West Bengal Panchayat Election 2023

ভাড়া বাড়ল না, পঞ্চায়েত ভোটের কাজে বেসরকারি গাড়ি ভাড়া নিয়ে কাজ শুরু করল কমিশন

২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ভাড়া গাড়িগুলিকে যে দরে মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের অফিস ভাড়া নিয়েছিল, সেই দরেই ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটে ভাড়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০২৩ ১২:৫৭
Share:

গত বিধানসভা নির্বাচনের সময়ের দরেই এ বারের পঞ্চায়েত ভোটে গাড়ি ভাড়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। — ফাইল চিত্র।

পরিবহণ সংগঠনগুলির বাস ভাড়া বাড়ানো-সহ বেশ কয়েকটি দাবি না মেনে পঞ্চায়েত ভোটের কাজের জন্য বেসরকারি গাড়ি ভাড়া নিয়ে কাজ শুরু করে দিল পশ্চিমবঙ্গ নির্বাচন কমিশন। আর এমন ঘটনা ঘটায় পরিবহণ দফতর এবং নির্বাচন কমিশনের উপরে বেজায় ক্ষুব্ধ বেসরকারি পরিবহণ সংগঠনের নেতারা। যে কোনও ধরনের নির্বাচনের কাজে কমিশনকে ভোটের কাজের জন্য গাড়ি ভাড়া করে দেয় পরিবহণ দফতর। তাই বেসরকারি পরিবহণ সংগঠনগুলি ভোটের কাজে গাড়ি ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে নিজেদের দাবিগুলির কথা কমিশনের পাশাপাশি পরিবহণ দফতরকেও জানিয়েছিল। গত এপ্রিল মাসে এই সংক্রান্ত বিষয়ে পরিবহণ দফতরে একটি ডেপুটেশন জমা দিয়েছিল ‘জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেট’। সেই ডেপুটেশনে মোট ৭টি দাবির উল্লেখ করা হয়েছিল। সে ক্ষেত্রে দৈনিক বাস ভাড়া সাড়ে ৩ হাজার টাকা করার দাবি জানানো হয়েছিল। পাশাপাশি প্রতি দিন বাসের ৩ জন করে শ্রমিককে ৩০০ টাকা করে খোরাকি দেওয়ার আবেদন করেছিল বাস সিন্ডিকেট। সঙ্গে বলা হয়েছিল নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকাকালীন ডিজেল এবং মোবিল সরবরাহের দায়িত্ব নিতে হবে রাজ্য সরকারকে। বাস ভাড়ার ৭৫ শতাংশ অগ্রিম দিতে হবে। ভোট প্রক্রিয়ার জন্য নিতে গেলে ১৫ দিনের মধ্যে বাকি বকেয়া মিটিয়ে দিতে হবে।

Advertisement

আবার গত মে মাসে ‘জয়েন্ট ফোরাম অফ ট্রান্সপোর্ট অপারেটরস’ নামে একটি মঞ্চের ছাতার তলায় পরিবহণ পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত পাঁচটি সংগঠন নিজেদের দাবির কথা জানিয়ে পরিবহণ দফতর এবং নির্বাচন কমিশনকে চিঠিটি পাঠায়। তাতে বলা হয়, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ভাড়া গাড়িগুলিকে যে দরে মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের অফিস ভাড়া নিয়েছিল, সেই দরেই ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটে ভাড়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গত কয়েক বছরে বাস মিনিবাস এবং বিভিন্ন ছোট যাত্রিবাহী গাড়ি চালানোর খরচ ৬৭ থেকে ৭০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে। ডিজেল, টায়ার, লিউব্রিকেন্টস, গাড়ির যন্ত্রাংশ, বিমা এবং গাড়ি চালানোর মজুরি— সব কিছুই সরকারি নির্দেশিকায় কম করে দেখানো হয়েছে। তাই পঞ্চায়েত ভোটে ভাড়া নেওয়া গাড়িগুলির খরচ চলতি সময়কে মাথায় রেখে দেখা উচিত বলেই জানিয়েছে বেসরকারি পরিবহণ সংগঠনগুলি। গাড়ি ভাড়া বাড়ানোর পাশাপাশি গাড়ির চালক এবং খালাসিদের খাওয়ার খরচ এবং খোরাকি বৃদ্ধির আবেদন জানানো হয়েছে।

