নির্দিষ্ট প্যাকেজের আওতায় না-থাকা ওষুধপত্র ও ডায়াগনস্টিক পরীক্ষার জন্য মাত্র পাঁচ হাজার টাকা বরাদ্দ ছিল। প্রতীকী ছবি।
সরকারের ঘর থেকে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে চিকিৎসা বাবদ পাওয়া টাকা ‘যথেষ্ট’ নয় বলে অনেক বেসরকারি হাসপাতাল-নার্সিংহোমের অনুযোগ। সেই কারণে স্বাস্থ্যসাথীর রোগী প্রত্যাখ্যানের অভিযোগ উঠছিল এই ধরনের বহু আরোগ্য নিকেতনের বিরুদ্ধে। নির্দিষ্ট প্যাকেজের আওতায় না-থাকা ওষুধপত্র ও ডায়াগনস্টিক পরীক্ষার জন্য মাত্র পাঁচ হাজার টাকা বরাদ্দ ছিল। তাতে স্বাস্থ্যসাথীর অধীনে থাকা বড় বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে রোগীদের। এ বার সেই খরচ একেবারে পাঁচ গুণ বৃদ্ধির প্রস্তাবে ছাড়পত্র দিল রাজ্য সরকার। একই সঙ্গে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে ভুয়ো বিল করে কোনও বেসরকারি হাসপাতাল টাকা পেয়েছে কি না, সে-দিকে অতন্দ্র নজরদারি চালাতে কড়া পদক্ষেপ করছে স্বাস্থ্য দফতর। স্বাস্থ্য শিবিরের পর্যবেক্ষণ, রোগী পরিষেবা প্রশ্নাতীত ভাবে নিশ্চিত করতে এটা একেবারে নরম-গরম দাওয়াই।
নতুন নির্দেশিকায় ওষুধপত্র ও ডায়াগনস্টিক পরীক্ষার জন্য বরাদ্দ বাড়িয়ে এ বার ২৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। সেটি শুধু রাজ্যের সেই ৩০টি হাসপাতালের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, যাদের ‘এনএবিএইচ’ (ন্যাশনাল অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ড ফর হসপিটালস অ্যান্ড হেল্থ কেয়ার প্রোভাইডার) স্বীকৃতি রয়েছে। কলকাতার বড় বড় হাসপাতালের পাশাপাশি শহরতলির মাঝারি মাপের কয়েকটি নার্সিংহোমও আছে সেই তালিকায়।
বেসরকারি হাসপাতাল সংগঠনের পূর্বাঞ্চলীয় সভাপতি রূপক বড়ুয়া বলেন, “পাঁচ হাজার টাকা অত্যন্ত কম ও অবৈজ্ঞানিক ছিল। আশা করি, সেই হার বৃদ্ধির বিষয়টি শীঘ্রই কার্যকর হবে এবং প্যাকেজের অন্যান্য দরের বিষয়টিও বিবেচনা করা হবে।”
এক স্বাস্থ্যকর্তা বলেন, “সময়মতো টাকা দেওয়া হচ্ছে। দাবি অনুযায়ী টাকাও বাড়ানো হল। আশা করি, এ বার রোগী প্রত্যাখ্যানও বন্ধ হবে।” ওই কর্তার ব্যাখ্যা, যে-সব হাসপাতাল বা নার্সিংহোম ‘এনএবিএইচ’ মান্যতা পাবে, এই সুবিধা দেওয়া হবে তাদেরই। প্রশ্ন উঠছে, সরকারের তরফে টাকা বাড়ানো হলেও প্রকৃত পরিষেবা মিলবে তো? কারণে-অকারণে রোগী বা তাঁদের স্বজনদের হয়রান করা, ছলছুতোয় বাড়তি টাকার বিল ধরিয়ে দেওয়া বন্ধ হবে কি?
বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল বা নার্সিংহোম মাঝেমধ্যেই বিলে কারচুপি বা ভুয়ো বিল পেশ করে টাকা নিচ্ছে বলে স্বাস্থ্যকর্তাদের পর্যবেক্ষণ। সেই বিষয়ে রাশ টানতে জেলা ও রাজ্যের নজরদার দলকে কড়া পদক্ষেপের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, প্রতিটি বেসরকারি হাসপাতালের পেয়ে যাওয়া বিলের ৩০ শতাংশের ‘র্যান্ডম অডিট’ হবে। এর জন্য ২০০ জন চিকিৎসককে নিয়ে দল গড়া হয়েছে। সাধারণত বিলগুলি প্রথমে পরীক্ষা করে ‘টিপিএ’ (থার্ড পার্টি অ্যাডমিনিস্ট্রেটর) বা তৃতীয় পক্ষ। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, দফতরের পর্যবেক্ষকেরা বিল পরীক্ষার সময় যদি কোনও গরমিল ধরতে পারেন, সেই সব ক্ষেত্রে যে-টাকা দেওয়া হয়েছিল, সংশ্লিষ্ট হাসপাতালকে তা ফেরত দিতে হবে। যে-টিপিএ সংস্থা গরমিলযুক্ত বিলে ছাড়পত্র দেবে, সমান অঙ্কের জরিমানা করা হবে তাদেরও।
সরকারি হাসপাতালে অনেক সময়েই পেসমেকার বা স্টেন্ট এবং হাড়ের অস্ত্রোপচারের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী ও সরঞ্জামের ঠিকমতো সরবরাহ না-থাকায় রোগীদের ভোগান্তির অভিযোগ ওঠে। এ দিন আলাদা এক নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, কার্ডিয়োলজি ও অর্থোপেডিকের ক্ষেত্রে এ বার থেকে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পেই প্রয়োজনীয় ‘ইমপ্ল্যান্ট’ সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল নিজেরাই কিনে নিতে পারবে। তাতে রোগী পরিষেবা বিঘ্নিত হওয়ার ব্যাপারটা বন্ধ হবে।
একই সঙ্গে জানানো হয়েছে, বহরমপুর ও মালদহ সদরের কোনও বেসরকারি হাসপাতাল অর্থোপেডিকের কোনও পরিকল্পিত অস্ত্রোপচার করতে পারবে না। যদি ওই অস্ত্রোপচার জরুরি হয় বা জেলা বা মহকুমা মেডিক্যাল কলেজ থেকে পরিকাঠামো নেই বলে লিখে দেওয়া হয়, তবেই তা করা যাবে।