শরণ্যা মুখোপাধ্যায়
রাজ্য সরকার ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ বলে বিরোধীরা যখন সরব, সেই সময়েই অভিযোগের দিকে না-গিয়ে ব্যক্তিগত শোককে মানবকল্যাণে নিবেদনের পথ দেখালেন এক মা। ডেঙ্গিতে মৃত মেয়ের দেহ দান করে দিলেন তিনি।
ডেঙ্গিতে আক্রান্ত স্কুলশিক্ষিকা শরণ্যা মুখোপাধ্যায় (২৫) শনিবার ঢাকুরিয়ার এক বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান। তাঁর মা, চন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায় সোমবার বলেন, ‘‘আমার ওইটুকু মেয়ের দেহ বিদ্যুৎ-চুল্লিতে পোড়ানো হবে, মা হয়ে সেটা দেখতে পারব না। মেয়ের দেহ দান করেছি আরজি কর হাসপাতালে। যদি চিকিৎসাবিদ্যার কাজে লাগে লাগুক।’’
মাত্র পাঁচ দিনের জ্বরে রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ের বাসিন্দা ও এন্টালির মহাবীর ইনস্টিটিউট অব এডুকেশন রিসার্চের শিক্ষিকা শরণ্যার মৃত্যু হয়েছে। ‘‘ভিতরটা আমার খানখান হয়ে গিয়েছে,’’ বলছেন বাবা শৈবাল মুখোপাধ্যায়। বুধবার সকালে তাঁর প্রচণ্ড পেটব্যথার পাশাপাশি বমি হয়। বৃহস্পতিবার রক্তপরীক্ষায় ডেঙ্গি ধরা পড়ে। পরের দিন তাঁকে লেক টেম্পল রোডের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। মায়ের কথায়, ‘‘বিকেলে ঠিক ছিল। বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলবে বলে মোবাইল দিয়ে এলাম।’’ রাতে ভাই শরণের মোবাইলে ফোন করে তড়িঘড়ি পরিবারের সদস্যদের ডেকে আনেন নার্সিংহোম-কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন: ‘কৃতজ্ঞতা’ জানাতে তিন কেন্দ্রেই মমতা
বাবা জানান, ভুল বকছিলেন শরণ্যা। মাড়ি দিয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। বড় হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন নার্সিংহোম-কর্তৃপক্ষ। শৈবালবাবু বলেন, ‘‘ঢাকুরিয়ার হাসপাতালে পৌঁছনোর পথেই মেয়ের শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হতে থাকে।’’ শুক্রবার রাতে শরণ্যাকে ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়। ঢাকুরিয়ার ওই হাসপাতালে এখন ডেঙ্গিরোগীর সংখ্যা সাত। একই রোগে আক্রান্ত হয়ে তাদের মুকুন্দপুর শাখায় দু’টি শিশু, সল্টলেক শাখায় ছ’জন ভর্তি আছেন।
শরণ্যার মৃত্যু-শংসাপত্রে ডেঙ্গি লেখা হলেও নীলরতন সরকার মেডিক্যাল হাসপাতালে জ্বরে আক্রান্ত এক মহিলার মৃত্যুর কারণ ডেঙ্গি কি না, তা নিয়ে চাপান-উতোর চলছে। জাহানারা বিবি (৪৪) নামে ওই মহিলার পরিবারের দাবি, ডেঙ্গিতেই মারা গিয়েছেন তিনি। কিন্তু মৃত্যু-শংসাপত্রে ডেঙ্গির কোনও উল্লেখ নেই। তাতে মৃত্যুর কারণ হিসেবে ‘অজানা জ্বরের’ কথা লেখা হয়েছে।
মুর্শিদাবাদের জলঙ্গির পোল্লাডাঙা গ্রামের বাসিন্দা জাহানারা ২৫ নভেম্বর থেকে জ্বরে ভুগছিলেন। মৃতার ছেলে এজারুল ইসলাম সোমবার জানান, গত বুধবার তাঁর মাকে ডোমকল মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখান থেকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালে পাঠানো হয়। পরের দিন সেখান থেকে জাহানারাকে পাঠানো হয় নীলরতনে। সোমবার সকালে তাঁর মৃত্যু হয়।
এজারুল জানান, জ্বরের সঙ্গে মায়ের সারা শরীরে কালো দাগ ছিল। দাগ দেখে ডোমকল হাসপাতালের চিকিৎসকেরা মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালে পাঠিয়ে দেন। সেখানে মাকে প্লেটলেট দেওয়া হয়েছিল। রাতে জ্বর না-কমায় জাহানারাকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। ‘‘মায়ের কী হয়েছে, জানতে চাইলে বলা হয়, ডেঙ্গি হয়েছে। রেফারের কাগজেও ডেঙ্গি লিখেছিল। শনিবার সন্ধ্যায় চিকিৎসক মুখে বলেন, মায়ের ডেঙ্গি পজিটিভ। কিন্তু ডেথ সার্টিফিকেটে ওঁরা ডেঙ্গি লিখতে চাননি।’’ এনআরএসের এক কর্তা জানান, আইজিএম পদ্ধতিতে রিপোর্ট না-আসায় ডেথ সার্টিফিকেটে ডেঙ্গির উল্লেখ নেই। ডেঙ্গিরোগীকে এত দূরে ‘রেফার’ করা হল কেন? স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘কোন পরিস্থিতিতে রোগীকে রেফার করা হয়েছে, তা বিস্তারিত ভাবে জানতে হবে। সে-সব না-জেনে কিছু বলা সম্ভব নয়।’’