ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে অভিভাবকদের আশঙ্কা কমাতেই কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে শিক্ষা দফতরের তরফে। ফাইল চিত্র।
রাজ্যের স্কুলগুলির নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে স্কুলভিত্তিক কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিল মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। সঙ্গে বিষয়টি নিশ্চিত করতে সাত দফা নির্দেশিকা জারি করল তারা। মঙ্গলবার এই মর্মে এক নির্দেশিকা জারি করেছে মধ্যশিক্ষা দফতর। সেই নির্দেশিকা স্টুডেন্ট অ্যান্ড সিকিউরিটি মনিটরিং কমিটি (এসএসএমসি) গঠনের সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত জানানোর পাশাপাশি, সাত দফা নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। এই মনিটরিং কমিটিতে কারা কারা থাকবেন তা-ও ঠিক করে দিয়েছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। কমিটির কর্মপরিধিও স্থির করে দেওয়া হয়েছে। স্কুলের নিরাপত্তা কমিটিতে থাকবেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক বা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক কিংবা চেয়ারম্যান, এক জন মহিলা শিক্ষক, যদি কোনও কারণে স্কুলে মহিলা শিক্ষক না থাকেন সে ক্ষেত্রে পুরুষ শিক্ষক সেই দায়িত্ব পালন করবেন। থাকবেন স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, অভিভাবকদের তরফে দু’জন সদস্য ও পুলিশ প্রশাসন এবং পরিবার ও সমাজ কল্যাণ দফতর থেকে আমন্ত্রিত দুজন প্রতিনিধি। ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে অভিভাবকদের আশঙ্কা কমাতেই এই ধরনের কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা দফতরের এক আধিকারিক।
স্কুলে যাতে ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়ার মতো পতঙ্গবাহিত রোগ ছড়িয়ে না পড়ে সে বিষয়েও সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে ওই কমিটিকে। পতঙ্গবাহিত ওই রোগগুলি ঠেকানোর জন্য ক্যাম্পাস পরিষ্কার রাখা, পানীয় জল, ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী এবং আগত অতিথিদের জন্য পৃথক শৌচাগারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, স্কুল চত্বরে সিসিটিভির ব্যবস্থা রাখা, এই সব বিষয়ের দায়িত্ব থাকবে এই কমিটি। পানীয় জল নিরাপদ কি না, তা দেখার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের ল্যাবরেটরিতেও পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে এই কমিটিকে। সিলিং ফ্যান যাতে খুলে না পড়ে, অন্যান্য বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি থেকে যাতে শর্ট-সার্কিট হয়ে আগুন না লাগে, তার জন্য সতর্কতা হিসেবে ছ’মাস অন্তর লাইসেন্সপ্রাপ্ত ইলেকট্রিশিয়ানকে দিয়ে সেগুলি পরীক্ষা করাতে হবে। এ ছাড়াও রাজ্য সরকারের সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফের মতো সতর্কতামূলক প্রচারও চালাতে হবে এই কমিটিকে। স্কুল চত্বরেই রাখতে হবে এই সংক্রান্ত প্রচারের দৃশ্যমানতার ছবি।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
মধ্যশিক্ষা পর্ষদের তরফে এই নির্দেশিকাটি জারি করেছেন সেক্রেটারি সুব্রত ঘোষ। স্কুলের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিয়ে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ায় খুশি শাসকদলের শিক্ষকদের সংগঠন মাধ্যমিক তৃণমূল শিক্ষক সমিতি। তাদের সভাপতি দিব্যেন্দু মুখোপাধ্যায় শিক্ষা দফতরের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। কিন্তু বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির নেতা স্বপন মণ্ডল প্রশ্ন তুলছেন স্কুলের পরিকাঠামো নিয়ে। তাঁর কথায়, “বহু স্কুলের ব্যবস্থাপক কমিটি নেই। তাই নিরাপত্তা কমিটি গড়তে ব্যবস্থাপক কমিটির সভাপতি বদলে কাকে নেওয়া হবে সে কথা বলা হয়নি নির্দেশিকায়। তা ছাড়া জনসাস্থ্য কারিগরি দফতরের ল্যাবরেটরিতে নিয়ে গিয়ে পানীয় জলের পরীক্ষার যে কথা বলা হয়েছে তার পরিকাঠামো সব স্কুলে এই মুহূর্তে নেই। সেই সব ব্যবস্থা করে দিয়েই মধ্যশিক্ষা পর্ষদের এই নির্দেশিকা জারি করা উচিত ছিল।”