RG Kar Protest In Government Hospital

রাজ্য জুড়ে জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি, কোথাও প্রভাব পড়ল, কোথাও স্বাভাবিক পরিষেবা

আন্দোলনে নেমেছেন কলকাতার সমস্ত সরকারি হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র চিকিৎসকেরা। রবিবার থেকে বন্ধ হয়েছে আপৎকালীন বিভাগের পরিষেবাও। তার প্রভাব পড়েছে জেলার সরকারি হাসপাতালেও।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০২৪ ১১:৫১
Share:

গ্রাফিক— সনৎ সিংহ

আরজি কর নিয়ে কলকাতার প্রায় সমস্ত সরকারি মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালেই আন্দোলনে নেমেছেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। সেই আন্দোলনের বিক্ষিপ্ত প্রভাব পড়ছে জেলার কিছু কিছু সরকারি হাসপাতালেও। বেশ কয়েকটি মেডিক্যাল কলেজ এবং সরকারে হাসপাতালে চিকিৎসকেরা কর্মবিরতির ডাক দেওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে রোগী পরিষেবা। তবে এমন সরকারি হাসপাতালও রয়েছে, যেখানে এই আন্দোলনের বিন্দুমাত্র প্রভাব পড়েনি রোগীদের চিকিৎসায়।

Advertisement

শুক্রবার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের এক মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ ওঠে হাসপাতালের চার তলার সেমিনার হলে। তার পর থেকেই প্রতিবাদ আন্দোলনে নেমেছে কলকাতার সমস্ত সরকারি হাসপাতাল এবং মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র চিকিৎসকেরা। রবিবার থেকে খাতায় কলমে আপৎকালীন বিভাগের পরিষেবাও বন্ধ করেছেন তাঁরা। এনআরএস, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, আরজি করে সোমবারও যা চলছে। চিকিৎসকেরা জানিয়ে দিয়েছেন, নিরাপদ বোধ করছে না বলেই কাজে যোগ দিচ্ছেন না। তবে একই সঙ্গে তাঁরা জানিয়েছেন জোর করে কোনও পরিষেবা বন্ধ করা হয়নি। তবে আন্দোলনকারী ডাক্তারেরা কাজে যোগ দেননি। তাঁরা জানিয়েছেন, তাঁদের চার দফা দাবি না মানা হলে আন্দোলন চলবে। যে আন্দোলনে দেশ এবং রাজ্যের চিকিৎসকদেরও শামিল হওয়ার ডাকও দিয়েছেন তাঁরা। তার পরেই সোমবার সপ্তাহের শুরুর দিন সকাল থেকে জেলায় জেলায় মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালগুলিতে শুরু হয়েছে জুনিয়র চিকিৎসকদের প্রতিবাদ কর্মসূচি। যার জেরে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ রোগীদের।

মালদহ

Advertisement

মালদহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শুরু হয়েছে এন্ট্রান্স জুনিয়র ডাক্তারদের ‘পেন ডাউন’ কর্মসূচি। তবে জুনিয়র চিকিৎসকেরা জানিয়ে দিয়েছেন, হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, মাতৃমা বিভাগের কাজ এবং জরুরি পরিষেবা ছাড়া অন্যান্য জায়গায় তাঁরা কর্মবিরতি পালন করবেন। কিন্তু পরিস্থিতি জটিল হয় এক হৃদ্‌‌‌রোগে আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হওয়ায়। রবিবার দুপুর বারোটার সময় মালদহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন নজরুল মোমিন (৫৫)। সোমবার সকালে মৃত্যু হয় তাঁর। আত্মীয়দের অভিযোগ, বিকেল চারটের পর কোনও ডাক্তার তাঁকে দেখতে আসেননি। চিকিৎসার অভাবেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর।

উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা

বারুইপুর মহকুমা হাসপাতাল এবং সোনারপুর গ্রামীণ হাসপাতালেও বন্ধ বহির্বিভাগ বা আউটপেশেন্ট ডিপার্টমেন্টের চিকিৎসা পরিষেবা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা রোগীরা লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেও চিকিৎসকের পরামর্শ পাননি। অন্য দিকে, মহকুমা হাসপাতালেও জরুরি বিভাগ সামলানোর দায়িত্বে রয়েছেন একজন মাত্র চিকিৎসক। রোগীর ভিড় সামলাতে হিমসিম খাচ্ছেন তিনি। যথাযথ পরিষেবা পাচ্ছেন না সঙ্কটাপন্ন রোগীরাও। উত্তর ২৪ পরগনার সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালেও কর্মবিরতি পালন করছেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। ওই হাসপাতালেও বহির্বিভাগ সম্পূর্ণ বন্ধ রাখা হয়েছে। অন্য দিকে, জরুরি বিভাগে রয়েছেন কেবল এক জন সিনিয়র চিকিৎসক। সেখানে কোনও জুনিয়র চিকিৎসককে দেখা যায়নি বলে অভিযোগ করেছে রোগীদের পরিবার।

হুগলি ও হাওড়া

হুগলির ইমামবারা জেলা হাসপাতাল এবং আরামবাগ মেডিক্যাল কলেজে পরিষেবা স্বাভাবিক। আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে রবিবার ওই দুই হাসপাতালের চিকিৎসক এবং চিকিৎসা কর্মীরা কালো ব্যাজ পরে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। সোমবার বিকেল ৫টায় হাওড়া এবং হুগলির চিকিৎসকেরা মিলিত ভাবে একটি অরাজনৈতিক মিছিল করবেন। উত্তরপাড়ার শখের বাজারে মহামায়া হাসপাতালের সামনে থেকে শুরু করে জিটি রোড দিয়ে এই পদযাত্রা গিয়ে শেষ হবে বালি শ্রীকৃষ্ণ সিনেমার সামনে। এ ছাড়া ভদ্রেশ্বর বাবুবাজার থেকে চন্দননগর স্ট্যান্ড পর্যন্ত মোমবাতি নিয়ে একটি মিছিল হবে। আরামবাগেও একটি প্রতিবাদ মিছিল করবে যুব ফেডারেশন। অন্য দিকে, আর জি করের ঘটনার প্রতিবাদে হাওড়ার মহেশ ভট্টাচার্য হোমিওপ্যাথি কলেজে জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি চলছে সোমবার সকাল থেকে। বন্ধ করা হয়েছে বহির্বিভাগের পরিষেবা। ডাক্তাররা কলেজের গেটের সামনে অবস্থান করলেও জরুরি পরিষেবা চলছে

উত্তরবঙ্গ

উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তারেরা সোমবারও বিক্ষোভ অবস্থান চালিয়েছেন। সোমবার মেডিক্যাল কলেজের জরুরি বিভাগের সামনে হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে অবস্থান বিক্ষোভে বসেন তাঁরা। বহির্বিভাগ বন্ধ না থাকলেও সেখানে রোগী পরিষেবায় কিছুটা সমস্যা রয়েছে। সিনিয়র চিকিৎসকেরাই বহির্বিভাগ এবং জরুরিবিভাগ সামলাচ্ছেন। তবে জরুরি বিভাগের সামনে অবস্থান করলেও রোগীদের যাতে সমস্যা না হয়, সে দিকে নজর রেখেছেন প্রতিবাদী চিকিৎসকেরা। কোচবিহার মেডিক্যাল কলেজেও বন্ধ রয়েছে বহির্বিভাগ। কলেজের ছাত্রছাত্রীরা বহির্বিভাগের টিকিট কাউন্টারের গ্রিল আটকে রেখেছেন। ফলে চিকিৎসার জন্য এসেও ফিরে যেতে হচ্ছে হাজার হাজার রোগীকে।

বসিরহাট

বসিরহাট সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে আরজি করের আন্দোলনের কোনও প্রভাব পড়েনি। জরুরি বিভাগে রোগীরা যথাযথ পরিষেবা পাচ্ছেন, বহির্বিভাগেও চিকিৎসকেরা সময় মতো রোগী দেখছেন। হাসপাতালে যাঁরা ভর্তি রয়েছেন, তাঁদেরও স্বাভাবিক নিয়মে চিকিৎসা চলছে বলে জানিয়েছে রোগীদের পরিবার।

মেদিনীপুর

পূর্ব মেদিনীপুরের তাম্রলিপ্ত মেডিক্যাল কলেজে বিক্ষোভ অবরোধের কোনও খবর নেই। কাঁথি, এগরা, হলদিয়া মহকুমা হাসপাতালেও কাজকর্ম স্বাভাবিক রয়েছে বলেই জানিয়েছেন রোগীরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement