মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা এবং তৃণমূলের উপরে হামলায় যুক্ত কি না, ৪৮ ঘণ্টা সময় দিয়ে কুড়মি সংগঠনগুলিকে জানাতে বলেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা এবং তৃণমূলের উপরে হামলায় তাঁরা যুক্ত কি না, ৪৮ ঘণ্টা সময় দিয়ে কুড়মি সংগঠনগুলিকে জানাতে বলেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সাংবাদিক বৈঠক করে কুড়মিদের সামাজিক সংগঠনগুলি দাবি করল, শুক্রবার রাতে রাজ্যের মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদার গাড়ি এবং তৃণমূলের লোকজনের উপরে হামলায় তাদের কোনও হাত নেই। তবে একই সঙ্গে তারা নিরপেক্ষ তদন্ত, এমনকি বিচারবিভাগীয় বা সিবিআই তদন্তেরও দাবি করল। পুলিশ এর মধ্যে চার জনকে গ্রেফতার এবং আন্দোলনের দুই নেতা, ‘কুড়মি সমাজ পশ্চিমবঙ্গে’র সভাপতি রাজেশ মাহাতো এবং আদিবাসী জনজাতি কুড়মি সমাজের রাজ্য সভাপতি শিবাজী মাহাতোকে আটক করেছে। ১৫ জন অভিযুক্তের তালিকায় তাঁদের নাম ছিল। খড়্গপুরের বেনাপুর হাই স্কুলের শিক্ষক রাজেশকে শুক্রবারই কোচবিহারের চামটা আদর্শ হাই স্কুলে বদলিও করে দেওয়া হয়েছে।
আটক হওয়ার আগে, শনিবার দুপুরে কুড়মি সংগঠনগুলির সম্মিলিত ‘ঘাঘর ঘেরা’ কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা রাজেশ মাহাতো, শিবাজী মাহাতো, বীরেন মাহাতোরা সাংবাদিক বৈঠক করেন। বিরবাহার গাড়িতে হামলার ঘটনার নিন্দা করে তাঁদের দাবি, পুলিশ অনুমতি না দেওয়ায় শুক্রবার গড় শালবনিতে সংগঠনগত ভাবে তাঁরা ঘাঘর ঘেরা করেননি। রাজেশ বলেন, ‘‘জেড প্লাস সাংসদের যাত্রাপথ নির্বিঘ্ন করার দায়িত্ব পুলিশের। রাস্তায় আলো ও সিসিটিভি লাগানো উচিত ছিল তাদের।’’ ঘটনার নিন্দা করে এ দিন বাঁকুড়ার খাতড়াতেও তদন্তের দাবি জানান আদিবাসী কুড়মি সমাজের নেতারা। শুক্রবারই অবশ্য রাজেশ তাঁর ফেসবুক পোস্টে লিখেছিলেন, ‘আজকের ঘটনা অনভিপ্রেত, দুর্ভাগ্যজনক’। এ দিন তাঁর দাবি, সব রাজনৈতিক দলের থেকে সমান দূরত্ব রেখে তাঁদের সামাজিক ‘ঘাঘর ঘেরা’ আন্দোলন চলছে। শুক্রবার পুলিশ অনুমতি না দেওয়ায় সংগঠনের কর্মসূচি হয়নি। তবে রাজেশ সেখানে হাজির ছিলেন বলেই একাংশের দাবি। রাজেশের দাবি, ‘‘গড় শালবনিতে অবরোধ তুলতে পুলিশ সহযোগিতা চাওয়ায় সেখানে গিয়েছিলাম।’’
তাঁদের গ্রেফতার করা হতে পারে, এই সন্দেহে রাজেশ আগেই বলেন, ‘‘কুড়মি আন্দোলন দমাতে রাজ্য সরকার প্রতিহিংসামূলক আচরণ করছে।’’ শিবাজীরও বক্তব্য, ‘‘সমাজের জন্য আন্দোলন করে জেলে যেতে হলে যাব।’’ ধৃত চার জনও এ দিন ঝাড়গ্রাম সিজেএম আদালত চত্বরে সংবাদমাধ্যমের কাছে দাবি করেন, ঘটনায় তাঁরা যুক্ত নন। ‘ঘাঘর ঘেরা’ কর্মসূচিতে আদিবাসী কুড়মি সমাজ নেই। তবে সেই সংগঠনের মূল মানতা (মুখ্য উপদেষ্টা) অজিতপ্রসাদ মাহাতোও বলছেন, ‘‘ঘটনার উপযুক্ত তদন্ত হোক। আন্দোলন দমাতে রাজ্য সরকার ধরপাকড় করছে।’’ এই সংগঠনের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি কমলেশ মাহাতো-সহ তিন জনকে এ দিন খেমাশুলিতে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গত কয়েক মাস ধরেই জনজাতি তালিকাভুক্ত করা থেকে শুরু করে কুড়মালি ভাষার স্বীকৃতি— নানা দাবিতে আন্দোলন করছে কুড়মি সামাজিক সংগঠনগুলি। জাতীয় সড়ক, রেল অবরোধের পাশাপাশি ‘ঘাঘর ঘেরা’ আন্দোলনকে একটি সাংগঠনিক রূপ দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। নেতাদের ধরলেও আন্দোলন থেমে থাকবে না, এই বার্তা দিয়ে সারা ভারত কুড়মি সমন্বয় সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি অশোক মাহাতো বলেন, ‘‘সমাজের আন্দোলন ব্যক্তি নির্ভর নয়। বহু যুগের বঞ্চনা সয়ে কুড়মিরা শান্তিপূর্ণ ভাবে দাবি আদায়ে বদ্ধপরিকর।’’