কড়া নিরাপত্তার পাশাপাশি ইন্টারভিউয়ে একটি নতুন পরীক্ষাও যুক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরীক্ষার্থীরা। ফাইল চিত্র।
নিয়োগে দুর্নীতি থেকে যাবতীয় সমস্যার শুরু। তাই নতুন করে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ করতে নেমে রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ প্রথম থেকেই জোর দিল স্বচ্ছতায়। হবু শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ইন্টারভিউয়ের টেবিলের মাথায় ক্লোজ সার্কিট বা সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে শুরু হল নিয়োগ পর্ব। যাতে প্রতি মুহূর্তের, প্রতি ক্ষণের হিসাব থাকে পর্ষদের হাতে।
হাই কোর্টের নির্দেশে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ ডিসেম্বর মাসে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের যে নোটিফিকেশন জারি করেছিল, মঙ্গলবার থেকেই শুরু হল তার ইন্টারভিউ পর্ব। প্রথম পর্যায়ে কলকাতা জেলার টেট পরীক্ষার্থীদের নিয়োগের ইন্টারভিউ হলে তার পর জেলার প্রার্থীদের ইন্টারভিউ হবে। সোমবার ছিল সেই প্রথম পর্যায়ের প্রথম দিন। সকাল ১০টার সময় টেট উত্তীর্ণদের ডাকা হয়েছিল পর্ষদের দফতরে। সকাল ১১টা থেকেই শুরু হয় ইন্টারভিউ এবং অ্যাপ্টিটিউড টেস্ট। মোট ৫টি টেবিলে ৩ জন করে বিশেষজ্ঞ, প্রতিটি টেবিলের মাথায় ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসিয়ে শুরু হয় ইন্টারভিউ পর্ব।
উল্লেখ্য, এই সমস্ত পরীক্ষার্থী ২০১২, ২০১৪, ২০১৭-র নোটিফিকেশন দেওয়ার পর আবারও রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ পেয়েছিলেন হাই কোর্টের নির্দেশে। এই পরীক্ষার্থীদের হাতে আগেই তাঁদের পরীক্ষার উত্তরপত্র বা ওএমআর শিট তুলে দিয়েছিল পর্ষদ। আর এ বার সম্পূর্ণ নজরদারিতে ইন্টারভিউ এবং পরীক্ষা। পর্ষদের তরফে ডেপুটি সেক্রেটারি পার্থ কর্মকার বলেন, ‘‘স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগ প্রক্রিয়াটি চালাতে বোর্ড বদ্ধপরিকর। তাই স্বচ্ছতা বজায় রাখতে একাধিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ইন্টারভিউ আর পরীক্ষা চলাকালীন তো বটেই, তার আগেও প্রার্থীদের তথ্য যাচাইয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’
কী ভাবে চলছে পরীক্ষার্থীদের তথ্য ষাচাইয়ের প্রক্রিয়া? পার্থ জানিয়েছেন, পরীক্ষার্থীদের পরিচয়পত্র এবং অন্যান্য নথি খতিয়ে দেখার পর তাঁকে ভেরিফায়েড স্লিপ দেওয়া হচ্ছে। সেই স্লিপে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে কোন টেবিলে ইন্টারভিউ নেওয়া হবে। সেই স্লিপ নিয়ে ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছেন পরীক্ষার্থীরা। ২০০ জন পরীক্ষার্থীকে দু’ভাগে ভাগ করে প্রথম ১০০ জনের ইন্টারভিউ নেওয়া হবে সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত। পরবর্তী পর্যায়ে দুপুর ২টো থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত হবে ইন্টারভিউ। পার্থ বলেছেন, ‘‘ইন্টারভিউ এবং অ্যাপ্টিটিউট টেস্ট মিলিয়ে ৫ নম্বর করে মোট ১০ নম্বরের পরীক্ষা। পাঁচটা টেবিলে এক সঙ্গে ইন্টারভিউ হবে। গোটাটাই ভিডিয়োগ্রাফি করে তুলে রাখা হবে। যাতে স্বচ্ছতার সঙ্গে কোনও আপেস না হয়।’’
মঙ্গলবার এই কড়া নজরদারিতে ইন্টারভিউ দেওয়া দুই পরীক্ষার্থী অবশ্য বোর্ডের এই ব্যবস্থাপনায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, ‘‘আমরা আশাবাদী, এর পর হয়তো আমরা নিজেদের প্রাপ্য অধিকার পাব।’’ তবে নিরাপত্তার পাশাপাশি ইন্টারভিউয়ে একটি নতুন পরীক্ষাও যুক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। ইন্টারভিউ টেবিলে পরীক্ষার্থীদের সাদা বোর্ডে ক্লাস নিতে হচ্ছে। ঠিক যেমন ভাবে এক জন শিক্ষক ছাত্রদের পড়াবেন, সে ভাবেই নিজের বিষয় পড়িয়ে দেখাতে হচ্ছে বিশেষজ্ঞদের। যা একেবারেই নতুন বলে জানিয়েছেন পরীক্ষার্থীরা।