কলকাতার এক বাজারে সব্জি সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতা। ছবি: রয়টার্স
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পর কলকাতা-সহ বেশ কিছু জেলার বাজারে অভিযান চালাচ্ছে টাস্ক ফোর্স। অভিযোগ, কোনও কোনও জেলায় নির্দেশের পরেও সক্রিয় হয়নি প্রশাসন। ক্রেতাদের একটা বড় অংশের দাবি, অভিযানই সার! কাঁচা আনাজের দাম কমেনি। কিছু জেলায় স্বস্তি দিয়ে টম্যাটোর দাম দু’দিন কমলেও আবার ঊর্ধ্বমুখী। কোথাও আবার অভিযানের সময় দাম কমলেও তার পর আবার বৃদ্ধি পাচ্ছে। দু’-একটি জেলায় স্থানীয় প্রশাসন সুলভ মূল্যে সব্জি বিক্রির ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু সকলে সেই সুবিধা পাচ্ছেন না। বিক্রি শুরু হতেই শেষ সব্জি।
শনিবার লেক মার্কেট এবং গড়িয়াহাটে হানা দেয় টাস্ক ফোর্স। সদস্যদের দাবি, উত্তর কলকাতার তুলনায় দক্ষিণ কলকাতার বাজারে খুচরো আনাজের দাম বেশি। আগামী দিনেও চলবে অভিযান।
হুগলিতে ক্রেতাদের বড় অংশের অভিযোগ, টম্যাটোর দাম আবার বৃদ্ধি পেয়েছে। উচ্ছে, বেগুন, পটল, মুলোর দাম যা ছিল, তাই রয়েছে। জেলা প্রশাসনের তরফে বাজারদরের থেকে কম দামে যে সব্জি বিক্রি করা হচ্ছে, তা নিমেষে শেষ হয়ে যাচ্ছে। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, যত দিন বাজারে দাম বেশি থাকবে, তত দিন এই পরিষেবা চালু থাকবে। কৃষকদের থেকে সরাসরি সব্জি কিনে এনে চুঁচুড়ায় জেলাশাসকের দফতরের সামনে, বিভিন্ন ব্লক অফিসের সামনে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে শনিবার নতুন করে কোনও বাজার বা হাটে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান করা হয়নি।
সাধারণ মানুষের স্বার্থে ভ্রাম্যমাণ বাজার খুলেছে হুগলির বলাগড়ের সিজা কামালপুর পঞ্চায়েত এবং সমবায়ও। আলু, পেঁয়াজ, আদা, রসুন বাজারের থেকে পাঁচ টাকা কমে বিক্রি করা হচ্ছে। সিজা কামালপুরের উপপ্রধান অরিজিৎ দাস বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষের যাতে কিছুটা সুরাহা হয়, তাই এই ভ্রাম্যমাণ বাজার করা হয়েছে। কৃষকদের থেকে সরাসরি সব্জি নিয়ে এসে বিক্রি করা হবে। মাঝে ফড়ে না থাকায় কম দামেই মিলবে সেই সব্জি। আলু পেঁয়াজ, আদা, রসুনের দাম এখন অনেকটাই বেশি। তাই প্রথম দিন আলু, পেঁয়াজ, আদা, রসুন বিক্রি করা হল। কাল থেকে সব্জি বিক্রি হবে দরজায় দরজায় ঘুরে।’’
হাওড়ায় ক্রেতাদের একাংশের দাবি, বাজারদর কিছুটা কমেছে। তবে বাজারে নজরদারি চোখে পড়ছে না।
পশ্চিম বর্ধমানে বাজারদরের হেরফের হয়নি বলেই দাবি করেছেন ক্রেতাদের একাংশ। অভিযোগ, জেলা প্রশাসনের কোনও আধিকারিককে কোনও বাজারে দেখা যায়নি।
মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশের পর শনিবার পূর্ব বর্ধমানের পলেমপুর সবজি বাজারে অভিযান করেছে টাস্ক ফোর্স । সদস্যেরা জানিয়েছেন, শনিবার সব্জি থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় সমস্ত সামগ্রির বাজার দর আগের তুলনায় কিছুটা হলেও কম রয়েছে। সেই দাম আরও কী ভাবে কমানো যায়, সেদিকেই লক্ষ্য রাখছেন তাঁরা।
বাঁকুড়ায় সব্জির দাম নিয়ন্ত্রণে ময়দানে নেমেছে কৃষি বিপণন দফতর এবং এনফোর্সমেন্ট বিভাগ। ক্রেতাদের দাবি, দুই দফতরের যৌথ অভিযানে ধীরে ধীরে বাঁকুড়ার বাজারগুলিতে নামতে শুরু করেছে আনাজের দাম। শুক্রবার বাঁকুড়া পুরসভা বাজারে প্রতি কেজি করলার দাম ছিল ৮০ টাকা। সেখানে শনিবার সকালে দাম কমে হয় ৬০ টাকা। এক কেজি কুমড়োর দাম ৩০ টাকা থেকে নেমে হয়েছে ২২ টাকা। প্রতি কিলো পেঁপে এবং পটলের দাম ৪০ টাকা থেকে নেমে হয়েছে ৩৫ টাকা। কাঁচালঙ্কার দাম উল্লেখযোগ্য ভাবে কমেছে। শুক্রবার যেখানে এক কেজি কাঁচালঙ্কা বিক্রি হয়েছে ১০০ থেকে ১২০ টাকায়, সেখানে শনিবার দাম কমে দাঁড়িয়েছে ৮০ টাকা। তবে আলু, পেঁয়াজ, বরবটি, টম্যাটো, শসা, লাউ, বেগুন-সহ বেশ কিছু সব্জির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটে গত ১১ জুলাই থেকে অধিকাংশ বাজারেই নজরদারি চালিয়েছেন টাস্ক ফোর্সের আধিকারিকেরা। ক্রেতাদের একাংশের দাবি, তার পরেই অধিকাংশ সব্জির কিছুটা হলেও দাম কমেছে। আলু এবং পেঁয়াজের দাম ৩ থেকে ৫ টাকা কমেছে। এক কেজি আদা, রসুনের দাম প্রায় ২০ টাকা করে কমেছে। এক কেজি কাঁচালঙ্কার দাম ১৫০ টাকা থেকে কমে ১২০ টাকা হয়েছে। ভেন্ডি, পেঁপে, গাজরের দামও ৫ থেকে ১০ টাকা কমেছে। এক কেজি টম্যাটোর দাম ৮০ টাকা থেকে কমে ৭০ টাকা হয়েছে।
কোচবিহারে ক্রেতাদের বড় অংশের অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, জেলা প্রশাসনের তৎপরতা এবং প্রতিনিয়ত টাস্ক ফোর্সের অভিযানের পরেও দাম কমেনি সব্জির। আলু ৩০ টাকাতেই বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজ ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রায় কোনও সব্জির দাম ৫০ টাকার কম নয়। লঙ্কার দামও একই রয়ে গিয়েছে। শনিবার সকালে কোচবিহারের ডোডেয়ার হাটে পৌঁছে যান টাস্ক ফোর্সের সদস্যেরা। টাস্ক ফোর্সের সদস্য কোচবিহার জেলা পরিষদের অতিরিক্ত জেলাশাসক সৌমেন দত্ত বলেন, ‘‘হিমঘরের মালিক এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলার পর পাইকারি বাজারে শাকসব্জির দাম কিছুটা কমেছে। এর প্রভাব যাতে খুচরো বাজারে পরে, তা নিশ্চিত করতেই আমরা এসেছি। আমাদের অভিযান লাগাতার চলবে।’’