Bhagwati Prasad Gopalika

মুখ্যসচিবের অনুমতি ছাড়া বৈঠক নয়

প্রতিটি দফতরেরই কিছু না কিছু কাজ চলতে থাকে জেলায় জেলায়। বিভিন্ন সময়ে দফতরের প্রধানেরা জেলাশাসকদের সঙ্গে বৈঠক করে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়ে থাকেন।

Advertisement

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২৪ ০৮:০০
Share:

ভগবতী প্রসাদ গোপালিকা। —ফাইল চিত্র।

দফতরের সচিবদের এক্তিয়ারে কি রাশ টানতে চাইছে প্রশাসনের সর্বোচ্চ মহল— মুখ্যসচিব ভগবতী প্রসাদ গোপালিকার একটি সংক্ষিপ্ত বার্তা ঘিরে সেই চর্চাই শুরু হয়েছে আধিকারিক মহলে।

Advertisement

সূত্রের দাবি, খুব সম্প্রতি সব দফতরের প্রধানদের উদ্দেশে মুখ্যসচিবের বার্তা— জেলাশাসকদের সঙ্গে কোনও বৈঠক করার আগে তাঁর অনুমোদন বা ছাড়পত্র নিতে হবে। কঠোর ভাবে যাতে এই নির্দেশ পালন হয়, সে কথাও বলা হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, তবে কি অনুমোদন না মিললে বৈঠকই করতে পারবেন না বিভাগীয় প্রধানেরা?

ঘটনাচক্রে, বার্তার সময়টা এমনই, যার এক সপ্তাহ আগেই পঞ্চায়েত দফতরের অধীনে পৃথক ‘প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ইউনিট’ গড়ার প্রস্তাব রাজ্য মন্ত্রিসভা পাশ করেছে বলে সূত্রের দাবি। একাধিক দফতরের কাজ বা প্রকল্পের গতিপ্রকৃতি খতিয়ে দেখার কথা ওই ইউনিটের। সেই উদ্যোগকে ঘিরেও প্রবল চর্চা ছিল আধিকারিক মহলে। বিশ্লেষকদের অনেকের ধারণা, সব প্রক্রিয়া কেন্দ্রীভূত করার ভাবনা থেকেই নতুন বার্তা দিতে চেয়েছে নবান্ন। প্রশাসনের অন্দরের একাংশের ব্যখ্যা, বিষয়টি নেহাতই প্রশাসনিক গতি নিরবচ্ছিন্ন রাখার জন্য। এ বিষয়ে মুখ্যসচিবের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি, মেসেজের
উত্তর দেননি।

Advertisement

প্রতিটি দফতরেরই কিছু না কিছু কাজ চলতে থাকে জেলায় জেলায়। বিভিন্ন সময়ে দফতরের প্রধানেরা জেলাশাসকদের সঙ্গে বৈঠক করে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়ে থাকেন। প্রশাসনিক কর্তাদের অনেকেই জানাচ্ছেন, মুখ্যসচিবের বার্তা ‘কঠোর’ ভাবে মানতে হলে যখন-তখন এ কাজ করা যাবে না। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘ডেঙ্গি মোকাবিলায়, রাস্তাঘাটের জরুরি মেরামতের প্রশ্নে, বা সাধারণ মানুষের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত অন্য যে কোনও জরুরি বিষয়ের হঠাৎ পর্যালোচনার প্রয়োজন হলে স্বাস্থ্য, পূর্ত বা অন্য দফতরের সচিবেরা কী ভাবে আগে থেকে মুখ্যসচিবের অনুমতি নেবেন?’’

আধিকারিকদের একাংশ অবশ্য দাবি করছেন, জেলাশাসকদের বিপুল দায়িত্ব পালন করতে হয়। সব দফতরের কাজ সময়ের মধ্যে কার্যকর করতে দায়বদ্ধ থাকেন তাঁরাই। ফলে যখন তখন বৈঠক ডাকা হলে তা তাঁদের কাজের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সংশ্লিষ্ট এক আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘জরুরি প্রয়োজনে জেলাশাসকদের ফোনে বা ই-মেলে কোনও নির্দেশ দেওয়ায় তো কোনও বাধা নেই। কিন্তু এক দিনে একাধিক দফতরের সঙ্গে জেলাশাসকদের বৈঠক করতে হলে বাকি কাজগুলির জন্য সময় থাকে না। অতীতেও একবার যখন-তখন বৈঠক ডাকার ক্ষেত্রে রাশ টানতে বলা হয়েছিল।”

প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ অবশ্য এ-ও প্রশ্ন তুলছেন, তবে কি এ বার জেলাশাসকদের সঙ্গে নিয়মিত এবং সরাসরি যোগাযোগ রাখবে প্রস্তাবিত প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ইউনিট? তাঁদের বক্তব্য, দফতরভিত্তিক নজরদারি শাখা বা সব প্রকল্পের সামনে বাধা দূর করে কাজে গতি আনতে মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে ‘সমন্বয় পোর্টাল’ (এটি তৈরি করে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) থাকার পরেও পঞ্চায়েত দফতরের অধীনে পৃথক ইউনিট গঠনের উদ্যোগ চলছে। এ বার জেলাশাসকদের সঙ্গে সচিবদের বৈঠকে ‘নিয়ন্ত্রণ’ আনার চেষ্টা ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার সেই চর্চাকে আরও জোরালো করেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement