আগামী দু’মাসের মধ্যে শেষ হবে ক্ষতিপূরণের মেয়াদ। প্রতীকী চিত্র।
আগামী দু’মাসের মাথায় জিএসটি ক্ষতিপূরণের মেয়াদ শেষ হতে চলেছে। অথচ এখনও পর্যন্ত জিএসটি কাউন্সিলের কোনও বৈঠক ডাকা হয়নি বলে রাজ্য অর্থ দফতরের দাবি। তাই ক্ষতিপূরণের মেয়াদবৃদ্ধি আদৌ হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হচ্ছে রাজ্যের অর্থ দফতরের কর্তাদের মধ্যে। বাড়ছে নানা উদ্বেগও। এরই মধ্যে আগামিকাল, সোমবার জিএসটি মন্ত্রিগোষ্ঠীর বৈঠক হতে চলেছে। তাতে যোগ দেবে এ রাজ্য।
অর্থ দফতরের খবর, দিল্লিতে মন্ত্রিগোষ্ঠীর বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী। ভার্চুয়াল মাধ্যমেও থাকতে পারবেন বাকি সদস্যরা। এখনও পর্যন্ত স্থির রয়েছে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ওই বৈঠকে থাকবেন। তবে বৈঠকটি হবে ঘোড়দৌড় (হর্স রেস), ক্যাসিনো এবং অনলাইন-গেম সংক্রান্ত বিষয়ের করকাঠামো নিয়ে। তাই সেই বৈঠকের বিষয়বস্তুতে জিএসটি ক্ষতিপূরণের মেয়াদবৃদ্ধি নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা নয়।
অর্থ দফতরের কর্তাদের দাবি, ২০২০-২১ এবং ২০২১-২২ (ফেব্রুয়ারি ২০২২) অর্থবর্ষ পর্যন্ত জিএসটি ক্ষতিপূরণের খাতে কেন্দ্রের কাছে বকেয়া রয়েছে প্রায় ৬৩৭৫ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে রাজ্যের। সেই বকেয়া কেন্দ্র দ্রুত মিটিয়ে দেবে বলে আশা সংশ্লিষ্ট মহলের। তবে এই ক্ষতিপূরণ পদ্ধতি জুন মাসের পরে কার্যকর থাকবে কিনা, সেটাই প্রশ্ন। ২০১৭ সালে জিএসটি চালু হওয়ার পরে স্থির হয়েছিল, এই খাতে রাজস্ব আদায় নির্ধারিত পরিমাণের থেকে কম হলে ক্ষতির সম পরিমাণ অর্থ ক্ষতিপূরণ হিসেবে রাজ্যগুলিকে দেবে কেন্দ্র। পাঁচ বছর পর্যন্ত এই সুবিধা কার্যকর থাকবে। সেই হিসেবে আগামী জুন মাসে ওই মেয়াদ শেষ হচ্ছে।
রাজ্যের দাবি ছিল, কোভিডের ধাক্কা এবং আর্থিক মন্দার পরিস্থিতি কেউ আগে থেকে কল্পনা করতে পারেনি। অথচ, পাঁচ বছরের মধ্যে প্রায় অর্ধেক সময়েই এই দুই প্রতিকূল পরিস্থিতির মোকাবিলা করতেই চলে গিয়েছে। ধাক্কা খেয়েছে রাজস্ব আদায়ও। কোভিডের পরে এখনও অর্থনীতি পুরোপুরি চাঙ্গা হয়নি। তাই এই খাতে ক্ষতি হলে জুন মাসের পরে ক্ষতিপূরণ কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে অর্থ দফতরের কর্তাদের অনেকের। রাজ্যের অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘আর্থিক মন্দার পরিস্থিতি কেউ তো কল্পনা করতে পারেননি। তাই আমাদের দাবি ছিল, আরও কিছু দিন জিএসটি ক্ষতিপূরণের মেয়াদ বাড়ানো হোক। কিন্তু কেন্দ্রের থেকে এ নিয়ে কোনও বার্তা এখনও না-আসায় সন্দেহ বাড়ছে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আর্থিক পরিস্থিতি শুধরোতে অর্থ জোগানের পদ্ধতি হিসেবে যে ভাবে ঋণের দিকে কেন্দ্র ঠেলে দিচ্ছে, তাতে সন্দেহ আরও বাড়ছে। এতে রাজ্য আরও ঋণগ্রস্ত হতে পড়বে। তা শোধ করার চাপও বেশি হবে।’’
অর্থ দফতরের একাংশের বক্তব্য, দেশে জিডিপি ৯ শতাংশের আশেপাশে অনুমান করা হচ্ছে। রাজ্যের জিএসডিপি ১২ শতাংশ ছাপিয়ে যেতে পারে। কিন্তু রাজ্যের উপর খরচের বোঝাও বিপুল। এই অবস্থায় জিএসটি থেকে কাঙ্খিত আয় না-হলে এবং তাতে ক্ষতিপূরণও না-পাওয়া গেলে সমস্যা বাড়তে পারে। তাই কেন্দ্রীয় অনুদান, প্রকল্পে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ, রাজস্ব আদায়ের সঙ্গে এই জিএসটি ক্ষতিপূরণের দিকেও সতর্ক নজর রাখতে চাইছে রাজ্য।