ক্যাপশন: রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতাদের পারস্পরিক সম্পর্কের সমীকরণ কি প্রকাশ্যে? —ফাইল ছবি।
আড়াই মাসেরও বেশি সময় ধরে চলছে রাজ্য বিজেপির সংগঠন ঢেলে সাজার কাজ। কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকেরা দফায় দফায় কলকাতায় আসছেন। ‘সদস্যতা’ থেকে সাংগঠনিক নির্বাচন, কোন কাজ কত দূর এগোল, তার বিশদ হিসেব বুঝে নিচ্ছেন মাসে প্রায় দু’বার করে এসে। কিন্তু বঙ্গ বিজেপির সেই একের পর এক সাংগঠনিক কর্মশালায় গরহাজির থাকছেন শুভেন্দু অধিকারী। যেমন ছিলেন মঙ্গলবারেও। কেন গরহাজিরা, সেই প্রশ্ন নিয়ে দলের ভিতরে-বাইরে গুঞ্জন চলছিল অনেক দিন ধরেই। মঙ্গলবার সেই প্রশ্ন সরাসরি উঠে গেল রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজমুদারের সামনে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত যে জবাব দিয়েছেন, তা ‘ইঙ্গিতপূর্ণ’। সেই জবাবে শুভেন্দুর গরহাজিরার ‘প্রকৃত’ কারণ স্পষ্ট হোক বা না হোক, দলের অন্দরে শুভেন্দুর ‘কমফর্ট’ বা ‘স্বাচ্ছন্দ্য’ নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ তৈরি হয়ে গেল।
মঙ্গলবার সল্টলেক স্টেডিয়াম চত্বরের এক প্রেক্ষাগৃহে বিজেপির বিশেষ সাংগঠনিক কর্মশালা ছিল। সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত বৈঠক চলে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে সুনীল বনসল, মঙ্গল পাণ্ডে, অমিত মালব্য ছিলেন বৈঠকে। রাজ্য নেতৃত্বের তরফে ছিলেন সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, সংগঠন সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তী। ছিলেন পাঁচ সাধারণ সম্পাদকও। প্রথম সারির নেতাদের মধ্যে একমাত্র অনুপস্থিত ছিলেন রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে যে সাংগঠনিক বৈঠক বনসল করেছিলেন, সেখানেও শুভেন্দু অনুপস্থিত ছিলেন। স্বভাবতই মঙ্গলবারের বৈঠক শেষে সুকান্তে সাংবাদিক বৈঠকে শুভেন্দুর গরহাজিরার কারণ জানতে চেয়ে প্রশ্ন ওঠে। সুকান্ত প্রথমে উত্তর এড়িয়ে যেতে চেয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘‘এর পরে আমরা শুভেন্দুদার সঙ্গে আলাদা করে আলোচনা করে নেব।’’ কিন্তু আলাদা আলোচনা কেন হবে, বিরোধী দলনেতা নিজে কেন বৈঠকে থাকবেন না, সে সব প্রশ্ন আবার ওঠে। তখনই সুকান্তের মুখে শোনা যায় শুভেন্দুর স্বাচ্ছন্দ্যের প্রসঙ্গ।
সুকান্ত বলেন, ‘‘শুভেন্দুদা তো সাংগঠনিক বৈঠকে থাকেন না । উনি কমফর্ট ফিল করেন না। আমাদের যে সাংগঠনিক প্রক্রিয়া রয়েছে, সেগুলো অনেক লম্বা সময় ধরে চলে তো! উনি অত ক্ষণ সময় দিতে পারেন না।’’ তবে তার অব্যবহিত পরের বক্তব্যেই শুভেন্দুর প্রশস্তি শোনা যায় সুকান্তের মুখে। তিনি বলেন, ‘‘শুভেন্দু অধিকারী এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের ব্যস্ততম নেতা। তাঁর অনেক কর্মসূচি থাকে। এত সময় পাবেন কী করে?’’ তার পরে শুভেন্দুর প্রসঙ্গে আর কোনও প্রশ্ন শুনতে হয়নি সুকান্তকে। কিন্তু বিজেপির সাংগঠনিক গতিবিধিতে শুভেন্দুর স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে যায় রাজ্য বিজেপির অন্দরে। রাজ্য বিজেপির এক প্রাক্তন সহ-সভাপতির কথায়, ‘‘অস্বস্তির আবহ তো প্রকাশ পেয়েই গেল। রাজ্য সভাপতি বললেন, আমাদের সাংগঠনিক প্রক্রিয়া লম্বা সময় ধরে চলে। আর সে প্রক্রিয়ায় শুভেন্দুবাবু এখনও কমফর্ট পাচ্ছেন না। তার অর্থ তো এই দাঁড়ায় যে, বিজেপির কার্যপদ্ধতিতে শুভেন্দুবাবু এখনও মানিয়ে নিতে পারেননি।’’ কিন্তু রাজ্য সভাপতি তো শুভেন্দুর ‘ব্যস্ততা’র কথাও বলেছেন। প্রাক্তন সহ-সভাপতির ব্যাখ্যা, ‘‘ওটা ভারসাম্য রাখার চেষ্টা।’’