঘের প্রবেশ রুখতে চায় বন দফতর। তাই গ্রাম লাগোয়া সুন্দরবনে স্থায়ী বে়ড়া দেওয়ার ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে তারা। যদিওসুন্দরবন জৈব সংরক্ষণ অঞ্চলের অর্ন্তগত দু’টি ক্ষেত্র রয়েছে। প্রথমটি সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প, দ্বিতীয়টি দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভাগীয় বনাঞ্চল। দু’টি ক্ষেত্রের মধ্যেদক্ষিণ ২৪ পরগনা বিভাগে প্রায় ১১০ কিলোমিটার গ্রাম লাগোয়া জঙ্গল রয়েছে। যার মধ্যে ৫০ কিলোমিটার জালের বেড়া দেওয়া রয়েছে। আর ব্যাঘ্র প্রকল্পেপ্রায় ১০৫ কিলোমিটার বনলাগোয়া এলাকা রয়েছে। সেখানে আবার পুরোটাই জালের বেড়া দেওয়া।
প্রায়শই প্রাকৃতিক দুর্যোগে সেই জালের বেড়া ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। আর সেই সুযোগে বার বার লোকালয়ে এসে পড়ে বাঘ। সেই সমস্যা দূর করতে চান বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তিনি সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভাগীয় বনাঞ্চলে দিতে চান স্থায়ী ও পাকাপোক্ত বেড়া। রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার যাতে কোনওভাবেই ভাঙা বেড়ার সুযোগে লোকালয়ে প্রবেশ না করতে পারে, সে বিষয়ে মন্ত্রীর ভাবনায় একটি প্রস্তাবও তৈরি করেছে বন দফতর। সেই প্রস্তাব কার্যকর করতে বিপুল অর্থের প্রয়োজন। তাই বিকল্প পথ হিসাবে জাপানি সংস্থা ‘জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেটিভ এজেন্সি’(জাইকা)-কে সেই প্রস্তাবটি পাঠিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ বন দফতর। জাপানি এই সংস্থাটি বিশ্ব উষ্ণায়ন রোখা-সহ বন্যপ্রাণ রক্ষার ক্ষেত্রে আর্থিক সাহায্যকরে থাকে। সেকথা মাথায় রেখেই এই প্রস্তাব গিয়েছে জাপানিওই সংস্থার কাছে। বন দফতর সূত্রে খবর, ৪৭৮ কোটি টাকা খরচ হবে এই স্থায়ী বেড়া দিতে। বনের আইন মেনে বেড়া দেওয়ার কাজে কোনও কংক্রিটের নির্মাণ করা হবে না বলে জানিয়েছে বন দফতর।
সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের ক্ষেত্র অধিকর্তা (ফিল্ড ডিরেক্টর) তাপস দাস বলেন, ‘‘আমাদের এলাকায় ১০৫ কিলোমিটার গ্রাম লাগোয়া জঙ্গল রয়েছে। পুরোটাই বাঁশের খুঁটি ও নাইলনের জালে ঘেরা। মাঝে মাঝে প্রাকৃতিক দুর্যোগে তা ক্ষতিগ্রস্থ হয়।’’বন দফতর সূত্র জানা গিয়েছে, ঘন ঘন জালের বেড়ার ক্ষতি আটকাতেই বনমন্ত্রী স্থায়ী বেড়া বসানোর পক্ষে। গত মে মাসে ইয়াসের দাপটে জালের বেড়া অনেকটাই ছিঁড়ে গিয়েছে। বার বার জাল ছিঁড়ে যাওয়ায় যেমন বন লাগোয়া গ্রামীণ এলাকায় বাড়ছে বাঘের উপদ্রব, তেমনই জাল ঠিক করতেও অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে বন দফতরের। তাই এ বিষয়ে পাকাপাকি কাজ করতে চান বনমন্ত্রী। তবে যে সমস্ত বনে বাঘের আনাগোনা বেশি, সেই সব বনে বেড়া দেওয়া হবে না বলেই জানা গিয়েছে। জ্যোতিপ্রিয় বলেছেন, ‘‘পৃথিবীতে সুন্দরবনের বাঘই একমাত্র নোনাজল পান করে। তাই আমরা বাছাই করা বেশকিছু জঙ্গলে বেড়া দেব না। যাতে বাঘেরা নদীতে এসে জলপান করতে পারেন।’’