দশম এবং দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় টিআইজিপিএস-এর সব ক’টি স্কুলের পড়ুয়াদের ফলাফলই নজরকাড়া। —নিজস্ব চিত্র।
সিবিএসই-তে ফের নজির গড়ল টেকনো ইন্ডিয়া গ্রুপ পাবলিক স্কুল (টিআইজিপিএস)। দশম এবং দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় এই গোষ্ঠীর সব ক’টি স্কুলের পড়ুয়াদের ফলাফলই নজরকাড়া। তবে টিআইজিপিএস-এর হুগলি ও বোলপুর শাখার পড়ুয়ারা যেন বাকি সব শাখাকে ছাপিয়ে গিয়েছে। ওই দু’টি স্কুলের তিন জন সিবিএসই-তে ৯৯ শতাংশ বা তার বেশি নম্বর পেয়েছে। হুগলি শাখার স্কুলের ১৮৫ জন পড়ুয়া এ বছর সিবিএসই পরীক্ষা দিয়েছিল। তারা প্রত্যেকেই প্রথম বিভাগে পাশ করেছে।
হুগলি শাখার ছাত্রী শুভশ্রী রক্ষিত রাজ্য সিবিএসই-তে প্রথম হয়েছে। মোট ৯৯.২ শতাংশ নম্বর পেয়েছে শুভশ্রী। কলা বিভাগের শুভশ্রী বরাবর পরীক্ষায় ভাল ফল করে এসেছে। তবে দ্বাদশ শ্রেণিতে একেবারে রাজ্যে প্রথম হবে, তা সে নিজেও ভাবতে পারেনি। ভদ্রেশ্বরের বাসিন্দা শুভশ্রী জানিয়েছে, তার প্রিয় বিষয় ইংরেজি। ভবিষ্যতে তা নিয়েই পড়াশোনা করতে চায়। জীবনবিমার আধিকারিক বাবা এবং আয়কর দফতরের কর্মী মায়ের উৎসাহ বরাবরই সাহস জুগিয়েছে শুভশ্রীকে। তার ভবিষ্যতের লক্ষ্য, অধ্যাপনা করা। তবে পড়াশোনার চাপ থাকলেও কবিতা লেখা, ছবি আঁকা বা নাচের অনুশীলনও সমানতালে চালিয়ে গিয়েছে শুভশ্রী।
শুভশ্রীর মতোই টেকনো গ্রুপের মুখ উজ্জ্বল করেছে অভিরূপ দেব এবং শুভম বিশ্বাস। সিবিএসই-র দশম শ্রেণির অভিরূপ ৯৯ শতাংশ নম্বর পেয়েছে। হুগলি শাখার ওই ছাত্র বিজ্ঞানের বিষয়গুলিতে অপ্রত্যাশিত ভাল ফল করেছে। ভবিষ্যতে জীববিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করতে চায় সে। সেই সঙ্গে দেশ-বিদেশের নামী প্রতিষ্ঠানের গবেষণা করে অধ্যাপনায় মন দিতে চায় অভিরূপ। চুঁচুড়ার বাসিন্দা অভিরূপ আপাতত লকডাউনের ফলে ঘরবন্দি। ক্রিকেট বা ফুটবল খেলা খুবই মিস করছে বলেও জানিয়েছে সে। তাই গল্পের বই নিয়েই সময় কাটছে তার। অভিরূপের বাবা সরকারি কর্মচারী। মা আইনজীবী। শিক্ষকদের পাশাপাশি তাঁদের উৎসাহই অভিরূপের অনুপ্রেরণা।
শুভম বিশ্বাস, শুভশ্রী রক্ষিত এবং অভিরূপ দেব (বাঁ-দিক থেকে)। —নিজস্ব চিত্র।
দশম শ্রেণিতে ভাল ফল করবে, এমনটা প্রত্যাশা করেছিল টিআইজিপিএস-এর বোলপুর শাখার শুভম। বেশ বুদ্ধিমত্তার ছাপ রয়েছে ৯৯ শতাংশ নম্বর পাওয়া শুভমের কথাবার্তায়। তার বাবা বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকারিক। মা স্কুলের শিক্ষিকা। তার সাফল্যের পিছনে যে মা-বাবার যথেষ্ট অবদান রয়েছে, সে কথা জানিয়েছে শুভম। তার কথায়, “যে কোনও ভাল ছাত্র-ছাত্রীর সাফল্যের পিছনে অনেকের অবদান থাকে। মা-বাবা, শিক্ষকেরা মিলে প্রথম যে শিক্ষাটি দিয়েছেন, তা হল, পরিশ্রম করতে হবে।” বায়োকেমিস্ট্রি নিয়ে গবেষণা করে অধ্যাপক হওয়ার ইচ্ছে রয়েছে শুভমের। তবে জোরকদমে পড়াশোনা চালিয়ে গেলেও তারই ফাঁকে কবিতা লেখা, ছবি আঁকা বা বাঁশি বাজানোর অভ্যাসও বজায় রেখেছে সে।
শুধুমাত্র শুভম, অভিরূপ বা শুভশ্রীই নয়, টেকনো গ্রুপের উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের সব স্কুলেরই সিবিএসই ফলাফল নজরকাড়া। দ্বাদশ শ্রেণিতে শিলিগুড়ির ছাত্র অগ্নিভ গুহঠাকুরতা (৯৭.৮ শতাংশ) অনমিত্র মজুমদার (৯৭.৪ শতাংশ), সোহম মণ্ডল (৯৬.৬ শতাংশ), উৎসা রায় (৯৬ শতাংশ), বা হুগলির অহনা বন্দ্যোপাধ্যায় (৯৭ শতাংশ), ভাবনা সিংহ (৯৬.৮ শতাংশ), অনন্যা গড়াই (৯৬.৮ শতাংশ), বৈভব আগরওয়াল (৯৬.৮ শতাংশ), কৌশিক সাহা (৯৬.২ শতাংশ), সাগ্নিক ঘোষ (৯৬ শতাংশ) এবং কোচবিহারের শেখ মাসুম রানা (৯৬ শতাংশ)— প্রত্যেকেই ভাল ফলাফল করেছে।
দশম শ্রেণির ক্ষেত্রে ৯৮.৮ শতাংশ নম্বর পেয়েছে হুগলির অনির্বাণ মাইতি, শিঞ্জন দাসের নম্বর ৯৮.২ শতাংশ। অন্য দিকে, বোলপুরের ধ্রুব সিংহ ও অয়ন্তিকা রক্ষিত দুজনেই পেয়েছে ৯৮ শতাংশ নম্বর। শিলিগুড়ির ত্রিলোকজিৎ বসু (৯৭.৮ শতাংশ) ছাড়াও হুগলির স্পন্দন দাস এবং কোচবিহারের সাত্ত্বিক চক্রবর্তী— দু’জনেরই প্রাপ্ত নম্বর ৯৬.৮ শতাংশ করে।
সিবিএসই-তে এই সাফল্যে পড়ুয়াদের অভিনন্দন জানিয়েছেন টেকনো ইন্ডিয়া গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সত্যম রায়চৌধুরী। একটি বিজ্ঞপ্তিতে তিনি বলেন, “এই সাফল্য বলে দেয়, এক দিন তোমরা শীর্ষে পৌঁছবে। আমার আন্তরিক শুভকামনা রইল।”