ফাইল চিত্র।
সরকার পোষিত ও সাহায্যপ্রাপ্ত বিভিন্ন স্কুল একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা ফি নেয়। কিছু স্কুলে সেই ফি খুবই বেশি বলে শিক্ষা শিবিরের একাংশের অভিযোগ। তাদের বক্তব্য, সরকারের তরফেই ভর্তি ফি নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। অতিমারি পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে সরকার পোষিত ও সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলে অভিন্ন ফি-কাঠামো চালু করার দাবি তুলেছে বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন।
মধ্যশিক্ষা পর্ষদ জানিয়েছিল, ২০ জুলাইয়ের মধ্যে মাধ্যমিকের ফল প্রকাশ করা হবে। সাধারণত তার পরের দিন থেকেই একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি শুরু করে বিভিন্ন স্কুল। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বক্তব্য, সরকার পোষিত ও সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলে প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ভর্তির ক্ষেত্রে একটি অভিন্ন ফি-কাঠামো থাকলেও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে তা নেই। ফলে বিভিন্ন স্কুল ভর্তির সময় নিজেদের ইচ্ছেমতো ফি নেয়। এই অবস্থায় একাদশ-দ্বাদশের জন্যও অভিন্ন ন্যূনতম ভর্তি-ফি চালু করার দাবি জানিয়ে রাজ্যের শিক্ষা দফতরে চিঠি পাঠিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতি। ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নবকুমার কর্মকার বুধবার বলেন, “কিছু স্কুলে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির ফি অনেকটাই বেশি। অতিমারিতে বহু মানুষেরই আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। ফলে দরিদ্র মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের পক্ষে এই সব স্কুলে ভর্তি হওয়া কঠিন।”
কলকাতা এবং জেলার বেশ কিছু স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ভর্তির ফি দু’-তিন হাজার টাকারও বেশি। আবার শহরের অন্য কিছু স্কুলে ভর্তি ফি এক হাজারের মধ্যেই। যদিও সুযোগ-সুবিধার দিক দিয়ে সেই স্কুলগুলি পিছিয়ে নেই। বেশি ফি নেওয়ার কারণ হিসেবে স্কুলগুলির যুক্তি, স্থায়ী শিক্ষক কম থাকায় একাদশ-দ্বাদশে আংশিক সময়ের শিক্ষক রাখতে হয় এবং তাঁদের কিছু অর্থও দিতে হয়। তা ছাড়াও স্কুলের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা এবং ‘ডেটা এন্ট্রি’র মতো নানা কাজের জন্য কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে এক-এক রকম অঙ্কের টাকা খরচ করে স্কুলগুলি। তাই পড়ুয়াদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিতে হয়। এই অবস্থায় উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে সর্বাধিক ক’টি বিষয়ের পঠনপাঠন আংশিক সময়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দিয়ে চালানো যাবে, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ সেটা স্থির করে দিলে অভিন্ন ফি নির্দিষ্ট করতে সুবিধা হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করেছেন নবকুমারবাবু।
অতিরিক্ত ফি কমানোর দাবি সমর্থন করেছে অন্যান্য শিক্ষক সংগঠনও। নিখিল বঙ্গ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুকুমার পাইন বলেন, “কিছু স্কুল ভর্তির সময় অত্যন্ত বেশি ফি নেয়। বিজ্ঞান শাখায় ল্যাবরেটরির সুবিধার কারণ দেখিয়ে বেশি টাকা নিলেও অনেক সময় দেখা যায়, পড়ুয়া-সংখ্যার তুলনায় ল্যাবরেটরির পরিকাঠামো পর্যাপ্ত নয়। সরকারের উচিত, ভর্তি ফি নিয়ন্ত্রণ করা।” মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ মিত্রের বক্তব্য, স্কুলভবন জীবাণুমুক্ত করা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং রক্ষণাবেক্ষণের সব খরচ স্কুলকেই বহন করতে হয়। তাই তারাও সেগুলো চাপিয়ে দেয় অভিভাবকদের উপরে। ‘‘এই পুরো বিষয়টির দায়িত্ব সরকারের নেওয়া উচিত। তা হলেই ভর্তির ক্ষেত্রে অভিন্ন ফি-কাঠামো চালু করা যাবে,” বলেন বিশ্বজিৎবাবু।