মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই।
বিশ্ববঙ্গ শিল্প সম্মেলনের (বিজিবিএস) মঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তাজপুর-মন্তব্য বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, রাজ্যে ওই গভীর সমুদ্র বন্দর গড়তে আদানি গোষ্ঠীকে আদৌ আর দেখা যাবে কি না। বুধবার সেই বিষয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক আরও উস্কে দিয়েছে বিজেপি। এই পরিস্থিতিতে শিল্প সম্মেলনের প্রাপ্তি এবং তার বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নিয়ে বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্ট সমস্ত দফতরের সচিবদের নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকেও ফের সেই তাজপুর-প্রসঙ্গ উঠেছে বলেই সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর।
প্রশাসনের শীর্ষমহলের সূত্রে দাবি, রাজ্য সরকার আগেই ওই প্রকল্পের জন্য আদানি গোষ্ঠীকে লেটার অব ইনটেন্ট বা আগ্রহপত্র দিয়েছিল। বাকি ছিল চূড়ান্ত চুক্তি। কিন্তু তার জন্য কেন্দ্রের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র আদায় করে আনার দায়িত্ব নাকি ছিল আদানিদেরই। একটি সময়ের মধ্যে সেই কাজ সেরে ফেলা হবে মনে করেছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু তা না হওয়ায় তাজপুর বন্দর নিয়ে আদানি গোষ্ঠীর আগ্রহ আদৌ কতটা রয়েছে, সে বিষয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে সংশ্লিষ্ট মহলে।
সূত্রের দাবি, এ দিনের বৈঠকে এই সমস্ত প্রসঙ্গই উঠেছিল। এমনকি আলোচনা হয়েছে আদানিদের বিরুদ্ধে চলা তদন্তের বিষয়েও। প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, সময়ের মধ্যে কাজ করতে না-পারলে, বাতিল হতে পারে ওই আগ্রহপত্র। শিল্প সম্মেলনে তারই ইঙ্গিত মিলেছে বলেও মনে করছেন এই বিষয়ে ওয়াকিবহাল অনেকে।
প্রসঙ্গত, মমতা তাজপুরে ‘দরপত্রে যোগদানের’ কথা বলার পরে বুধবার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর দাবি ছিল, তাজপুরের জন্য আদানিদের কোনও আগ্রহ ছিল না। ভিন্ন কারণে রাজ্য ও আদানিদের মধ্যে সমঝোতা হয়েছিল। বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়ও দাবি করেন, তাজপুরের বদলে আদানি গোষ্ঠী মন্দারমণিতে স্থলবন্দর তৈরিতে আগ্রহী। সেই কাজ এগিয়েছে। সেখানে আদানিদের চিহ্নিত করা জমি রাজ্যকেই অধিগ্রহণ করতে হবে বলে তাঁর দাবি।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, এ দিন কয়েকটি দফতরের কাজ নিয়ে অসন্তোষও প্রকাশ করেছেন মমতা। তার আওতায় রয়েছে পরিবহণ, কারিগরি শিক্ষা ইত্যাদি। পরিবহণমন্ত্রীকে আরও সক্রিয় হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন মমতা। সূত্রের দাবি, জেলাশাসক-পুলিশ সুপারদের কাজের উপরেও যে তাঁর কড়া নজর রয়েছে, তা বুঝিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানাচ্ছে, যাঁরা ভাল কাজ করবেন, তাঁদের একাধিক জেলায় দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেওয়া হবে। যাঁরা করবেন না, সরতে হবে তাঁদের। বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি কিছু টেন্ডার-পদ্ধতি নিয়েও মুখ্যমন্ত্রী উষ্মা প্রকাশ করেছেন বলে সূত্রের খবর।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, এ দিনের বৈঠকে শিল্পে বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশের উপর জোর দিয়েছেন মমতা। এত দিন সমস্ত বিজিবিএস থেকে এবং তার বাইরেও কী ধরনের ও কত বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে, তার কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে, সেই সমস্ত তথ্য থাকার কথা শ্বেতপত্রে। যদিও বিরোধীদের বক্তব্য, এই শ্বেতপত্রের কথা বার বার শোনা গেলেও, এখনও পর্যন্ত তা দিনের আলো দেখেনি। যদিও এ দিন নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে দলীয় সভায় মমতা বলেছেন, ‘‘ছ’টি বিজিবিএসে ১৫ লক্ষ কোটির প্রকল্প পেয়েছি। ১০ লক্ষ কোটি টাকা খরচও হয়ে গিয়েছে। অভাবনীয় সাফল্য।... মুখ্যসচিবকে বলেছি একটা শ্বেতপত্র দিয়ে দিতে।’’
এ ছাড়া, সূত্রের দাবি, রাজ্যের নতুন বিপণন দূত সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে দিয়ে সরকারি সাফল্যের প্রচার-ভিডিয়ো তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে রাজ্যের। বিভিন্ন সরকারি তথ্য দফতরের বাইরে কী ভাবে বেরিয়ে যাচ্ছে, তা নিয়েও মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকে প্রশ্ন উঠেছে বলে ওই সূত্রে দাবি।