মোনালিসা দাস। ছবি মোনালিসার হোয়াটসঅ্যাপ ডিপি থেকে নেওয়া।
শান্তিনিকেতনে তাঁর কোনও বাড়ি নেই। ফলে, সেই বাড়িতে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টররেট (ইডি)-এর অভিযান চালানোর কোনও প্রশ্নই নেই! তাঁর নামে যা-যা বলা হচ্ছে, সবই অসত্য। বললেন অধ্যাপিকা মোনালিসা দাস।
রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতারের আগে থেকেই মোনালিসার নামটি মন্ত্রী ‘ঘনিষ্ঠ’ হিসেবে বিভিন্ন মহলে ঘোরাফেরা করছে। পাশাপাশিই ছড়িয়েছে এমন সব ‘খবর’-ও যে, মোনালিসার শুধু শান্তিনিকেতনেই ন’টি বাড়ি রয়েছে। সেই সব বাড়িতেও নাকি ইডি ইতিমধ্যেই তল্লাশি চালিয়েছে। অন্যান্য কয়েকটি সূত্রে দাবি করা হচ্ছিল, ইডির হাতে আটক অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের মতোই মোনালিসার উপরেও নাকি ‘নজর’ রেখেছে ইডি।
তার সত্যাসত্য জানতেই শনিবার সরাসরি মোনালিসার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। তিনি সাফ বলেছেন, তাঁর নামে যা-যা বলা হচ্ছে, সবই ‘অসত্য’। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘‘না, এ ব্যাপারে (বিভিন্ন পরিসরে তাঁর নামের উল্লেখ) আমার কোনও প্রতিক্রিয়া নেই। আমি অত্যন্ত সাধারণ এক জন শিক্ষক মানুষ। সাধারণ জীবনযাপন করি। বাইরে থেকে কে কী বলছেন, না বলছেন, সেটা নিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করতে পারব না। আমার কোনও রকম কোনও প্রতিক্রিয়া নেই এ প্রসঙ্গে।’’
আসানসোলের কাজি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলার বিভাগীয় প্রধান মোনালিসা। আসানসোলের এসবি গড়াই রোডের বরফকল মোড়ের বিবেকানন্দ পল্লিতে একটি ভাড়াবাড়িতে থাকেন তিনি। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় পাঁচ বছর ধরে তিনি একাই ওই এলাকায় ভাড়াবাড়িতে থাকতেন। কিন্তু সম্প্রতি বেশ কিছু দিন তিনি ওই বাড়িতে যাতায়াত করেননি। তবে কলকাতাতেও বাড়ি আছে মোনালিসার। পার্থের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক কেমন? মোনালিসা বলছেন, ‘‘এক জন শিক্ষকের সঙ্গে এক অভিভাবকের যেমন সম্পর্ক হয়, আমাদেরও তেমন।’’
টানা ২৭ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের শেষে শনিবার সকালে ইডির হাতে গ্রেফতার হয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ। ইডির দাবি, ‘পার্থ-ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতার ফ্ল্যাট থেকে ২১ কোটিরও বেশি নগদ টাকা উদ্ধার করেছে তারা। শুক্রবার সন্ধ্যায় যখন অর্পিতার বাড়িতে ইডি তল্লাশি চালাচ্ছে, সেই সময়েই একাধিক পরিসরে বলা হতে থাকে, বীরভূমের শান্তিনিকেতনে একাধিক বাড়িতে অভিযানে ব্যস্ত ইডি। তখনই উঠে আসে মোনালিসার নাম। নেটমাধ্যমেও সেই বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ে।
সেই সূত্রেই তাঁর সঙ্গে শনিবার যোগাযোগ করেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। মোনালিসা বলেন, ‘‘আমার শান্তিনিকেতনে কোনও বাড়ি নেই। আপনাদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি, শান্তিনিকেতনে আমার কোনও বাড়ি নেই।’’ তা হলে সকলে কেন এমন বলছে? মোনালিসার জবাব, ‘‘সম্পূর্ণ অসত্য কথা! আমার কিচ্ছু বলার নেই। আমি এক জন সাধারণ শিক্ষক মানুষ। শিক্ষক পরিবারের সন্তান। সততার সঙ্গে বাঁচি। সততার সঙ্গেই থাকব। বাকি বাইরে থেকে কোনও মানুষ কিছু মন্তব্য করলে তার কোনও দায় আমার নেই।’’
তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘যা বলা হচ্ছে, তা অত্যন্ত অমূলক। আমার অর্জন, আমার চাকরি, আমার পড়াশোনা— এই সব কিছুর বিষয়েই আমি ভীষণ ভাবে সৎ। তিনি (পার্থ) শিক্ষামন্ত্রী। শিক্ষা দফতরে ছিলেন। আমি একজন শিক্ষক। কাজে কখনও কোনও যোগাযোগ হতেই পারে। ততটুকুই। তার থেকে বেশি কিছু নয়। তিনি আমার গুরুজন। তিনি অভিভাবক। একজন অত্যন্ত মান্য ব্যক্তি। আমার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক একজন অভিভাবক এবং শিক্ষকের সম্পর্ক।’’
ফোন কেটে যাওয়ার আগে মোনালিসা আবার বললেন, ‘‘আমি জানি, আমি ১০০ ভাগ সৎ এক জন মানুষ। নিজের অর্জনেই চলি।’’