—প্রতীকী চিত্র।
জেলে ঢুকলেই প্রভাবশালীরা পা বাড়ান হাসপাতালের দিকে। এমন অভিযোগ এ রাজ্যে নতুন নয়। গত দশ বছরে বিভিন্ন দুর্নীতিতে ধৃত রাজ্যের মন্ত্রী-প্রভাবশালীদের ক্ষেত্রে এই প্রবণতা সমালোচিত হয়েছে আদালতেও।
এ বার জেলেই টেলি-মেডিসিন পরিষেবা চালু করতে চলেছে। তখন জেলে বসেই মিলবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ। হাসপাতালে যেতে হবে না জেলবন্দিদের। তবে সে ক্ষেত্রেও যে প্রভাবশালীদের হাসপাতাল-যাত্রা বন্ধ হবে এমন কথা হলফ দিয়ে বলতে পারছেন না প্রশাসনের কর্তারাই।
সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই রাজ্যে শুরু হতে পারে ওই টেলি-মেডিসিন পরিষেবা। কারা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথমে রাজ্যের আটটি কেন্দ্রীয় সংশোধনাগাগারে এই প্রকল্প চালু হবে। পরে পর্যায়ক্রমে তা ছড়িয়ে দেওয়া হবে জেলা এবং অন্য সংশোধনাগারগুলিতে।
কারা দফতর সূত্রে খবর, স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে এই পরিষেবা নিয়ে প্রাথমিক কথাবার্তা হয়েছে। এক কারা কর্তা বলেন, ‘‘প্রথমে দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে শুরু হবে এই পরিষেবা। দ্রুত স্বাস্থ্য দফতরের একটি দল সেখানে আসবে।’’
কেন এই ভাবনা?
কারা দফতর জানাচ্ছে, জেলে হাসপাতাল ও চিকিৎসক থাকলেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ প্রয়োজন হয় অনেক বন্দির। তখন তাঁদের সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। এক কারা কর্তা বলেন, ‘‘আমাদের জেলগুলিতে এমবিবিএস ডিগ্রিধারী চিকিৎসকেরা রয়েছেন। অনেক ক্ষেত্রেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ প্রয়োজন হয়। তাঁদের পক্ষে সবসময় রোগীদের সেই পরামর্শ দেওয়া সম্ভব হয় না।’’ তখন বন্দিদের বাইরের কোনও সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। পুলিশকে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হয়। মহিলা বন্দিদের ক্ষেত্রে মহিলা পুলিশকর্মী দিতে হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই হাসপাতালে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের পথ চেয়ে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। তাতে অর্থ ও সময় ব্যয় হয় অনেক। পাশাপাশি, বন্দিদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিও থাকে। জেলে টেলি-মেডিসিন পরিষেবা চালু হলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে। পাশাপাশি, জেলে বসেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ পাবেন বন্দিরা।
কী ভাবে মিলবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ?
কারা দফতর জানায়, গোটা ব্যবস্থা চলবে ইন্টারনেটের মাধ্যমে। যার একপ্রান্তে থাকবেন রোগী (বন্দি) এবং সংশ্লিষ্ট জেলের চিকিৎসক। অপর প্রান্তে থাকবেন রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা। রোগী তাঁর সমস্যার কথা জানাবেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে। তিনি চিকিৎসা ও প্রতিষেধক বলে দেবেন। রোগীকে সে সব বুঝিয়ে দেবেন তাঁর সঙ্গে থাকা জেলের চিকিৎসক। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ই-প্রেসক্রিপশন দেবেন। জেল কর্তৃপক্ষ ওষুধের ব্যবস্থা করবেন। তবে কোনও ক্ষেত্রে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার বা ভর্তি করানোর পরামর্শ দিলে তা করা হবে।
এই পরিষেবা গোটা রাজ্যে চালু হতে কত সময় লাগবে তা অবশ্য এখনই স্পষ্ট নয়। তবে কারা দফতরের আধিকারিকদের আশা, খুব বেশি সময় লাগার কথা নয়। কারণ, ই-প্রিজ়ন প্রকল্পের অঙ্গ হিসাবে জেলে ইন্টারনেট পরিষেবা চালু হয়েছে অনেক আগেই। ই-মুলাকাত ব্যবস্থায় বন্দিরা তাঁদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলছেন। ভিডিয়ো কনফারেন্স ব্যবস্থা চালু হয়েছে। বন্দিদের আদালতে হাজির করানোর ক্ষেত্রেও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে। সব মিলিয়ে জেলগুলিতে ইন্টারনেট পরিষেবা এখন যথেষ্ট উন্নত।