মালদহের প্রশাসনিক বৈঠকে কৃষক বন্ধু প্রকল্পে ৭৭ লক্ষ কৃষককে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার কথা ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।
৭৭ লক্ষ কৃষকের অ্যাকাউন্টে ঢুকতে চলেছে কৃষক বন্ধু-র টাকা। বুধবার মালদহে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনিক বৈঠক শেষ হলেই কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে এই টাকা যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে। সভার শুরুতেই মুখ্যমন্ত্রী কৃষকদের জন্য এই প্রকল্পের কথা ঘোষণা করে দিলেন। ভোটে জিতে আসার পরেই মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, কৃষক বন্ধু (নতুন আবেদনকারীদের জন্য) প্রকল্পে কৃষক ও ভাগচাষিদের আর্থিক সহায়তার পরিমাণ দ্বিগুণ করা হবে। ১০ হাজার ও চার হাজার টাকা করে খরিফ ও রবি মরসুমের শুরুতে বছরে দু'টি সমান কিস্তিতে তা সরাসরি কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পৌঁছে যাবে। আগে এই প্রকল্পে পাঁচ হাজার ও দু’হাজার টাকা করে পেতেন চাষিরা। সেই প্রাপ্য অর্থের পরিমাণ দ্বিগুণ করা হল। এই প্রকল্পের অধীনে ১৮-৬০ বছর বয়সের মধ্যে কোনও চাষির মৃত্যু হলে তাঁর পরিবার দু’লক্ষ টাকা করে পাবেন। কৃষি দফতর সূত্রে খবর, এই প্রকল্পের জন্য ২২০০ কোটি টাকা খরচ হবে।
কৃষিকাজে আর্থিক সাহায্য করতেই এই প্রকল্পের সূচনা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এক একর জমি থাকলে বছরে ১০ হাজার এবং তার কম জমি থাকলে সংশ্লিষ্ট কৃষককে চার হাজার টাকা দেওয়া হয়। বছরে দু’টি কিস্তিতে টাকা পান কৃষকরা। এ বার দেওয়া হচ্ছে দ্বিতীয় কিস্তির টাকা। দেখা যাচ্ছে, এই প্রকল্পে সব থেকে বেশি সংখ্যক কৃষক টাকা পাবেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলায়। এই জেলায় উপভোক্তার সংখ্যা প্রায় ১০ লক্ষ। আট লক্ষ কৃষক নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর এবং তৃতীয় স্থানে দক্ষিণ ২৪ পরগনা। এই জেলার ছয় লক্ষ ২৯ হাজার চাষি কৃষক বন্ধু প্রকল্পের সুবিধা পেতে চলেছেন। এর পরেই রয়েছেন মুর্শিদাবাদের ছয় লক্ষ ২৩ হাজার কৃষক। কৃষক বন্ধু প্রকল্পে রাজ্যের মধ্যে শীর্ষস্থানে রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাথরপ্রতিমা ব্লক। সব থেকে কম উপভোক্তা রয়েছেন ঠাকুরপুকুর-মহেশতলা ব্লকে।
এই বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বিভিন্ন কৃষিপ্রধান জেলায় ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকরা। এমন পরিস্থিতিতে সরকারি সাহায্য কৃষকদের কাছে সুরাহাই বটে। প্রকল্প চালু হওয়ার সময় সুবিধা প্রাপকের সংখ্যা ৫০ লক্ষের আশপাশে ছিল। শুধু জমির মালিক নয়, ভাগচাষিরাও এই প্রকল্পে আর্থিক অনুদান পান। সেখানে কেন্দ্রীয় সরকারের কিসান নিধি প্রকল্পে শুধু জমির মালিককে বছরে তিন কিস্তিতে মোট ছ’হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হয়। কয়েকটি নির্দিষ্ট শ্রেণির জমির মালিকরা অবশ্য কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সাহায্য পান না। তাই এই প্রকল্প চালুর ক্ষেত্রে বহু ছাড় দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি দফতরের আধিকারিকরা। গত অগস্ট মাসে রাজ্যের ৩৫ লক্ষ কৃষক কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুযোগ পেয়েছেন। নাম নথিভুক্ত হলেও রাজ্যের প্রায় ১২ লক্ষ কৃষকের অ্যাকাউন্টে সেই টাকা আসেনি বলেই প্রশাসন সূত্রে খবর। তাই রাজ্য সরকার উদ্যোগী হয়ে কৃষক বন্ধু প্রকল্পের সূচনা নতুন করে শুরু করে দিল।