তৃপ্তির-হাসি: নিজের হাতে ফসল ফলানোর অানন্দ। নিজস্ব চিত্র
সাইকেলে দেশ ভ্রমণে বেড়িয়ে ঝাড়খণ্ডের আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া অঞ্চলের ছেলেমেয়েদের করুণ দশা দেখেছিলেন তিনি। স্থির করেন, তাদের জন্য কিছু করবেন। তাই জঙ্গলমহলের সাঁওতাল এবং হো সম্প্রদায়ের ছেলেদের সঙ্গে নিয়ে বাড়িতেই তেলের ঘানি তৈরি করেছেন হলদিয়ার বিশ্বনাথ সামন্ত।
পেশায় ভূগোলের শিক্ষক ব্যাঙ্ক ঋণ নিয়ে তাঁর হলদিয়ার বাড়ি সংলগ্ন এলাকায় ২০০১ সালে তৈরি করেছিলেন ‘ভারত সেবা মিশন’। প্রায় ৫০ ডেসিমাল জায়গা কিনে সেখানে তিনি তৈরি করেছেন দরিদ্র, অনাথ, দৃষ্টিহীন ছেলেদের জন্য আবাসন ও স্ব-নির্ভর করার কর্মশালা। বিশ্বনাথবাবুর বাড়িতে এই মুহূর্তে ঠাঁই হয়েছে ২৮ জন ছেলের। এরা বেশিরভাগই জঙ্গলমহল এলাকার। আবার অনেকেই আবার এসেছে ঝাড়খণ্ডের পাহাড়ি এলাকা থেকে। উল্লেখ্য, ২৮ জনের মধ্যে অনেকেই স্কুল-কলেজে পড়াশোনা করে। আবার যারা বয়সে একটু বড়, তারা নানা ধরনের হাতের কাজ শেখে। কেউ শেখে মাশরুমের চাষ। কেউ আবার মন দিয়েছে নার্সারির কাজে।
পাশাপাশি, বিশ্বনাথবাবুর বাড়ির তেলের ঘানির জন্য রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশ থেকে খাঁটি সর্ষে আমদানি করেছেন। সেই সর্ষে থেকেই তৈরি হচ্ছে তেল। প্রসঙ্গত, বিশ্বনাথবাবুর তেলের ঘানি থেকে উৎপাদিত তেল বিক্রি করা হচ্ছে হলদিয়া রিফাইনারি এবং বন্দর-সহ বিভিন্ন শিল্প সংস্থার কো-অপারেটিভে। বিশ্বনাথবাবুর কথায়, ‘‘আমাদের তেলের ঘানি থেকে মাসে ৩০০ লিটার তেল তৈরি হয়। হলদিয়া এলাকায় বিক্রির সঙ্গে সঙ্গে কলকাতা থেকেও অনেকে এই তেল নিয়ে যান।’’ হলদিয়ার একটি শিল্প সংস্থার আধিকারিক বলছিলেন, ‘‘আমদের ক্যান্টিনেও ওই তেল ব্যবহার করা হয়। শুধু তাই নয়, নিজেরাও বাড়ির জন্য নিয়ে যাই।’’
বিশ্বনাথবাবু জানাচ্ছেন— কীভাবে ঘানিতে তেল তৈরি করা হয়, অনেকে সেটাও দেখতে আসেন। ‘ভারত সেবা মিশন’ থেকে পড়াশোনা শেষ করে দৃষ্টিহীন নিরঞ্জন মণ্ডল। সেই এই মুহূর্তে যাদবপুর থেকে বাংলায় পিএইচডি করেছে। প্রসঙ্গত, সে সুন্দরবনের ওপর একটি বইও লিখেছে। আবার এই আশ্রমে তৈরি মাশরুমের বাজারে ভাল চাহিদা রয়েছে। মহকুমা জিমন্যাস্টিক্সে প্রথম অগ্নিচাঁদ সোরেন আগে গরু চরাতেন। আবার বিধু বোদরার বাবা-মা পাথর খাদানে কাজ করতেন। তাঁরা সিলিকোসিসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। বিধু বোদরা এখন প্রাথমিক স্কুলের ছাত্র। প্রসঙ্গত, তার হাতের লেখা হলদিয়া মহকুমার মধ্যে প্রথমও হয়েছে। আবাসিক ছাত্রদের গান শেখান মেখলা রায়। তিনি বলেন, ‘‘আদিবাসী ছেলেদের মনোসংযোগ দেখে মুগ্ধ। ওরা খুব দ্রুত শিখছে।’’ আবাসিক ছাত্র গোপীর কথায়, ‘‘আমার বাড়ি ঝাড়খণ্ডের একটি পাহাড়ের ওপর। স্কুলে যাওয়ার জন্য পাহাড় থেকে দুই ঘণ্টা নামতে হত। আবার বাড়ি ফিরতে লাগত তিন ঘণ্টা। পেটে দানা-পানি না থাকায় পড়াশোনার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। এখানে এসে স্কুলে যাচ্ছি।’’