অয়নের বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া আসল ওএমআর শিট। নিজস্ব চিত্র।
নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে নেমে এর আগে থরে থরে নোটের তাড়া উদ্ধার করেছিল ইডি। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ‘ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া সেই নোটের ছবি দেখে আঁতকে উঠেছিলেন অনেকে। তবে এ বার নিয়োগ দুর্নীতির এক অন্য ছবি দেখাল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। এ ছবিতে দেখা যাচ্ছে থরে থরে সাজানো নিয়োগের পরীক্ষার উত্তরপত্র বা ওএমআর শিট। পরীক্ষার্থীরা সেই খাতায় পরীক্ষা দিয়েছেন। সাদা-গোলাপি ওএমআর শিটে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে তাঁদের পেনের দাগ। আর সেই সব উত্তরপত্র উদ্ধার হয়েছে নিয়োগ দুর্নীতি ইডির হাতে সম্প্রতি গ্রেফতার হওয়া অয়ন শীলের বাড়ি থেকে।
ইডি সূত্রে খবর এই প্রত্যেকটি ওএমআর শিটই আসল। অধিকাংশই পুরসভার বিভিন্ন পদের পরীক্ষার। কোনওটি পিয়ন পদের জন্য। কোনওটি করণিক অথবা শ্রমিকের চাকরি পাওয়ার জন্য। প্রত্যেকটিতেই পরীক্ষার্থীদের সই রয়েছে। তবে সেই সব উত্তরপত্র পরীক্ষার হল থেকে হুগলির প্রোমোটার অয়নের বাড়িতে কোন পথে এল তা-ই আপাতত খতিয়ে দেখছেন ইডির গোয়েন্দারা।
ওএমআর শিটের এই ছবিই প্রকাশ্যে এনেছে ইডি। নিজস্ব চিত্র।
অয়নের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে নিয়োগ দুর্নীতির এক সম্পূর্ণ অন্য দিক ইডির সামনে উন্মোচিত হয়েছে বলে আগেই দাবি করেছিল ইডি। সোমবার নগর দায়রা আদালতে অয়নের ইডি হেফাজত চেয়ে ইডির আইনজীবী যুক্তি দিয়েছিলেন, এত দিন তাঁরা ভেবে আসছিলেন শুধু স্কুলে নিয়োগের ক্ষেত্রেই দুর্নীতি হয়েছে। তবে এখন দেখা যাচ্ছে পুরসভার নিয়োগের ক্ষেত্রেও একই রকম দুর্নীতি হয়েছে।
ইডি সূত্রে খবর, অয়নের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে যে নথি তাঁদের হাতে এসেছে, তাতে স্পষ্ট অয়ন টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন পুরসভার চাকরি ‘বিক্রি’ করতেন। পিওন, কেরানি, শ্রমিক— সমস্ত পদের জন্য আলাদা আলাদা ‘রেট’ ছিল অয়নের। তবে ন্যূনতম ৪ লক্ষ টাকা দিতেই হত। সর্বোচ্চ মূল্য কখনও সখনও ৮ লক্ষ টাকাও ছুঁয়ে ফেলত। ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ৬০টি পুরসভার নিয়োগ নিয়ন্ত্রণ করেছেন অয়ন। পরীক্ষার্থীরা শুধু তাঁকে মূল্য ধরে দিলেই কাজ হয়ে যেত। কোনও না কোনও ভাবে বদলে যেত ওএমআর শিট। ইডির ধারণা বদলে যাওয়া ওএমআর শিট পৌঁছে যেত যথাস্থানে। আর আসল ওএমআর শিটগুলিই সম্ভবত চলে আসত অয়নের কাছে।
ইডি সূত্রে খবর, অয়নের বাড়ি থেকে পুরসভার পিওন পদের পরীক্ষার ৫টি আসল ওএমআর শিট, সহকারী পদের দু’টি, শ্রমিক পদের ৬৯টি এবং আরও নানা পদের দু’টি উত্তরপত্র পাওয়া গিয়েছে।