পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা। —ফাইল চিত্র।
রাজ্য বাজেটের দিন ফের শাসক ও বিরোধী শিবিরের সংঘাত তৈরি হল বিধানসভায়। অধিবেশন চলাকালীন বৃহস্পতিবার দু’পক্ষের সেই সংঘাতে নজিরবিহীন ভাবে একসঙ্গে গাওয়া হল জাতীয় সঙ্গীত এবং রাজ্য সঙ্গীত!
লোকসভা ভোট এগিয়ে আসতেই রাজনৈতিক সংঘাতও তীব্র হচ্ছে। তার জেরেই টানাপড়েনে জড়িয়ে পড়ল দুই সঙ্গীত। সদ্য রাজ্য সঙ্গীতের স্বীকৃতি পাওয়া রবীন্দ্র সঙ্গীত ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’ গানে বাজেটের আগে অধিবেশন-পর্ব শুরু হলেও তাতে আপত্তি জানিয়ে প্রায় একই সঙ্গে গাওয়া হল ‘জনগণমন অধিনায়ক জয় হে।’ আর এই মেজাজে শুরু দিনের শেষে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে বিরোধীদের স্লোগান উঠল ‘চোর, চোর।’ পাল্টা বিজেপিকে বিঁধে শোনা গেল ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিন্দাবাদ। তৃণমূল কংগ্রেস জিন্দাবাদ।’
অধিবেশনের শুরুতে এ দিন অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের বাজেট বক্তৃতার আগে রাজ্য সঙ্গীত হবে বলে ঘোষণা করেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মতোই অধিবেশন কক্ষে ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’ গানটি বাজতে শুরু করলে বিধায়কেরা উঠে দাঁড়ান। মুখ্যমন্ত্রী-সহ অন্য মন্ত্রীরা এবং শাসক দলের সকলে তার সঙ্গে গলাও মেলাতে শুরু করেন। কিন্তু কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে তাতে আপত্তি জানিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী-সহ বিজেপির বিধায়কেরা একসঙ্গে জাতীয় সঙ্গীত গাইতে শুরু করেন। ফলে, মুখোমুখি দাঁড়ানো শাসক ও বিরোধীদের সৌজন্যে দু’টি গান একই সঙ্গে গাইতে থাকেন দুই শিবিরে সদস্যেরা।
এই টানাপড়েনেই উত্তাপ ছড়াতে শুরু করে দু’পক্ষের মধ্যে। জাতীয় সঙ্গীতের থেকে সামান্য পরেই শেষ হয় রাজ্য সঙ্গীত। তখনই নিজের আসনে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমরা সব অনুষ্ঠান বা কর্মসূচির পরে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে থাকি।’’ অন্য দিকে তাঁর কথা ও বিধানসভার এই আয়োজন নিয়ে নিজেদের আপত্তি জানাতে থাকেন শুভেন্দু-সহ বিজেপি বিধায়কেরা। এই চাপানউতোর চলতে থাকে বাজেট বক্তৃতার পুরো সময়টাই। থেকে থেকেই বিরোধীরা চন্দ্রিমার ঘোষণা, কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ আর আশ্বাস নিয়ে ক্ষোভ জানান, স্লোগান দিয়ে বাধা দেন। শাসক বিধায়কেরা সেই পথে গেলেও এক সময়ে মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘আমি যখন বলছি, কেউ কথা বলবে না। ওঁদের (বিরোধীদের সঙ্গে) মুখ লাগাতে যাবেন না!’’
অধিবেশন শেষে আরও এক প্রস্ত সংঘাত বাধে। মুখ্যমন্ত্রী বেরোবেন বলে বিধানসভা চত্বরে থাকা অন্য গাড়ি কিছু ক্ষণের জন্য আটকে দিয়েছিল পুলিশ। বিজেপি বিধায়কদের গাড়ি আটকে যাওয়ায় পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলেন শুভেন্দু। আরও এক কিস্তি মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) ঘোষণা হওয়ায় মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাবেন বলে সেখানে জড়ো হয়েছিলেন তৃণমূলপন্থী সংগঠনের সমর্থক বিধানসভার কর্মীরা। এরই মধ্যে বেরিয়ে আসেন মুখ্যমন্ত্রী, তাঁর উদ্দেশে ‘চোর, চোর’ স্লোগান দিতে শুরু করেন শুভেন্দু, অগ্নিমিত্রা পাল-সহ বিজেপির কয়েক জন বিধায়ক। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য গাড়িতে বেরিয়ে যান। আর বিধানসভার কর্মীরা পাল্টা মমতার নামে জিন্দাবাদ স্লোগান দিয়ে বিরোধী দলনেতার পিছু পিছু কিছুটা রাস্তা এগিয়ে যান। এতেই উত্তেজনা তৈরি হয়। সরকারি কর্মীদের আচরণে প্রবল ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিজেপির বিধায়কেরা। প্রসঙ্গত, বিধানসভার ভিতরে ও বাইরের নিরাপত্তা এ দিন কার্যত কলকাতা পুলিশের হাতেই ছিল। বিধানসভা সূত্রে খবর, কলকাতা পুলিশের দু’শোর বেশি বিভিন্ন স্তরের কর্মী মোতায়েন ছিলেন মূল ভবনের চার পাশে। ছিলেন অন্তত হাফ ডজন আইপিএস অফিসারও।
বিজেপির ভূমিকার সমালোচনায় বাজেটের পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেন, ‘‘ভাল বাজেট। মানুষ যাতে শুনতে না পারেন, সেই জন্যই বিরোধীরা ওই রকম করছেন!’’ তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘এত সুযোগ দিই বলেই বিরোধীরা অসভ্য আচরণ করেছে! সংসদে ওরা ( বিজেপি) ১৪৭ জনকে সাসপেন্ড করেছে। আমরা এখানে সেটা করব না।’’
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুর দাবি, ‘‘একে তো বাজেটের আগে জাতীয় সঙ্গীত বাজানোর কোনও প্রথা নেই। তার উপরে স্পিকার বলেছেন জাতীয় সঙ্গীত, হয়েছে রাজ্য সঙ্গীত। মুখ্যমন্ত্রীও বলেছেন, বাংলার জাতীয় সঙ্গীত। বাংলার জাতীয় সঙ্গীত হয়? বাংলা গান বললে আমরাও গাইতাম। ভারত ভাগ করা যাবে না!’’