—ফাইল চিত্র।
সুদীর্ঘ আইনি টানাপড়েনের পরে অবশেষে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় নতুন প্রার্থীরা খুশি। কিন্তু পুরনো শিক্ষকদের মধ্যে যাঁরা নিজের জেলায় বদলির প্রতীক্ষায় দিন গুনছেন, তাঁরা পড়েছেন দুর্ভাবনায়। কারণ, অনলাইন কাউন্সেলিং শেষে এক সপ্তাহের মধ্যেই নতুন প্রার্থীরা নিয়োগপত্র হাতে পেয়ে যাবেন বলে জানিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। আর বদলি-প্রত্যাশী পুরনো শিক্ষকদের আশঙ্কা, নতুন ১০,৫০০ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগ হয়ে গেলে তাঁদের নিজের জেলায় বদলির প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাই অবিলম্বে ওই বদলির প্রক্রিয়া শুরু করে দেওয়ার দাবি জোরদার করছেন তাঁরা।
শিক্ষায় গতি আনতে এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বাড়ির কাছাকাছি স্কুলে পড়ানোর সুযোগ দিতে তাঁদের নিজের নিজের জেলায় বদলির কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই অনুযায়ী বদলি শুরুও হয়েছিল। কিন্তু অভিযোগ উঠছে, বদলির আবেদন করা সত্ত্বেও বহু প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষিকার এখনও নিজের জেলায় বদলি হয়নি।
‘‘মুখ্যমন্ত্রী ২০২০ সালের সরস্বতী পুজোর সময় নিজের জেলায় বদলির কথা ঘোষণা করেছিলেন। সেই বদলির জন্য ১০ হাজার শিক্ষকের তালিকাও প্রকাশ করা হয়েছিল। এখনও চার হাজারের কিছু বেশি শিক্ষকের বদলি বাকি। বার বার আবেদন করা সত্ত্বেও বদলি হয়নি,’’ বলেন বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনন্দ হণ্ডা। তিনি জানান, বিধানসভা নির্বাচনের আগে প্রাথমিক শিক্ষকদের কাছ থেকে বদলির কিছু আবেদনও নেওয়া হয়েছিল। ভোটের ফল বেরোনোর পরে আরও দু’মাস কেটে গিয়েছে। এখনও শিক্ষকদের বদলি করতে উদ্যোগী হয়নি সরকার।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাশীপুরে একটি প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতা করেন বিশ্বজিৎ মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘আমার বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরের ভূপতিনগরে। নিজের জেলার কোনও স্কুলে যেতে চাই। কিন্তু এখনও বদলি হল না।’’ একই সমস্যার কথা বলেছেন পুরুলিয়ার একটি স্কুলের প্রাথমিক শিক্ষক তুষার লায়েকও।
আনন্দবাবু জানান, এই বিষয়ে তাঁরা শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে এবং শিক্ষা দফতরে চিঠি দিয়েছেন। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য সোমবার আশ্বাস দিয়েছেন, “বদলি প্রক্রিয়া বন্ধ হয়নি। এই নিয়ে কাজ চলছে।”
এ দিকে, নিজের জেলায় পুরনো শিক্ষকদের বদলির দাবির আবহেই প্রাথমিকে ১০,৫০০ জন শিক্ষক নিয়োগের বাকি কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। মানিকবাবু জানান, করোনা পরিস্থিতিতে প্রার্থীদের কলকাতার অফিসে ডেকে অফলাইন কাউন্সেলিং করলে পুরো প্রক্রিয়া শেষ হতে তিন থেকে চার মাস সময় লেগে যেত। অনলাইনে কাউন্সেলিং করায় এক সপ্তাহের মধ্যেই পুরো কাজ সম্পূর্ণ হয়ে যাবে। ‘‘প্রার্থী যে-জেলায় শিক্ষকতা করতে চান, সেই পছন্দের জেলার নাম কাউন্সেলিংয়ের সময় অনলাইনে জানাবেন। কাউন্সেলিং শেষ হলেই প্রার্থীরা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা দফতর থেকে নিয়োগপত্র পাবেন,” বলেছেন পর্ষদ-প্রধান।
মানিকবাবু জানান, মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী পুজোর আগেই ১০,৫০০ জন প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ করার কথা। তাঁদের আশা, পুজোর অনেক আগেই, এক সপ্তাহের মধ্যেই তাঁরা এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করে ফেলতে পারবেন।