দিনপিছু সাধারণ বাসের ভাড়া ২৩০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৫০০ টাকা করার দাবি জানানো হয়েছিল। মিনি বাসের ভাড়া ১৯০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০০ টাকা করতে বলা হয়েছিল। নন এসি ট্যাক্সির ভাড়া ৮১০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১২০০ টাকা করতে বলা হয়েছিল। এসি ট্যাক্সির ভাড়া ১১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৬০০ টাকা করতে বলা হয়েছিল। খোরাকি এবং টিফিনের খরচ ১৭০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০০ টাকা করার দাবি জানানো হয়েছিল। এই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছিলেন অল বেঙ্গল মিনি বাস সমন্বয় সমিতির রাহুল চট্টোপাধ্যায়, অনলাইন ক্যাব অপারেটর গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক ইন্দ্রনীল বন্দ্যোপাধ্যায়, সিটি সাবারবান বাস সার্ভিসেসের সাধারণ সম্পাদক টিটু সাহা, নর্থ বেঙ্গল প্যাসেঞ্জার্স ট্রান্সপোর্ট অপারেটর কো-অর্ডি়নেশন কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রণব মানি এবং পুলকার অনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সুদীপ দত্ত।

Advertisement

আগামী ৮ জুলাই পঞ্চায়েত ভোট। সেই কারণে ভোটের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন নির্বাচন কমিশন। তাই সেই কাজে বেসরকারি গাড়ি ভাড়া নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছে তারা। এ ক্ষেত্রে পরিবহণ দফতর এবং কমিশনের বিরুদ্ধে পরিবহণ সংগঠনগুলির অভিযোগ, তাদের দাবিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে একতরফা ভাবে পুরনো ভাড়া বহাল রাখা হয়েছে। অনলাইন ক্যাব অপারেটর গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক ইন্দ্রনীল অভিযোগের সুরে বলেন, ‘‘আমাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে পরিবহণ দফতর বা নির্বাচন কমিশন আমাদের সঙ্গে আলোচনা করারও প্রয়োজন বোধ করেনি। বরং আমাদের সঙ্গে কোনও রকম আলোচনা ছাড়াই পুরনো ভাড়ায় বলপূর্বক রাস্তা থেকে গাড়ি তুলে নেওয়া হচ্ছে। আমরা চেয়েছিলাম সহমতের ভিত্তিতে গাড়ি ভাড়া নেওয়া হোক। কিন্তু এই কাজে পরিবহণ দফতর বা নির্বাচন কমিশন কেউই আমাদের কথায় কান দেয়নি। যদি আমাদের দাবিগুলি যত্ন সহকারে ভেবে দেখা হত, তা হলে ভোটের কাজে গাড়ি ভাড়া নিতে রাস্তায় ধরপাকড় চালাতে হত না।’’ আর জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটের তপন বলেন, ‘‘এপ্রিল মাসে চিঠি দেওয়ার পর আমরা আবারও ১৩ জুন পরিবহণ মন্ত্রী এবং পরিবহণ সচিবকে এই সংক্রান্ত বিষয়ে নিজেদের দাবির কথা জানিয়েছিলাম। গাড়ি ভাড়া কেন বাড়ানো উচিত, শ্রমিকদের খোরাকি কেন বৃদ্ধি করা উচিত— সেই সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছিলাম আমরা। কিন্তু নির্বাচনের দোরগোড়া এসে দেখলাম আমাদের সমস্যার সমাধান হয়নি। কমিশন এবং পরিবহণ দফতর নিজেদের সিদ্ধান্ত বেসরকারি বাস মালিকদের উপর চাপিয়ে দিয়েছে। পরিস্থিতি দেখে এমনটাই বলতে পারি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement