কলকাতা হাই কোর্ট। — ফাইল চিত্র।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে রাজ্যের সংশোধনাগারগুলিকে প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে বলে রাজ্যকে জানাল কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ। সংস্কারের পাশাপাশি একটি কমিটি তৈরি করে নির্দিষ্ট সময় অন্তর সংশোধনাগারগুলি পরিদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে বলেও শুক্রবার রাজ্যকে হাই কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে। ১৫ দিন অন্তর আধিকারিকদের সংশোধনাগার পরিদর্শন করতে হবে। আইনজীবী মহলের একাংশের বক্তব্য, ২০১৭ সালে সুপ্রিম কোর্ট সব রাজ্যকে ‘জেল কার্যবিধি’ মেনে চলতে বলেছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ-সহ বহু রাজ্যে তা যথার্থ ভাবে মেনে চলা হয় না বলে অভিযোগ ওঠে।
সুুপ্রিম কোর্টে দেশের সংশোধনাগারগুলিতে মহিলা বন্দিদের পরিস্থিতি নিয়ে একটি মামলা হয়েছিল। তার পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতা হাই কোর্ট আইনজীবী তাপস ভঞ্জকে ‘আদালতবান্ধব’ হিসেবে নিযুক্ত করে সংশোধনাগারগুলি পরিদর্শন করতে পাঠান। সেই পরিদর্শন রিপোর্টে যে তথ্য উঠে আসে তার ভিত্তিতে বিষয়টি ‘ফৌজদারি’ হিসেবে গণ্য করে বিচারপতি বাগচীর এজলাসে পাঠান প্রধান বিচারপতি টি এস শিবগণনম। সেই মামলাতেই এ দিন এই নির্দেশ। মামলার পরবর্তী শুনানি ৫ এপ্রিল।
আদালতবান্ধবের রিপোর্টে এ রাজ্যের সংশোধনাগারের ভিতরে মহিলা বন্দিদের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ার ঘটনা জানা গিয়েছিল। যা নিয়ে রীতিমতো উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল আদালত। কী ভাবে জেলের মধ্যে মহিলা বন্দিরা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ছেন তা নিয়েও প্রশ্ন করেছিলেন অনেকে। এর পাশাপাশি মহিলা বন্দিদের আরও নানা সমস্যার কথাও তুলে ধরেন তাপস। এ দিন তিনি জানান, অনেক সময়েই আদালত থেকে মহিলাদের সন্ধ্যার পরে জেলে নিয়ে যাওয়া হয়। দেহ তল্লাশির জায়গায় কোনও মহিলা কারা রক্ষী থাকেন না। ওই জায়গা মূলত প্রভাবশালী পুরুষ বন্দিদের নিয়ন্ত্রণে থাকে। দেহ তল্লাশির ছুতোয় বহু সময়েই মহিলা বন্দিদের শ্লীলতাহানি করা হয়। এর পরেই বিচারপতি বাগচী রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেলকে বলেন, ‘‘রাজ্যকে বলুন মহিলা বন্দিদের ঢোকা-বেরনোর পথ পৃথক করতে হবে।’’ এ দিন সংশোধনাগারে বন্দির সংখ্যা কমানো প্রয়োজন বলেও বিচারপতির পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে। তিনি বলেন, ‘‘জেলের বদলে সংশোধনাগার করা হয়েছে। সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের সমাজের মূল স্রোতে ফেরানোর উদ্যোগ প্রয়োজন। রাজ্যকে এ ব্যাপারে উদ্যোগী করতে হবে।’’