পোড়া বাড়ির সামনে পুলিশি পাহারা। নিজস্ব চিত্র
কাঁথি শহরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভার আগের রাতে বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছিল কাঁথি মহকুমারই ভগবানপুর-২ ব্লকের অর্জুননগর পঞ্চায়েতের অন্তর্গত নাড়ুয়াবিলা গ্রাম। তৃণমূলের বুথ সভাপতি রাজকুমার মান্নার বাড়িতে ওই বিস্ফোরণে মৃত্যু হয়েছে রাজকুমার-সহ তিন জনের। তবে ঘটনার পরে ৪৮ ঘণ্টা পেরোলেও ধোঁয়াশা কাটেনি। ঠিক কী থেকে এই বিস্ফোরণ, রবিবারেও তা স্পষ্ট হয়নি। এলাকায় পৌঁছয়নি ফরেন্সিক দল। শনিবার দীর্ঘ সময় বিস্ফোরণ স্থল কার্যত অরক্ষিত ছিল বলেও অভিযোগ।
রবিবার সকালে অবশ্য রাজকুমারের পোড়া বাড়ির সামনে পুলিশ পিকেট বসেছে। এ দিন তিন জনের দেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে তমলুক জেলা হাসপাতালে। ঘটনার পরে বিজেপির অভিযোগ ছিল, বোমা বাঁধতে গিয়েই এই বিস্ফোরণ হয়েছে। তবে তৃণমূলের তরফে বাজি ফেটে বিপত্তির দাবি করা হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, মৃত রাজকুমারের স্ত্রী লতিকারানি মান্নাও লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, নিষেধ সত্ত্বেও তাঁর স্বামী বাড়িতে বেআইনি ভাবে বাজি তৈরি করতেন। বিস্ফোরণে মৃত বিশ্বজিৎ গায়েনের বাবা ক্ষুদিরাম গায়েনের যদিও দাবি, ‘‘ঘটনার দিন ছেলে রাজকুমারের বাড়িতে গিয়েছিল। মনে হয় বাইরে থেকে কেউ বড়সড় আক্রমণ করেছে।’’
পুলিশ লিখিত অভিযোগেই গুরুত্ব দিচ্ছে। কাঁথির এসডিপিও সোমনাথ সাহা বলেন, ‘‘রাজকুমার মান্নার স্ত্রী-র অভিযোগের ভিত্তিতে আশেপাশের লোকেদের প্রাথমিক ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সোমবার এলাকায় ডগ স্কোয়াড এবং বিশেষ বাহিনী নামিয়ে তল্লাশি করা হবে।’’
কিন্তু শুক্রবার বিস্ফোরণের পরে এতটা সময় নষ্ট হওয়ায় তল্লাশিতে আদৌ কিছু মিলবে কি না, সংশয় থাকছে। স্থানীয় সূত্রে খবর, শুক্রবার রাতে বিস্ফোরণের পরে শনিবার গোটা এলাকায় পুলিশ প্রহরা ছিল না। বিস্ফোরণস্থল রাজকুমারের বাড়ির চারদিকে, এমনকি ভেতরে ঢুকে ঘোরাঘুরিও করেছেন অনেকে। ফলে, তথ্য প্রমাণ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ঘটনায় সরব হয়েছে বিরোধীরা। এ দিন বিকেলে কংগ্রেসের জেলা সভাপতি মানস কর মহাপাত্রের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ওই গ্রামে যায়। বিজেপির তরফে ভূপতিনগর থানার সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি চলে। স্থানীয় বিজেপি বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ মাইতির অভিযোগ, ‘‘শনিবার রাতে শাসক দলের বাইক বাহিনী গিয়ে বিস্ফোরণস্থল থেকে নমুনা লোপাট করেছে। পুলিশকে সব জানিয়েছি।’’ খড়্গপুরে বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ আবার অভিষেককে নিশানা করে বলেন, “আপনার নেতারা বাড়িতে বোমা-বন্দুক মজুত করবে, বোমা ফাটবে। রোজ বিস্ফোরণ হচ্ছে। মরছে ওঁদেরই লোক। এ ভাবে নির্বাচন জিততে চাইছে! উনি আবার বলছেন শান্তিপূর্ণ ভোট হবে!” সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হিমাংশু দাসের আবার দাবি, ‘‘ভূপতিনগরের পাশাপাশি গোটা জেলায় বোমা এবং অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে।’’
রাজ্যের মন্ত্রী তথা জেলার বিধায়ক অখিল গিরি পাল্টা বলছেন, ‘‘বোমা বাঁধার সময় বিস্ফোরণের যে অভিযোগ বিরোধীরা করছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। মৃতের স্ত্রী-র অভিযোগের তদন্ত করলেই প্রকৃত ঘটনা সামনে আসবে।’’