BSF

বিএসএফ মেরে বন্দুক লুটের ছক কষেছিল জঙ্গিরা 

জলঙ্গির বৈঠকে হাজির থাকা দু’একজন ইতিমধ্যেই পালিয়ে গিয়েছে। এখন তাদের খোঁজ চালাচ্ছে তদন্তকারী সংস্থা।

Advertisement

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৪:২২
Share:

প্রতীকী চিত্র।

শনিবার ভোরে আল কায়দার ডোমকল-জলঙ্গি মডিউলের ছয় জঙ্গিকে গ্রেফতার করে বড় বিপদ এড়ানো গিয়েছে বলে মনে করছে এনআইএ। কারণ, অনলাইনে মগজধোলাইয়ের পর নাশকতা শুরু করার জন্য গত ১৫ দিনে ওই মডিউলের সদস্যরা নিজেদের মধ্যে তিন-চার বার বৈঠকে বসেছিল। সর্বশেষ বৈঠকটি হয় শুক্রবার দুপুরে জলঙ্গিতে। সেখানে সাত সদস্য উপস্থিত ছিল। তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, জেহাদের কাজ করতে গেলে সঙ্গে অস্ত্র রাখতে হবে। বৈঠকে ঠিক হয়, বিএসএফ বা পুলিশকে মেরে তারা অস্ত্র ছিনতাই করবে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা এবং এনআইএ চরম পদক্ষেপের কথা জেনে আর দেরি করেনি। পর দিনই অপারেশন চালিয়ে ধরা হয় ছ’জনকে। কিন্তু জলঙ্গির বৈঠকে হাজির থাকা দু’একজন ইতিমধ্যেই পালিয়ে গিয়েছে। এখন তাদের খোঁজ চালাচ্ছে তদন্তকারী সংস্থা। রাজ্য পুলিশের এসটিএফও এনআইএ’র জাল কেটে বেরিয়ে যাওয়া জঙ্গিদের ধরতে তৎপর হয়েছে বলে নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে।

Advertisement

তদন্তকারীদের দাবি, রাজ্যে প্রথম আল কায়দার জঙ্গি মডিউল ধরা কেরল এবং বাংলায় যে ভাবে গজওয়াল-উল-হিন্দের ছত্রছায়ায় থেকে আল কায়দার শাখা পাওয়া গেল, তাতে চিন্তা বাড়াচ্ছে। কেরলের যোগেই বাংলার মডিউলটির উপর নজরদারি চালাচ্ছিল কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা এজেন্সিগুলি। দীর্ঘদিন ধরে নানা গ্রুপে ধৃতরা জেহাদি বার্তা আদানপ্রদান করছিল। এক এনআইএ কর্তা জানান, মডিউলের চার সদস্য হাতছাড়া হলেও যাদের পাওয়া গিয়েছে তারা সকলেই প্রাথমিক জেরা পর্বে আল কায়দা যোগের কথা স্বীকার করে নিয়েছে। দিল্লি নিয়ে গিয়ে ওদের দীর্ঘদিনের অনলাইন যোগাযোগের ফিরিস্তি সামনে রেখে জেরা করা হবে। সেখান থেকে আরও যোগসূত্র বেরবে।

শনিবারের অপারেশনের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করে তদন্তকারীদের দাবি, ডার্ক ওয়েবে জেহাদি গ্রুপগুলিতে নজরদারি চালানোর সময় নাশকতার প্রস্তুতি না নিলে অপারেশন চালানো হয় না। বরং জেহাদি নেটওয়ার্কে ধর্মীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা সীমাবদ্ধ থাকলে কোনও অ্যাকশন করা হয় না। মুশকিল হল, ডোমকল-জলঙ্গি মডিউলে পাকিস্তানি হ্যান্ডলার মুর্শিদাবাদিদের সক্রিয় হওয়ার জন্য নির্দেশ দিচ্ছিল। গত দু’মাসে তারা রীতিমতো তৎপর ও অতিসক্রিয় হয়ে উঠেছিল। একটি ‘নির্দিষ্ট’ নাশকতার জন্য মডিউলটির ২ লক্ষ টাকা এবং দু’তিনটি বন্দুক দরকার হয়ে পড়ে। সেই মতো ওই গ্রুপে থাকা এক হ্যাল্ডলার তাঁদের দিল্লি এসে অস্ত্র নিয়ে যেতে বলে। দিল্লি এলে টাকার ব্যবস্থাও করা হবে বলে জানান হয়। কিন্তু এখন দিল্লি না গিয়ে স্থানীয়ভাবে বন্দুক ও অর্থ জোগাড়ের সিদ্ধান্ত নেয় মডিউলের ১০ সদস্য। স্থানীয়ভাবে জোগাড় হয় ৩০ হাজার টাকাও। গত শুক্রবার বৈঠকে বসে তারা বিএসএফ বা পুলিশকে মেরে বা আটক করে বন্দুক ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করেছিল। এ সবই ওই মডিউলের গ্রুপ-চ্যাটে লিপিবদ্ধ রয়েছে। সে সব দেখেই এনআইএ’র দল আর দেরি করেনি। এমনকি দিল্লি থেকে কলকাতায় নেমে সেদিন রাতেই আটটি গাড়ি নিয়ে মুর্শিদাবাদ রওনা দেয় তারা। দিন ১৫ আগে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনী এলাকা ঘুরে চিহ্নিতকরণের কাজটা করে রেখেছিল। মুর্শিদাবাদ এলাকায় কর্মরত পুলিশ কর্তারা হানার কথা জানলেও রাজ্য পুলিশ সক্রিয়ভাবে তাতে অংশ নেয়নি।

Advertisement

আরও পড়ুন: ‘পালানোর হলে তো কবেই সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে হারিয়ে যেত!’

শুধু গ্রামগুলি দূর থেকে চিনিয়ে দিয়েছিল। তার খেসারত হিসাবে এলাকা সম্পর্কে নিঁখুত জ্ঞান না থাকায় হাতছাড়া হয়েছে ৪ জঙ্গি।

নবান্নের দাবি, রবিরার দিনভর রাজ্যের এসটিএফ ধৃতদের জেরার সময় এনআইএ দফতরে হাজির ছিল। তারাও ধৃতদের আল কায়দা যোগ জেনে উদ্বেগে। পালিয়ে যাওয়া জঙ্গিদের ধরতে এসটিএফও সক্রিয় হয়েছে বলে রাজ্য পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।

আরও পড়ুন: জেএমবি-র ছাতা বদল, রাজ্যে এল আল কায়দা

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement