TET Examinations

টেট-এ বিঘ্ন ঘটানোর চেষ্টা হতে পারে ! সতর্ক শিক্ষা পর্ষদ সহ প্রশাসন

পাঁচ বছর পরে রবিবার, রাজ্যে ফের টেট হবে। পর্ষদ জানিয়েছে, ৬ লক্ষ ৯০ হাজার ৯৩২ জন পরীক্ষার্থীর জন্য রাজ্যে ১৪৬০টি পরীক্ষা কেন্দ্র করা হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২২ ০৮:১৪
Share:

পাঁচ বছর পরে রবিবার, রাজ্যে ফের টেট পরীক্ষা। প্রতীকী ছবি।

প্রাথমিক শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা নির্ধারণ পরীক্ষার (টেট) প্রাক্কালে নতুন ‘আশঙ্কা’ প্রকাশ করল প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। শনিবার এক সাংবাদিক বৈঠকে পর্ষদ সভাপতি গৌতম পালের দাবি, পর্ষদ এবং প্রশাসনের কাছে নির্দিষ্ট খবর আছে যে কেউ কেউ টেট-এ বিঘ্ন ঘটানোর চেষ্টা করছেন। এ ব্যাপারে তাঁরা সতর্ক আছেন জানিয়ে পর্ষদ সভাপতির হুঁশিয়ারি, ‘‘যদি দেখি কোনও পরীক্ষার্থী, পরীক্ষাবিধি ঠিক মতো পালন না-করে বিঘ্ন ঘটানোর চেষ্টা করছেন অথবা বাইরের কোনও ব্যক্তি বিঘ্ন ঘটানোর চেষ্টা করছেন, তা হলে প্রশাসনের কাছে কঠোরতম শাস্তির সুপারিশ করব।” এই অভিযোগের সপক্ষে নির্দিষ্ট ভাবে কিছু না-জানালেও কিছু এসএমএস পাওয়ার কথা জানান সভাপতি। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি কিছু জেলায় ডিইএলএড পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। শনিবার রাতে প্রশাসন জানিয়েছে, দুই দিনাজপুর, মুর্শিদাবাদ, মালদহ এবং দুই মেদিনীপুরে টেট চলাকালীন ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকবে।

Advertisement

পাঁচ বছর পরে রবিবার, রাজ্যে ফের টেট হবে। পর্ষদ জানিয়েছে, ৬ লক্ষ ৯০ হাজার ৯৩২ জন পরীক্ষার্থীর জন্য রাজ্যে ১৪৬০টি পরীক্ষা কেন্দ্র করা হয়েছে। সব থেকে বেশি পরীক্ষার্থী মুর্শিদাবাদের। পরীক্ষা নির্বিঘ্নে হওয়ার জন্য কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা-ও সবিস্তারে জানান সভাপতি। তবে টেট-এর প্রাক্কালে শাসক-বিরোধী চাপানউতোরও শুরু হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘বহু জায়গা থেকে ফোন আসছে, প্রশ্ন বলে দেওয়া হবে ১০ লক্ষ টাকার চুক্তিতে। ৫ লক্ষ টাকা অগ্রিম দিলে আজকেই প্রশ্ন বলে দেওয়া হবে। সেই প্রশ্ন লিখতে পারবেন। তার পর ৫ লক্ষ টাকা দিতে হবে।’’এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, “বিরোধী দলনেতা দায়িত্বশীল পদ। সেই পদের ব্যক্তি যদি এমন অভিযোগ করেন তা হলে স্বচ্ছতার স্বার্থে যে বা যারা এই ধরনের কাজ করেছেন তাঁদের কয়েক জনের ফোন নম্বর বা যোগাযোগের হদিস তাঁর সরকারকে জানানো উচিত। যাতে সরকার খতিয়ে দেখে প্রয়োজনে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে পারে। আর যদি এই কাজ না-করে বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি করতে চান তাহলে বুঝতে হবে সুষ্ঠু পরীক্ষা হোক এটা তিনিচান না।”

তবে পর্ষদ দাবি করেছে সুষ্ঠু পরীক্ষার স্বার্থে প্রশাসন সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে। এ দিন থেকেই খুলে গিয়েছে কন্ট্রোল রুম। রয়েছে হেল্পলাইন (৬২৯২২৭৮৪৩৮)। অধিকাংশ পরীক্ষা কেন্দ্রের সঙ্গেই সরাসরি এই কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে। পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢোকার আগে পরীক্ষার্থীদের একাধিক নিরাপত্তা বলয় পেরিয়ে ঢুকতে হবে। মূল গেটে সিসিটিভি ক্যামেরা থাকবে। বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে পরীক্ষার্থীর যাচাই হওয়ার পরে ফের এক প্রস্ত মেটাল ডিটেক্টরের পরীক্ষা হবে। পরীক্ষার ঘরেও মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশি হবে। সভাপতি বলেন, “সিল করা বুকলেট এবং ওএমআর শিট খুলবেন পরীক্ষার্থীরা। ভেনু ইনচার্জ, অফিসার ইনচার্জরাও এই সিল করা বুকলেট খুলতে পারবেন না। পরীক্ষার্থীরা এ বার বুকলেট বাড়ি নিয়ে যেতে পারবেন। সেই সঙ্গে যে ওএমআর শিটে তিনি লিখছেন তখন নিজে থেকেই নীচের একটা পাতায় তার লেখার একটা কপি হয়ে যাচ্ছে। ওএমআর শিটের একটা কপি পরীক্ষার্থী বাড়ি নিয়ে যেতে পারবেন। এই ব্যবস্থা একেবারেই নতুন।”

Advertisement

জেলা প্রশাসনের স্তরেও টেট-এর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পরীক্ষা কেন্দ্রের চারপাশে ১৪৪ ধারা জারি থাকবে। উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের মহকুমা শাসক কিংশুক মাইতি বলেন, ‘‘টেটের প্রশ্নপত্র ফাঁস ও নকল করা রুখতে কড়া নজরদারি থাকবে।’’ মুর্শিদাবাদ আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক বিমলকুমার শর্মা বলেন, “বাস, অটো, ট্রেকার-সহ যত ধরনের গণপরিবহণ রয়েছে, তাদের সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে সকাল থেকে পর্যাপ্ত যানবাহন যেন রাস্তায় থাকে।” পরীক্ষার্থীদের সুবিধায় বিভিন্ন জেলায় বাড়তি বাস ও খড়্গপুর শাখায় বাড়তি ট্রেন চালানোরও সিদ্ধান্ত হয়েছে।

তবে পরীক্ষা কেন্দ্র দূরে হওয়ায় অসন্তুষ্ট অনেক পরীক্ষার্থী। সোনামুখীর ধুলাইয়ের বাসিন্দা লাল্টু গরাইয়ের দাবি, ‘‘সিমলাপালের একটি স্কুলে আমার পরীক্ষাকেন্দ্র। একাধিক জায়গায় বাস বদল করে যেতে হবে। সময় মতো পৌঁছনো নিয়ে চিন্তায় আছি।’’ বান্দোয়ানের বারুডি গ্রামের পরীক্ষার্থী সঞ্জয় মাহাতোর পরীক্ষাকেন্দ্র রঘুনাথপুরের জয়চণ্ডীতে। তিনি বলেন, ‘‘পরীক্ষা কেন্দ্রের দূরত্ব প্রায় ১৩০ কিলোমিটার। তাই শনিবারেই রঘুনাথপুরেচলে এসেছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement