—ফাইল চিত্র।
দফায় দফায় অনশন-সহ নানা ভাবে আন্দোলন হয়েছে আগে। আজ, বৃহস্পতিবার শিক্ষক দিবসে বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে আবার রাস্তায় নামছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা।
শিক্ষকদের ক্ষোভ, সারা বছর ধরে শিক্ষক-নিগ্রহের ঘটনা ঘটতে থাকবে, শিক্ষকদের অপমান করা হবে আর শুধু শিক্ষক দিবসে শিক্ষকদের শ্রদ্ধা জানানো হবে! এই দ্বিচারিতার বিরোধিতা করছেন তাঁরা। আজ বিকেলে কলেজ স্কোয়ার থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত মিছিল করবে বেশ কয়েকটি স্কুলশিক্ষক সংগঠন। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুটা-ও এ দিন বিভিন্ন দাবিতে মিছিলের ডাক দিয়েছে।
নিয়োগের দাবিতে প্যানেলে থাকা উচ্চ প্রাথমিক স্তরে চাকরি-প্রার্থীরা শিক্ষক দিবসে মিছিল করবেন শিয়ালদহ থেকে। বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির ডাকে শিক্ষক দিবসের সব সরকারি অনুষ্ঠান বর্জন করে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বিক্ষোভ মিছিল এবং সভাও হবে আজ।
শিক্ষক দিবসে রাজ্য সরকারের অনুষ্ঠানে হাজার দশেক শিক্ষক হাজির থাকছেন নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে। কলকাতা, হাওড়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, নদিয়া ও হুগলি থেকে শিক্ষক-শিক্ষিকারা আসছেন। কিন্তু এ বার আসছে না কোনও পড়ুয়া। এক জেলা স্কুল পরিদর্শক জানান, গত দু’বছর পড়ুয়ারা এসেছিল। তাদের ভারী টিফিন ও বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এ বার যাতায়াতের খরচ ও ভারী টিফিন দেওয়া হচ্ছে শিক্ষকদের।
স্কুলশিক্ষকদের দাবি
• বেতন কমিশনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা ও রূপায়ণ।
• কেন্দ্রীয় হারে বকেয়া ডিএ।
• অবসরের বয়স কমপক্ষে ৬২।
• সরকারি কর্মীদের মতো স্বাস্থ্য প্রকল্প।
• ছাত্র-শিক্ষক অনুপাতে শিক্ষক নিয়োগ।
• পার্শ্ব শিক্ষকদের জন্য বেতন-কাঠামো।
• শিক্ষকদের উপরে আক্রমণ বন্ধ করা।
কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দাবি
• ইউজিসি-র নির্দেশ মেনে সপ্তম বেতন কমিশন চালু।
• খসড়া জাতীয় শিক্ষানীতি বাতিল।
• চুক্তিভিত্তিক ও আংশিক সময়ের শিক্ষক, চুক্তিভিত্তিক গ্রন্থাগারিকদের বেতনক্রম।
• শিক্ষকদের উপরে আক্রমণ বন্ধ করা।
• বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি নির্ধারক বডিগুলিতে নির্বাচিত প্রতিনিধি।
যে-সব শিক্ষক সংগঠনের শিক্ষকেরা এ দিনের অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন না, তাদের মধ্যে রয়েছে নিখিল বঙ্গ শিক্ষক সমিতি। ওই সংগঠনের রাজ্য সভাপতি কৃষ্ণপ্রসন্ন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘সারা বছর শিক্ষকদের হেনস্থা করা হচ্ছে, বিদ্যালয়ে ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে আর শিক্ষক দিবসের দিন শিক্ষকদের শ্রদ্ধা জানানোর বার্তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে! এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি আমরা। এটা ঘৃণ্য রাজনৈতিক কৌশল ছাড়া কিছু নয়।’’
আবার কোনও কোনও শিক্ষক সংগঠনের অভিযোগ, সরকারি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে শুধু সরকারপন্থী শিক্ষক সংগঠনগুলোর শিক্ষকদেরই। পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নবকুমার কর্মকারের অভিযোগ, ‘‘রাজ্যের অনেক স্বীকৃত শিক্ষক সংগঠনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। শুধু সরকারপন্থী শিক্ষকদেরই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। শিক্ষক দিবসে এই বৈষম্যের প্রতিবাদ করছি।’’ পশ্চিমবঙ্গ প্রধান শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শ্রীদাম জানা বলেন, ‘‘শিক্ষকদের সম্মাননা অনুষ্ঠানে শিক্ষক সংগঠনগুলোকেই আমন্ত্রণ জানানো হল না। আমরা শিক্ষক দিবসে কোনও বক্তব্যই পেশ করার সুযোগ পেলাম না।’’ পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি সাধারণ সম্পাদক নিমাই মণ্ডল বলেন, ‘‘শিক্ষক দিবসে শিক্ষক সংগঠনের গুরুত্ব নেই। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ করছি।’’ পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দিব্যেন্দু মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘আমি এক জন শিক্ষক হিসেবে আমন্ত্রণপত্র পেয়েছি। আলাদা করে আমাদের সংগঠনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।’’
এ বার শিক্ষক দিবসে আমন্ত্রিত হয়নি পড়ুয়ারাও। এই নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে শিক্ষক সংগঠনগুলোর।