কেউ ফেরত চাইছেন চাকরির জন্য দেওয়া টাকা। প্রতীকী ছবি।
মানিক ভট্টাচার্য গ্রেফতার হলেন কি না, সেটা তাঁদের কাছে গৌণ। তাঁদের কেউ চাইছেন স্কুলের প্রাপ্য চাকরি, কেউ ফেরত চাইছেন চাকরির জন্য দেওয়া টাকা।
২০১৪ সালের টেট পরীক্ষায় পাশ করেও চাকরি পাননি চাকদহের বিশ্বজিৎ দাস। রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি গ্রেফতারের খবর শুনে মঙ্গলবার তিনি বলেন, “খুবই খুশি হয়েছি। কিন্তু আমরা যারা বৈধ ভাবে চাকরি পাওয়ার যোগ্য, তারা কি চাকরিটা পাব? যারা টাকা দিয়ে চাকরি কিনেছে, তাদের চাকরি যাবে?” তাঁর আক্ষেপ, “যারা পরীক্ষায় পাশ করেনি, তারাই চোখের সামনে একে-একে চাকরি পেয়ে গেল। আর আমি চাকরি পাওয়া দূরের কথা, তথ্য জানার অধিকারে একাধিক বার আবেদন করেও সুনির্দিষ্ট উত্তরটুকু পাইনি।” তাঁর অনুরোধ, “আদালত যেন আমাদের চাকরিটা সুনিশ্চিত করে।”
নদিয়ার পলাশিপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক মানিকের নামে সরাসরি টাকা নিয়ে চাকরি দেওয়ার অভিযোগ রুজু করেননি কেউ। কিন্তু সেই অভিযোগই হয়েছে তেহট্টের তৃণমূল বিধায়ক তাপস সাহার বিরুদ্ধে। তেহট্টেরই বাসিন্দা কৃষ্ণ ব্যাপারী তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে লিখিত অভিযোগে জানিয়েছিলেন, তাঁরা জন ১০ মিলে মোট ২৫ লক্ষ টাকা তাপস সাহার হাতে তুলে দিয়েছেন। এই নিয়ে তদন্তে নেমেছে দুর্নীতিদমন শাখা। তাপসের এক ঘনিষ্ঠ-সহ তিন জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। যদিও তাপস নিজের বিরুদ্ধে ওঠা এই ধরনের সব অভিযোগই অস্বীকার করেছেন।
এ দিন মানিকের গ্রেফতারির খবর শুনে কৃষ্ণ বলেন, “আমরা খুবই গরিব মানুষ। অনেক কষ্ট করে টাকা জোগাড় করতে হয়েছিল। মানিক ভট্টাচার্যের গ্রেফতার ও শাস্তির চেয়েও আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ টাকা ফেরত পাওয়া। কী ভাবে তা সম্ভব, সেটাই কেউ বলতে পারছে না।” বাহাদুরপুরের নিউটন সিকদারও বলছেন, “চাকরির জন্যই আমরা বড় অঙ্কের টাকা দিয়েছিলাম। কিন্তু কিছুই হল না। সিবিআই বা ইডি-র পদক্ষেপ করা উচিত।”
নদিয়ার কালীগঞ্জে ঘোড়াইক্ষেত্র গ্রামে মানিকদের পৈতৃক বাড়ি। সেখানে তালা ঝুলছে। উল্টো দিকে মাচায় বসে কয়েক জন মাঝবয়সি লোক। মানিকের গ্রেফতারি নিয়ে কথা উঠতেই, ‘এটা আইনের ব্যাপার’ বলে তাঁরা বিষয়টি এড়িয়ে যান। তবে ঘোড়াইক্ষেত্র হাই স্কুলের সামনে কিছু বিজেপি সমর্থক গেরুয়া আবির মেখে পরস্পরকে মিষ্টিমুখ করিয়েছেন। তাঁদেরই এক জন, জয়ন্ত সর্দার বলেন, “রাজ্যের শাসক দলের নেতা দুর্নীতি করেছিলেন, ধরা পড়েছেন। এটা তো সুখবর।”