ফাইল চিত্র।
কাজ ছেড়ে আসা শিশু শ্রমিকদের স্কুলে পড়ানোই ছিল তাঁদের পেশা। কিন্তু সে বাবদ প্রাপ্য কেন্দ্রীয় অনুদান বন্ধ হওয়ায় পেশা বদলাতে হয়েছে শিশু শ্রমিকদের স্কুলের বহু শিক্ষককে। তাঁদের অনেকে এখন শ্রমিক। কেউ ঠেলাগাড়ি চালাচ্ছেন, কেউ বা চা-তেলেভাজার দোকান খুলেছেন। বিড়িও বাঁধছেন কেউ।
শিশু শ্রমিক স্কুলের শিক্ষক-কর্মীদের সংগঠন ‘স্টাফ অ্যাসোসিয়েশন অব স্পেশাল ট্রেনিং সেন্টার’-এর পুরুলিয়ার জেলা সম্পাদক মুস্তাফা শাহের দাবি, ‘‘শিশু শ্রমিকদের কাজ থেকে সরিয়ে পড়াশোনার বৃত্তে নিয়ে আসা শিক্ষক ও কর্মীরা এখন নিজেরাই শ্রমিকে পরিণত হয়েছেন।” পুরুলিয়ার সহকারী শ্রম মহাধ্যক্ষ অঙ্কন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘শিশু শ্রমিক স্কুলের অনুমোদন ও শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের ভাতার অর্থ দেয় কেন্দ্রীয় শ্রম মন্ত্রক। এ ক্ষেত্রে কার্যত কিছু করার নেই।” তবে কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী তথা বিজেপি সাংসদ সুভাষ সরকারের আশ্বাস, ‘‘শ্রম মন্ত্রকের সঙ্গে কথা বলব।’’
পুরুলিয়ার ২০টি ব্লক ও তিনটি পুরসভায় শিশু শ্রমিক স্কুলের সংখ্যা ৮৯। ২০১৯-এ শ্রম দফতরের সমীক্ষায় দেখা যায়, স্কুলগুলিতে প্রায় সাড়ে চার হাজার শিশু শ্রমিক পড়ছে। সেখানে শিক্ষক ছিলেন তিন জন করে। এক জন করে করণিক, এক জন করে পিওনও রয়েছেন। শিক্ষকেরা মাসিক সাত হাজার, করণিক পাঁচ হাজার ও পিওন তিন হাজার টাকা করে ভাতা পেতেন। সূত্রের খবর, ২০০৭-এ শুরু হওয়া এই স্কুলগুলি ২০১৯-এর ডিসেম্বর থেকে বন্ধ রয়েছে। একই সময় থেকে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের ভাতাও বন্ধ। সেই থেকে অনিশ্চয়তার মুখে কম-বেশি সাড়ে চারশো শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী। মুস্তাফা বলেন, ‘‘ভাতা না পেয়ে আতান্তরে পড়েছেন সবাই। সংসার চালাতে বিভিন্ন পেশা বেছে নিয়েছেন।’’ পাড়া ব্লকের হরিহরপুর গ্রামের শিশু শ্রমিক স্কুলের এক শিক্ষক এখন বিড়ি বাঁধেন। তাঁর খেদ, ‘‘শিশু শ্রমিকদের এক সময়ে বিড়ি বাঁধার কাজ থেকে ছাড়িয়ে স্কুলে ভর্তি করিয়েছিলাম। এখন নিজেই বিড়ি বাঁধছি। না হলে সংসার চালাব কী করে?’’ পাড়ার আর এক স্কুলশিক্ষক ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করছেন।
এই পরিস্থিতিতে শিশু শ্রমিক স্কুলের শিক্ষক-কর্মীদের সংগঠনের আর্জি, সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হোক রাজ্য। মুস্তাফার দাবি, ‘‘ দুরবস্থার কথা জানিয়ে কেন্দ্রের শ্রম মন্ত্রকে একাধিক বার চিঠি দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও চিঠি পাঠিয়েছি। সাড়া পাইনি। আমরা চাইছি, রাজ্য সরকার শিশু শ্রমিক স্কুল পরিচালনার দায়িত্ব নিক।’’ জেলা সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারস্থও হয়েছিল ওই সংগঠন। সুজয়বাবু বলেন, ‘‘কেন্দ্র টাকা না দেওয়ায় বিপন্ন হয়ে পড়েছেন অতগুলো মানুষ। বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নজরে আনব।’’