ধৃত গাড়িচালক অর্ণব।
পথ দুর্ঘটনায় ‘দোহার’-এর প্রধান গায়ক কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্যের মৃত্যুর তদন্তে নেমে গাড়ির চালক অর্ণব রাওকে গ্রেফতার করল পুলিশ। রবিবার রাতে কলকাতার কসবা থানা এলাকার বোসপুকুর রোড থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। গত শনিবার গুড়াপ থানায় জোরে গাড়ি চালানোর অভিযোগে অর্ণবের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন কালিকার পরিবারের সদস্যরা। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে অর্ণবের বিরুদ্ধে ৩০৪, ৩৩৮ এবং ২৭৯ ধারায় মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। ৩৩৮ ধারায় অনিচ্ছাকৃত আঘাত ও ৩০৪ ধারায় অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা দায়ের হয়েছে। ৩০৪ ধারাটি জামিন অযোগ্য। সোমবার অর্ণবকে চুঁচুড়া কোর্টে তোলা হবে।
আরও পড়ুন, ভীষণ কষ্ট হচ্ছে, ভয় হচ্ছে, মিস করছি কালিকা…
এ দিন আদালত চত্বরে উপস্থিত ছিলেন অর্ণবের মা করবী রাও। তিনি জানিয়েছেন, গত তিন বছর ধরে গাড়ি চালাচ্ছেন অর্ণব। গত মঙ্গলবার দুর্ঘটনার কবলে পড়া গাড়িটি তিনি চালাচ্ছিলেন মাত্র তিন দিন। তবে কালিকাপ্রসাদ ও তাঁর দলকে নিয়ে এর আগে কোনওদিন গাড়ি চালাননি তিনি।
দুর্ঘটনার পর এ ভাবেই উল্টে যায় কালিকাপ্রসাদের গাড়ি। —নিজস্ব চিত্র।
গত মঙ্গলবারের দুর্ঘটনায় আহত হন অর্ণব নিজেও। ঘটনার দু-তিন দিন পর পুলিশকে তিনি জানান, একটি বড় ট্রেলার ধাক্কা মারায় তিনি গাড়িটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনি। যদিও এখনও ফরেন্সিক পরীক্ষার রিপোর্ট আসেনি। কিন্তু প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জানতে পেরেছে, এমন কোনও ঘটনাটই ঘটেনি। যে ভাবে জাতীয় সড়কের পাশের রেলিংয়ে ঘষে খানিকটা গিয়ে, তার পর ডান দিকের চাকা খুলে গাড়িটি পাল্টি খায়, তা খুঁটিয়ে দেখে পুলিশের ধারণা আরও দৃঢ় হয়। বরং বাকিদের সঙ্গে কথা বলে দু’টি জিনিস পরিষ্কার, গাড়ি অত্যন্ত দ্রুতগতিতে চালাচ্ছিলেন অর্ণব। ঘণ্টায় ১১০-১২০ কিলোমিটার ছিল তার গতিবেগ। আর যে ভাবে নয়ানজুলিতে চিত্পাত হয়ে গাড়িটি পড়েছিল তাতে অন্য কোনও গাড়ির পক্ষে সেটিকে ধাক্কা দেওয়া সম্ভব নয়। বরং সেই মুহূর্তে অর্ণবের ঘুমিয়ে পড়ার সম্ভাবনাই বেশি। পুলিশ জানিয়েছে, হাইওয়েতে গাড়ি চালানোর সর্বোচ্চ সীমা ঘণ্টায় ৮০-১০০ কিলোমিটার। অর্ণব তা লঙ্ঘন করেছেন। আর তা ছাড়া ভুল তথ্য দিয়ে পুলিশকে ভুল পথে চালনা করারও চেষ্টা করেছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন, মৃত্যুর গান, দুঃখের গান— সব ছাপিয়ে এখন কালিকার মুখই ভেসে উঠছে
সে দিন দুর্ঘটনার পরে কালিকাপ্রসাদকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। তবে কালিকার সহযাত্রীরা এবং অর্ণব প্রাণে বেঁচে যান।