—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
দুর্নীতির পর পর অভিযোগ ওঠার পরে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য ভবনের কর্তারা কী ব্যবস্থা নিয়েছিলেন, তা এখন খতিয়ে দেখছে সিবিআই। সম্প্রতি স্বাস্থ্য ভবনের তরফে সন্দীপের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের যাবতীয় বিভাগীয় তদন্ত রিপোর্ট সিবিআইকে জমা দেওয়া হয়েছে।
তদন্তকারীদের দাবি, একাধিক আর্থিক দুর্নীতি এবং সরকারি আইন ভেঙে কাজ করার অভিযোগ উঠেছিল সন্দীপের বিরুদ্ধে। তাঁকে কয়েক বার কলকাতার অন্য হাসপাতাল বা কাছাকাছি জেলার হাসপাতালে বদলিও করা হয়। কিন্তু দ্রুত স্বাস্থ্যকর্তাদের প্রভাবিত করে ফের নিজের পছন্দের সরকারি হাসপাতালে বদলি হয়ে ফিরে এসেছেন সন্দীপ। সন্দীপের দুর্নীতি চক্রের মৌরসিপাট্টা ভাঙতে বার বারই স্বাস্থ্য কর্তারা ব্যর্থ হয়েছেন বলে সিবিআইয়ের তদন্তকারীদের সূত্রে জানা যাচ্ছে।
তদন্তকারীদের দাবি, সন্দীপের ঘনিষ্ঠ স্বাস্থ্য ভবনের এক মাঝারি স্তরের কর্তার মাথার উপরে এক অতি প্রভাবশালী হাত দেখা যাচ্ছে। আর জি করের দুর্নীতি চক্রের লাভের গুড় সেই অদৃশ্য প্রভাবশালী হাত পর্যন্ত পৌঁছত বলেই দাবি করা হয়েছে।
শেষ বছর সাতেক ধরে আর জি করের দুর্নীতি চক্র বেপরোয়া হয়ে ওঠে বলেই সিবিআইয়ের তদন্তকারীদের সূত্রে জানা যাচ্ছে। সন্দীপ, তাঁর ঘনিষ্ঠ চিকিৎসক-বাহিনী এবং ব্যবসায়ীদের চক্রের নাম তাতে উঠে আসছে বলে সিবিআই সূত্রে দাবি। তদন্তকারীদের দাবি, ওই সাত বছরে মাসে মাসে প্রায় ৬০-৭০ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে বলে তথ্য সূত্র হাতে আসছে। তা ধাপে ধাপে যাচাই করা হচ্ছে। সূত্রের খবর, আপাতত স্বাস্থ্য ভবনে সন্দীপের ঘনিষ্ঠ যোগসূত্র চিহ্নিত করা গিয়েছে। এ ক্ষেত্রেও ‘উত্তরবঙ্গ লবি’ এবং সন্দীপ ঘনিষ্ঠ মেডিক্যাল কাউন্সিলের চিকিৎসকদের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এবং সব কিছুর সঙ্গে প্রভাবশালী অদৃশ্য হাতের সংযোগ প্রমাণ করার আদালতগ্রাহ্য নথি খুঁজে বার করাও তদন্তের অঙ্গ বলে সিবিআইয়ের সূত্রটির দাবি।
তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, কয়েক বছর আগে সন্দীপ ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ পদে থাকাকালীন দুর্নীতি চক্রটির লাগামছাড়া রমরমা দেখা যায়। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজেও হাসপাতাল থেকে ওষুধ, চিকিৎসা সংক্রান্ত সরঞ্জাম এবং বায়োমেট্রিক বর্জ্য বিক্রির দুর্নীতিতে সন্দীপের নাম আসে। তখনই দুই ওষুধ ব্যবসায়ী বিপ্লব সিংহ, সুমন হাজরা ও আফসার আলির সঙ্গে সন্দীপের দহরম মহরম বাড়ে। আর জি করেও ওই তিন জনের সঙ্গেই সন্দীপের মাখামাখি দেখে দুর্নীতির মামলায় তাঁদেরও গ্রেফতার করে সিবিআই। মঙ্গলবার সন্দীপ-সহ ধৃত চার জনকেই আলিপুরে সিবিআই বিশেষ আদালতে পেশ করা হবে।