খালি গা, গলায় গামছা এবং সাদা ধুতি পরে বুধবার হাই কোর্টে আসেন নির্যাতিতার বাবা। সিবিআই কাকে বলে জানেন? আপনার আইনজীবীর নাম কী? এই সব প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘‘ও সব আমার জানা নেই। বিরক্ত করবেন না। ১২ দিন হাসপাতালে কাটিয়েছি! মাথা কাজ করছে না!’’
প্রতীকী ছবি।
ময়নাগুড়িতে ধর্ষণের চেষ্টা এবং আত্মহত্যার ঘটনায় নির্যাতিতার পরিবার এবং সাক্ষীদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিতে রাজ্যকে নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট। আদালতের নির্দেশ, রাজ্য পুলিশের ডিজি তাঁদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবেন। তাঁরা কোনও রকম হুমকি বা ভয়ের মুখে যেন না পড়েন, তা নিশ্চিত করবেন ডিজি। মামলাকারীর আইনজীবী তদন্তে সিবিআই এবং নিরাপত্তায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর আবেদন করলেও আপাতত তা নাকচ করে দিয়েছে উচ্চ আদালত। যদিও ওই নির্যাতিতার বাবা আদালতে এসে জানিয়েছেন, মেয়ের মৃত্যুর তদন্তভার সিবিআইয়ের পরিবর্তে রাজ্য পুলিশই করুক। তাঁর এই মতের পিছনে শাসকদলের হাত রয়েছে বলে মনে করছেন মামলকারীর আইনজীবী।
গত ২৮ এপ্রিল জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়িতে এক নাবালিকার উপর অত্যাচার করে এক যুবক। তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়। পরে ওই নাবালিকাকে একাধিক বার নির্যাতন ও খুনের হুমকি দেওয়া হয়। সেই কারণে গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে ওই নাবালিকা। কিছু দিন আগে হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেন আইনজীবী সুস্মিতা সাহা দত্ত। বুধবার ছিল ওই মামলার শুনানি। নির্যাতিতার বাবার হয়ে সওয়াল করেন আইনজীবী তথা রাজ্যের প্রাক্তন অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) কিশোর দত্ত। প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চকে তিনি জানান, নির্যাতিতার বাবা সিবিআই তদন্ত চান না। তাঁর রাজ্য পুলিশের উপরই ভরসা রয়েছে।
ওই আইনজীবীর মুখে এই কথা শুনে অনেকেই আশ্চর্য হন! প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, নির্যাতিতার বাবার সঙ্গে একান্তে তাঁরা কথা বলতে চান। এর পর এজলাসের বাইরে গিয়ে প্রধান বিচারপতিদের চেম্বারে ডাকা হয় নির্যাতিতার বাবাকে। জানা যায়, বিচারপতিদের কাছেও তিনি পুলিশের তদন্তেই আস্থা রাখছেন বলে জানান। যদিও আইনজীবী সুস্মিতার দাবি, তৃণমূল ও পুলিশ জোর করে মিথ্যা বয়ান দিতে বাধ্য করছে তাঁকে। এই ঘটনায় শাসকদলের হাত রয়েছে পরিষ্কার। তা না হলে নির্যাতিতার বাবা কী ভাবে প্রাক্তন এজিকে আইনজীবী হিসাবে নিয়োগ করলেন।
সুস্মিতার সওয়াল, ২২ ও ২৩ এপ্রিল দু'দিন ধরে ঘটনাস্থল এবং নির্যাতিতার বাড়ি থেকে কয়েকটি জিনিস বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ। পুলিশ দাবি করছে, ২৩ এপ্রিল বাজেয়াপ্ত তালিকায় (সিজার লিস্ট) নির্যাতিতার বাবা সাক্ষর করেছেন। অথচ নিম্ন আদালতে তিনি তা অস্বীকার করেছেন। রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, রাজ্য সঠিক পথেই তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ওই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত-সহ তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা ধৃতদের জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করেছি।
খালি গা, গলায় গামছা এবং সাদা ধুতি পরে বুধবার হাই কোর্টে আসেন নির্যাতিতার বাবা। সিবিআই কাকে বলে জানেন? আপনার আইনজীবীর নাম কী? এই সব প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘‘ও সব আমার জানা নেই। বিরক্ত করবেন না। ১২ দিন হাসপাতালে কাটিয়েছি! মাথা কাজ করছে না!’’ আরও বলেন, ‘‘মৃত্যুর আগে মেয়ে বলেছে, দোষীরা যেন শাস্তি পায়! এখন পুলিশ তো তাদের ধরেছে।’’ এই বক্তব্যের সঙ্গে ভিন্ন মত পোষণ করে মামলকারীর আইনজীবী বলেন, ‘‘এখানে অনেক ষড়যন্ত্র কাজ করছে। যাতে পুলিশ তদন্ত করে, তা জানানোর জন্য এক জন বাবাকে এত দূর ছুটে আসতে হল, এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। আইনের উপর ভরসা রাখছি। সব সত্য প্রকাশ্যে আসবে।’’