প্রতীকী চিত্র।
বিজ্ঞান হোক বা কলা— যে কোনও বিষয় নিয়ে গবেষণাই তথ্য নির্ভর। সে ক্ষেত্রে কোনও বিশেষ বিষয় নিয়ে যখন গবেষণার কাজ শুরু করছেন, তখন শুরুতেই গাইডের সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজন হয়। এক বার সেই আলোচনা সম্পূর্ণ হওয়ার পর আসল কাজটি শুরু হয়। যথাযথ তথ্য সংগ্রহ করতে না পারলে গবেষণার মূল লক্ষ্যই পূরণ হবে না।
এর আগে কী ভাবে গবেষণার বিষয় বেছে নিতে হবে, কী কী সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এ বার কোন বিষয়ের ক্ষেত্রে তথ্য সংগ্রহের কাজ কী ভাবে করা যেতে পারে, সে বিষয়টা একটু বলা প্রয়োজন।
বিজ্ঞানের কোনও বিষয় নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে প্রাইমারি ডেটাবেসের জন্য পাঠ্যবই / সহায়িকা, সিস্টেম্যাটিক রিভিউ/ মেটা অ্যানালিসিস, ওয়েবসাইটের সাহায্য নেওয়া হয়ে থাকে। কিছু ক্ষেত্রে গাইডের কাছ থেকেও বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের সুযোগ থাকে। তবে, হিউম্যানিটিজ় শাখার বিষয়ের ক্ষেত্রে পাঠ্যবই বা সহায়িকার পাশাপাশি, তথ্যের জন্য সংবাদপত্র, ওয়েবপেজ / ওয়েবসাইট, প্রাচীন চিঠিপত্র, পুরোনো নথি, দলিল-দস্তাবেজ, সরকারি সমীক্ষার রিপোর্ট, চিত্রকরদের আঁকা আসল ছবি থেকে তথ্য সংগ্রহের সুযোগ থাকে। এ ক্ষেত্রেও গাইড তথ্যের উৎস হয়ে থাকেন।
এর পর, আরও বিশদ জানার জন্য প্রাথমিক ভাবে যে যে বিষয়গুলির তথ্য পাওয়া গিয়েছে, সেগুলি পর্যালোচনা করতে হবে। এতে যে ফলাফল পাওয়া যাবে, তা থেকেই বোঝা যাবে, কোথায় গলদ থেকে গিয়েছে। গবেষণা শুরুর আগে ওই গলদ খুঁজে বের করতে হবে, কাজের পরিভাষায় একে বলা হয় ‘রিসার্চ গ্যাপ’। এই ভাবে গবেষণার কাজ শুরু করতে পারলে, অচিরেই ভাল ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর জার্নালে প্রকাশনা বা পেটেন্টের আবেদন করা সহজ হয়ে যাবে।
ইন্টারনেট থেকে তথ্যে সংগ্রহের ক্ষেত্রে গুগল বা সমতুল্য সার্চ ইঞ্জিন নিজের সুবিধামতো বেছে নিতে হবে। তবে, একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে, যে ইন্টারনেটে পাওয়া সব লেখা বিশেষজ্ঞের নয়। যথপোযুক্ত এবং নির্ভরযোগ্য তথ্যের জন্য সেই সব ইউআরএল-এর লেখা পড়ুন, যেখানে ইংরেজিতে ‘গভ’ বা ‘এডু’ শীর্ষক শব্দ গুলি লেখা রয়েছে।
উল্লিখিত ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে একটি খসড়া তৈরি করুন এবং বিশেষ বিশেষ শব্দ (কিওয়ার্ড) বেছে নিন। এ ব্যাপারে গ্রন্থাগারের সাহায্য নেওয়া আবশ্যক। কারণ সেখানেই ভরসাযোগ্য জার্নাল, ই-বুক, ওয়েবসাইট কেনা হয়ে থাকে। এমনও হতে পারে, যে বিষয় নিয়ে গবেষণা করছেন, তার পুরোনো থিসিস পেয়ে গেলেন। বর্তমানে ডিজিটাল ফরম্যাটেও থিসিস পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে ‘কৃষিকোষ’ উল্লেখযোগ্য, যেখানে কৃষি বা প্রাণী স্বাস্থ্য ও প্রাণী পালন সম্পর্কিত থিসিস পাওয়া যায়।
তবে, শুধু বই বা থিসিস নয়, প্রাইমারি ডেটাবেস তৈরি করতে হলে রিসার্চ আর্টিকেল, সিস্টেম্যাটিক রিভিউ, মেটা অ্যানালাইসিস রিপোর্টকেও সমান ভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। এর জন্য গুগল স্কলার, পাবমেড, রিসার্চগেট, সোশ্যাল সায়েন্স রিসার্চ নেটওয়ার্ক (এসএসআরএন)-এ নজর রাখতে হবে। উল্লিখিত সাইটগুলিতে কিওয়ার্ড ব্যবহারের সময় ‘’ যতিচিহ্ন এবং একটি করে + চিহ্নও ব্যবহার করুন। তাহলে শুধুমাত্র প্রাসঙ্গিক আর্টিকেল দেখতে পারবেন।
জার্নালে আর্টিকেল প্রকাশনার ক্ষেত্রে একটি বিশেষ ফি জমা দিতে হয়, যাকে বলে আর্টিকেল প্রসেসিং চার্জ (এপিসি)। তবে, এই ফি দেওয়া বাধ্যতামূলক নয়। তবে, ওই ফি দিলে ‘ওপেন এক্সেস’ আর্টিকেল হিসাবে মাণ্যতা মেলে আর সহজেই বাকিরা তাডাউনলোড করার সুযোগ পেয়ে যান। যদিও ‘নন-ওপেন এক্সেস’ আর্টিকেল থেকেও অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সে ক্ষেত্রে এই বিষয়ে সিনিয়র গবেষক বা গাইডের কাছে সাহায্য চাইতে পারেন। এই ধরনের আর্টিকেল ডাউনলোডের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতে হতে পারে।
সত্যি বলতে, বর্তমান পরিস্থিতির নিরিখে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি তথ্য পাওয়া যায়। এ বিষয়টি ‘ইনফক্সিকেশন’ বা ‘ইনফোবেসিটি’ নামেও পরিচিত। তাই, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গবেষণার জন্য তথ্য সংগ্রহের পরে সিনিয়র গবেষক বা গাইডের সাথে আলোচনা করা বিশেষ ভাবে প্রয়োজন।
[লেখক পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান]