মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আর্জি জানিয়েছিলেন আইনজীবী তথা বামনেতা বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
চাকরি বাতিল নিয়ে মন্তব্যের জেরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননা মামলার হলফনামা জমা দিতে বলল কলকাতা হাই কোর্ট। বৃহস্পতিবার কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ এই নির্দেশ দিয়েছেন। স্কুলের চাকরি যাওয়া প্রার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন মমতা। তাই নিয়ে তাঁর করা একটি ‘ব্যক্তিগত’ মন্তব্যের জেরেই বুধবার মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননা মামলা করার প্রস্তাব আসে হাই কোর্টের কাছে। যার অনুমতিও দিয়েছিল হাই কোর্ট। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় ওই মামলার হলফনামা জমা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে সেই হলফনামা দাখিল না করায় প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, দুপুর ১টার মধ্যে হলফনামা জমা দিতে হবে।
মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আর্জি জানিয়েছিলেন আইনজীবী তথা বামনেতা বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। আলিপুর আদালত চত্বরের একটি অনুষ্ঠানে মমতার করা কয়েকটি ‘ব্যক্তিগত’ মতামতমূলক মন্তব্যের জেরে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে আদালত অবমাননার মামলা করার অনুরোধ করেছিলেন তিনি।
বিকাশের অভিযোগ, মমতা বলেছেন, ‘‘প্রধান বিচারপতি এখানে নেই, আমি সুব্রতদাকে (বিচারপতি সুব্রত তালুকদার) বলব, যিনি এখানে (উপস্থিত) আছেন। এটা আমার ব্যক্তিগত মত, দয়া করে এত সহজে চাকরি কেড়ে নেবেন না।’’ হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের কাছে বিকাশ মমতার ওই মন্তব্যের কথা জানিয়ে বলেন, ‘‘হাই কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে এ ব্যাপারে একটি আদালত অবমাননার মামলা করুক।’’ কিন্তু আদালত বিকাশের আর্জিতে পুরোপুরি সায় দেয়নি।
বিকাশের আর্জি শুনে বুধবার ডিভিশন বেঞ্চ বলেছিল, ‘‘কোনও অভিযোগের প্রেক্ষিতে আদালত অবমাননার শুনানির বদলে ভাল যদি কোনও মামলাকারী এ বিষয়ে আবেদন করেন।’’ এর পরেই বিকাশকে ডিভিশন বেঞ্চ বলে, ‘‘মামলা দায়ের করুন।’’ এমনকি, বৃহস্পতিবারের মধ্যেই এ বিষয়ে হলফনামা দাখিল করার পরামর্শও দিয়েছিল ডিভিশন বেঞ্চ। সেই হলফনামাই বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার মধ্যে জমা পড়ার কথা ছিল আদালতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যথাসময়ে তা জমা পড়েনি। এর পরই প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চ দুপুর ১টার মধ্যে হলফনামা দাখিল করতে নির্দেশ দেয়। চলতি সপ্তাহেই এই মামলার শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার আলিপুর আদালতে স্বাধীনতা সংগ্রামী অরবিন্দ ঘোষের মূর্তি উন্মোচন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে নিয়োগ দুর্নীতি মামলার প্রসঙ্গ। মমতা বলেন, ‘‘আমরা তো আইনজীবীদের উপর নির্ভর করি। বিচারপতিদের রায়কে সম্মান জানাই। আমি অধিকার কাড়ার পক্ষে নই। আমি অধিকার দেওয়ার পক্ষে। যেটা আইনত স্বীকৃত, সেই অধিকারের কথা বলছি।’’ এর পর তিনি বলেন, ‘‘আমি যদি অন্যায় করি, আপনারা গালে দুটো চড় মারুন। আমি কিচ্ছু মনে করব না। আমি ক্ষমতায় আসার পর একটাও সিপিএম ক্যাডারের চাকরি খাইনি। তা হলে তোমরা কেন খাচ্ছ? দেওয়ার ক্ষমতা নেই। কাড়বার ক্ষমতা আছে!’’ এর পরেই ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হাই কোর্টের বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের উদ্দেশে মমতা বলেন, ‘‘আমি সুব্রতদাকে বলব, যিনি এখানে আছেন। এটা আমার ব্যক্তিগত মত, দয়া করে এত সহজে চাকরি কেড়ে নেবেন না।’’ যা নিয়েই আদালত অবমাননার মামলা করার আর্জি জানান বিকাশ।