— নিজস্ব চিত্র।
সশস্ত্র কেন্দ্রীয় বাহিনী হাজির। ইডি কর্তাদের একটি দল তখনও তল্লাশি চালাচ্ছে সন্দেশখালির এক ইটভাঁটার ভিতরে। আচমকাই খবরটা এল !
বাইরে গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন মণীশ (নাম পরিবর্তিত)। তাঁর গাড়িতেই কলকাতা থেকে তল্লাশি অভিযানে সন্দেশখালিতে এসেছে ইডির একটি দল। মণীশ দেখলেন, ইটভাঁটার ভিতর থেকে তড়িঘড়ি বেরিয়ে আসছেন ইডি আধিকারিকেরা। মুখেচোখে উদ্বেগ, গাড়ির কাছে দৌড়ে এসে তাঁরা বললেন, ‘‘এখনই বেরোতে হবে এলাকা ছেড়ে। যে ভাবে হোক।’’
শুক্রবার সকালে ঠিক সেই সময়ে ইডি আধিকারিকদের আরও একটি দল তল্লাশি অভিযানে গিয়েছে সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখের বাড়িতে। সেখানে গ্রামের মানুষেরা ঘিরে ধরে মারধর করেন ইডি অফিসারদের দলটিকে। কিন্তু ইটভাঁটাটি সেখান থেকে কিছুটা দূরে হওয়ায় সেই খবর তখনও এসে পৌঁছয়নি সন্দেশখালিতে ইডির দ্বিতীয় দলটির কাছে। তাঁরা জানেন না ঠিক কী হয়েছে? কেনই বা এলাকা ছেড়ে দ্রুত বেরোতে হবে তাঁদের! সত্যি বলতে এত বছরের গাড়ি চালানোর অভিজ্ঞতায় এ জিনিস কখনও হয়নি মণীশের সঙ্গে।
৩০ বছরের যুবক মণীশ। ঝাড়খণ্ডে বাড়ি হলেও কলকাতায় স্বাধীন ভাবে গাড়ি চালান। সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্স থেকে প্রায়শই ডাক আসে তাঁর। ইডি কর্তাদের তল্লাশি অভিযানে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আগেও বহু বার তিনি সঙ্গী হয়েছেন ইডি কর্তাদের তল্লাশি অভিযানের। কিন্তু এমন অভিজ্ঞতা প্রথম।
সেই মণীশই জানিয়েছেন শুক্রবার সন্দেশখালিতে হওয়া তাঁর অভিজ্ঞতার কথা। আনন্দবাজার অনলাইনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মণীশ বলেছেন, ‘‘কয়েক জন ইডি কর্তা এবং কেন্দ্রীয়বাহিনীর জওয়ান হুড়মুড়িয়ে উঠে পড়লেন গাড়িতে। আমিও ছুটিয়ে দিলাম গাড়ি।’’ কিছুটা এগোতেই মণীশের কাছে স্পষ্ট হতে শুরু করল ছবিটা। তাঁর কথায়, ‘‘আসার সময় দেখি, রাস্তার উপর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে আমাদের সঙ্গে আসা গাড়িগুলো। প্রত্যেকটিতে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। আগুনও জ্বলছে একটা জায়গায়। রাস্তাঘাটে ভিড় করে রয়েছেন প্রচুর লোকজন। বুঝতে পারছিলাম গন্ডগোল বড় রকমের। আমাদের চিনতে পারলে বিপদ বাড়তে পারে।’’
গাড়ির ভিতরে ইডির অফিসারেরা। মণীশ বুঝতে পারছিলেন তাঁদের নিরাপত্তা এখন তাঁরই হাতে। একই সঙ্গে তাঁর নিজের নিরাপত্তার কথা ভেবেও আতঙ্ক হচ্ছিল। মণীশ বলেছেন, ‘‘বুঝতে পারছিলাম, নিজে বেঁচে অফিসারদের বাঁচিয়ে যে ভাবে হোক বেরোতে হবে এখান থেকে। আর সেটা করতে হবে লুকিয়ে। নিজেদের পরিচয় বুঝতে না দিয়ে দ্রুত বেরিয়ে আসতে হবে। আমি গাড়ির গতি যতটা সম্ভব বাড়িয়ে দিই।’’
মণীশ বলেছেন, ‘‘একটা সময়ে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার কিংবা তারও বেশি গতিবেগে গাড়ি চালিয়েছি। কিন্তু পিছন ফিরে তাকাইনি। মনে হচ্ছিল সেটা করলেও গাড়ির গতি কমে আসতে পারে।’’
আনন্দবাজার অনলাইন তাঁকে প্রশ্ন করেছিল, তা হলে কোথায় এসে দম নিলেন? উত্তরে মণীশ বলেন, ‘‘একেবারে সল্টলেকে এসেই থেমেছি। তার আগে শুধু সামনে তাকিয়ে গাড়ি চালিয়ে গিয়েছি।’’ পথেই খবর আসে এক ইডি অফিসার গুরুতর জখম হয়েছেন, তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ইডির আধিকারিকদের নিয়ে সোজা সল্টলেকের সেই হাসপাতালেই পৌঁছন মণীশ।
এমন অভিজ্ঞতার পর কি আর কখনও ইডির ডাকে গাড়ি নিয়ে যাবেন? মণীশকে প্রশ্ন করেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। শুনে ৩০ বছরের তরুণের জবাব, ‘‘কেন যাব না’’! মণীশ জানিয়েছেন, ইডি কর্তারা ডাকলে এবং প্রয়োজন হলে আবার সিজিও কমপ্লেক্সের নীচে গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করবেন তিনি।