অসুস্থ বৃদ্ধা মাকে দেখার জন্য প্যারোলে ছাড়া পেয়ে রাজ্যে ফিরেছেন মালেগাঁও, অজমের শরিফ ও সমঝোতা এক্সপ্রেস বিস্ফোরণের মাথা হিসেবে ধৃত স্বামী অসীমানন্দ। জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার (এনআইএ) কড়া পাহারায় বুধবার থেকে তাঁকে রাখা হয়েছে বাঁকুড়ার জয়রামবাটির একটি বিলাসবহুল তিনতলা লজে। তাঁর মা এবং পরিবারের লোকেদেরও সেখানে রাখা হয়েছে। এনআইএ ছাড়া বাঁকুড়ার কোতুলপুর এবং লাগোয়া হুগলির গোঘাট থানার পুলিশও ওই লজ পাহারার দায়িত্বে রয়েছে।
২০০৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি হরিয়ানার পানিপথে দিল্লি-লাহোর সমঝোতা এক্সপ্রেসে বিস্ফোরণ হয়। সেই বিস্ফোরণের প্রধান পরিকল্পনাকারী তিনি, এই অভিযোগেই ধরা হয় গোঘাটের কামারপুকুর রামকৃষ্ণ মঠ সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা স্বামী অসীমানন্দ ওরফে নবকুমার সরকারকে। অন্য রাজ্যে যতীন চট্টোপাধ্যায়
নামেও তিনি পরিচিত ছিলেন। দীর্ঘদিন গা ঢাকা দিয়ে থাকার পর হরিদ্বারের একটি আশ্রম থেকে পুলিশ গ্রেফতার করে তাঁকে। এত দিন অসীমানন্দকে রাখা হয়েছিল হরিয়ানার অম্বালা জেলে। সমঝোতা এক্সপ্রেস বিস্ফোরণের মামলায় জামিন পেলেও অসীমানন্দ মহারাষ্টের মালেগাঁও, অজমেরের দরগা এবং হায়দরাবাদের মক্কা মসজিদ বিস্ফোরণের প্রধান চক্রান্তকারী হিসেবে অভিযুক্ত। সেই সব মামলায় হাজতবাস করছেন তিনি।
মা প্রমীলাদেবী বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছেন, এ খবর পেয়ে আদালতের কাছে তাঁকে দেখার আর্জি জানান অসীমানন্দ। আদালত তাঁকে ১০ দিনের প্যারোলে মুক্তি দেয়।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, স্বাধীনতা সংগ্রামী বিভূতিভূষণ সরকারের সাত ছেলের দ্বিতীয় নবকুমার বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যায় এমএসসি করার সময়েই রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের (আরএসএস) সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৮৮ সাল থেকে সক্রিয় ভাবে বিভিন্ন আদিবাসী এলাকায় সঙ্ঘের প্রচারের কাজ শুরু করেন। পরে অবশ্য আরএসএসের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব তৈরি হয়। ‘অভিনব ভারত’ নামে অন্য একটি উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনে তিনি যুক্ত হন। বাড়ির লোক জনের সঙ্গে ২৮ বছর আগে শেষ দেখা হয়েছিল অসীমানন্দের।
ধৃতের মা প্রমীলাদেবী ছোট ছেলে সুশান্তের সঙ্গে কামারপুকুরে থাকেন। তাঁর এক ছেলে প্রশান্ত থাকেন জয়রামবাটিতে। বাকিরা কেউ বর্ধমানে, কেউ কলকাতায়। জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘হাই প্রোফাইল’ অপরাধীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই এনআইএ বাঁকুড়ার ওই লজটিতে তাকে রাখা এবং পরিবারের লোকজনকে সেখানে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। লজে এনআইএ-র অফিসার এবং নিরাপত্তা রক্ষী-সহ মোট ২৬ জন রয়েছেন। লজকে কেন্দ্র করে রীতিমতো নিরাপত্তা বলয় গড়া হয়েছে। সমস্ত বোর্ডারকে অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। অসীমানন্দের পরিবারের লোক ছাড়া অন্য কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। সংবাদমাধ্যম বা বাইরের কাউকেও লজের আশপাশে ঘেঁষতে দেওয়া হচ্ছে না।
অসীমানন্দের ভাই সুশান্তবাবু বলেন, ‘‘এই ক’দিন আমরা সবাই লজে আছি। দাদা এমনিতেই কম কথা বলেন। এখন বাইরের কারও সঙ্গেই কথা বলতে চাইছেন না। দাদাকে দেখার পরে মা এখন আগের চেয়ে অনেকটা সুস্থ রয়েছেন।’’ অসীমানন্দ কত দিন জয়রামবাটিতে থাকবেন? সুশান্তবাবু বলেন,‘‘বিষয়টি আমাদের কারও ঠিক জানা নেই। তবে, দাদার মুখে শুনেছিলাম, আগামী মঙ্গলবার চলে যাবেন।’’
তবে অজস্র মানুষকে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত এমন এক জন মানুষকে সপরিবার বিলাসবহুল হোটেলে রাখা এবং কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা রক্ষীদের খিদমত খাটা দেখে অবাক হচ্ছেন জেলার পুলিশ।